Editorial

ভোটের ‍‌শিক্ষা

সম্পাদকীয় বিভাগ

গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি’র শক্তি অনেকটাই খর্ব হয়ে গেলেও প্রথমে হ‍‌রিয়ানা এবং পরে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাওয়া জয় নতুন করে তাদের অনেকটাই চাঙ্গা করে দিয়েছে। এবার তাদের হিন্দুত্ববাদী মূল অ্যাজেন্ডা রূপায়ণে দ্বিধাদ্বন্দ্ব অনেকটাই কেটে যাবে। ‘এক দেশ এক ভোট’, ‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ ইত্যাদি কার্যকর করতে মোদী-শাহরা ঝাঁপিয়ে পড়বেন সন্দেহ নেই।  
অবশ্য গত লোকসভা নির্বাচনের যে চার রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে বিজেপি জয়ী হয়েছে অর্থাৎ ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিরোধীদের ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতায় আসেনি। এটা সেদিক থেকে বিরাট কোনও সাফল্যের পরিচয় নয়। এই দুই রাজ্যেই গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-কে অনেকটা পেছনে ফেলে বিরাট সাফল্য পেয়েছিল বিরোধীরা। তাই ধরে নেওয়া হয়েছিল ক্ষমতাসীন মোদীর দলকে হটিয়ে এই নির্বাচনে বিরোধীরা দুই রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে। বাস্তবে তা হয়নি। অন্যদিকে কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় শাসনের নামে ক্ষমতায় ছিল বিজেপি-ই। সেই কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা ব্যবহার করে নানা অপকৌশল বিজেপি চে‍‌য়েছিল ক্ষমতা দখল করতে। কিন্তু কাশ্মীরের মানুষ তেমনটা হতে দেননি। আর ঝাড়খণ্ডে বিরোধীদের ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখলের জন্য মোদী-শাহরা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন। মোদী-শাহ-রাজনাথের পাশাপাশি অন্য রাজ্য থেকে মুখ্যমন্ত্রীদের এনে প্রচারের ঝড় তোলা হয়েছিল। কিন্তু জয় তো দূর অস্ত আগের থেকেও ফল খারাপ হয়েছে। তবে মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে তাদের এই বিরাট জয় নিঃসন্দেহে তাদের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে।
একটি অতি দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী দল হিসাবে বিজেপি স্বাভাবিকভাবেই হিন্দুত্বের তাসকেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। ওরা জানে মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্কট, বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি, রুজি-রোজগার, শিক্ষা-স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয় সামনে এলে তাদের পক্ষে জয় সহজ হবে না। তাই মানুষের জীবন-জীবিকার মৌলিক ও জ্বলন্ত ইস্যুগুলিকে এড়িয়ে ধর্মীয় বিভাজনের সুরটাকেই চওড়া করার চেষ্টা করেছে। চেয়েছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের এককাট্টা করে ভোটে ফায়দা লুটতে। হিন্দু ঐক্যের নামে আর্থ-সামাজিকভাবে বঞ্চিত ও শোষিত দলিত, আদিবাসী এবং ওবিসি-দের হিন্দুত্বের ছাতার তলায় আনার চেষ্টা করেছে। পাশাপাশি মহিলা ভোট টার্গেট করে নগদ টাকার ‘কল্যাণ প্রকল্পের’ ঢালাও প্রতিশ্রুতি বিতরণ করেছে।
বিপরীতে বিরোধীরা, বিশেষ করে কংগ্রেস ছিল অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী। লোকসভার ফল থেকে তারা ধরেই নিয়েছিল অর্ধেক জয় তাদের হয়েই আছে। তাই শরিকরা কে কত বেশি আসনে লড়ে বেশি ক্ষমতাশালী হবে সেটা বিস্তর জল ঘোলা করেছে। তেমনি নিজ নিজ দলের অভ্যন্তরেও প্রার্থী হবার উচ্চাশা জটিলতা বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে বিরোধীরা কঠিন লড়াই দেবার অবস্থায় ছিল না। তার মূল্য তাদের দিতে হয়েছে দুই রাজ্যে গো-হারা হেরে। তাছাড়া আসন বণ্টন নিয়ে বড় দলগুলি ছোট দলগুলিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চায়নি। ফলে অনেক ছোট দল স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী দিয়েছে। তাতে বিরোধী ভোট অল্প হলেও ভাগ হয়েছে। তারচেয়েও বড় কথা বিরোধীরা যে একটা ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদ বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে এককাট্টা জনগণের কাছে সেই ছবি পুরোপুরি ধরা পড়েনি।
 

Comments :0

Login to leave a comment