প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে ঘরবাড়ি, চাষের জমি, রুজি-রোজগার ইত্যাদি সব হারানো অসহায় বিপন্ন মানুষের জন্য ত্রাণ, ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণ, রুজি রোজগারের বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের আশু ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা ঘোষণার বদলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি শিলিগুড়িতে সরকারি উদ্যোগে সরকারি অর্থে বৃহদাকারের মহাকাল মন্দির এবং সেখানে সবচেয়ে বড় শিবের মূর্তি প্রতিষ্ঠার কথা সগর্বে ঘোষণা করেছেন। গুজরাটে নরেন্দ্র মোদী বল্লভভাই প্যাটেলের বিশ্বের সর্বোচ্চ মূর্তি বানিয়েছেন। মুম্বাইয়ে সমুদ্রের জলে তার চেয়েও বড় শিবাজী মীর্তি বসানোর পরিকল্পনা হয়েছে। মমতা পিছিয়ে থাকেন কেন। তিনিও প্রতিযোগিতায় নেমে ঘোষণা করেছেন সবচেয়ে বড় শিবের মূর্তি বসাবেন। অযোধ্যায় রামমন্দির বানিয়ে সেখানে রামের মূর্তিতে যেমন নরেন্দ্র মোদী প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন এখানেও মমতা নিশ্চয়ই শিবের মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন।
ধর্মান্ধতা আর কুসংস্কারের অতলে তলিয়ে মমতা এই বার্তা দিতে চাইছেন মহাকালের মন্দির হলে মহাদেবের কৃপায় সব সমস্যা মিটে যাবে, সরকারকে আর কিছু করতে হবে না। মানুষের অভাব অনটন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা কোনও কিছুই থাকবে না। ধর্মান্ধ হিন্দুত্ববাদীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আরএসএস’র সাক্ষাৎ দুর্গাও মনে করছেন এবং রাজ্যবাসীকে মনে করাতে চাইছেন উত্তরবঙ্গে যে সাম্প্রতিক বিপর্যয় ঘটেছে তার পেছনে প্রকৃতির কোনও হাত নেই, ছিল মহাকালের অভিশাপ। তাই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে পুনর্নির্মাণ এবং নতুন করে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, বিদ্যুৎ সংযোগের পেছনে সরকারি অর্থ ব্যয় না করে মন্দির ও মূর্তি নির্মাণে ব্যয় করার মনস্থ করেছেন। মন্দির হলে মহাকালের রোষানল থেকে মুক্তি মিলবে।
মুখ্যমন্ত্রী বুঝে গেছেন খেলা, মেলা, উৎসব-সম্মান পুরস্কার, গন্ডা গন্ডা শ্রী, ক্লাবে ক্লাবে অনুদান, দুর্গা পূজায় অনুদান, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ইত্যাদির মাধ্যমে টাকা বিলিয়ে আর বোধ হয় ভোট কেনা সহজ হবে না। তাই আরএসএস’র ফরমুলা মেনে মোদীর দেখানো পথে ধর্মেই অবগাহন করতে হবে।
রাজনীতিতে ধর্মনিয়ে লুকোচুরি করা অবশ্য মমতার নতুন কিছু নয়। ধর্মের সুড়সুড়ি দিয়ে রাজনীতি করা তাঁর বরাবরের অভ্যেস তাই হিন্দুদের অনুষ্ঠানে গিয়ে হিন্দু সাজেন, মুসলিমদের অনুষ্ঠানে মুসলিম। হিন্দু পুরোহিতদের জন্য ভাতা, মুসলিম মোয়াজ্জেমদের জন্য ভাতা চালু করেন সরকারি অর্থে। বিভিন্ন জায়গায় নানা ধর্মস্থান সংস্কারে, মেরামতিতে আধুনিকীকরণে বা ধর্মানুষ্ঠানে বিপুল অর্থ খরচ করে সরকার। এই বেশিটা হয় পঞ্চায়েত ও পৌরসভার মাধ্যমে। গোটা রাজ্যে দুর্গাপূজাগুলি প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি সরকারি অনুদান ও ছাড় অন্য পূজাতেও মেলে। ধর্মাচরণের আর্থিক দায় কাঁধে নিয়েছে মমতার সরকার। ধর্মই হয়ে উঠেছে এই সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার।
এতদিন বড় আকারে মন্দির নির্মাণের ঝোঁক ছিল না। শুরু হয়েছে মোদী-শাহ-দের অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের পর থেকে। মোদী রাম মন্দির বানিয়েছে তিনি দীঘায় জগন্নাথ মন্দির বানিয়ে ফেলেছেন। মোদীকে টেক্কা দিতে আলিপুরে বানাচ্ছেন হনুমান মন্দির। নিউটাউনে দুর্গা মণ্ডপ। এবার উত্তরবঙ্গে মহাকাল মন্দির বানিয়ে বুঝিয়ে দিতে চাইছেন ধর্মছাড়া তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বিপন্ন।
Editorial
খড়কুটো এবার ধর্ম

×
Comments :0