এবারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারের তালিকায় বাংলা সাহিত্য বাদ কেন, সেই প্রশ্ন তুলে দিল্লিতে সাহিত্য আকাদেমির সচিবকে চিঠি পাঠিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের সভাপতি পবিত্র সরকার ও সাধারণ সম্পাদক রজত বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা বলেছেন, ২০২৪ সালের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারের তালিকায় বাংলা সাহিত্যের কোনও পুস্তক বা লেখকের অনুপস্থিতি সারা দেশেই আশাভঙ্গ, বিস্ময় ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। করদাতা জনসাধারণের টাকাতেই আকাদেমি পরিচালিত হয়ে থাকে। কাজেই আকাদেমির সিদ্ধান্তের কারণগুলি জনসাধারণকে জানানো উচিত।
সম্প্রতি দিল্লিতে সাহিত্য আকাদেমির অনুষ্ঠানে সাহিত্যক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পুরস্কারের ঘোষণা করা হয়েছে। সাহিত্য অকাদেমির তরফে যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ২০২৪ সালের জন্য মোট ২৩টি ভাষার সাহিত্যিকের নাম রয়েছে, কিন্তু বাংলার কোনও সাহিত্য ও সাহিত্যিকের নাম নেই। ১৯৭৩ সালের পর এই প্রথম সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারের তালিকা থেকে বাংলা সাহিত্য বাদ যাওয়ায় বিস্ময় ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সাহিত্য আকাদেমির পক্ষ থেকে এর কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা এখনও পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। কেবল বলা হয়েছে, টেকনিক্যাল বা পদ্ধতিগত কারণে এবার বাংলা সাহিত্যকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা যায়নি। বিস্মিত পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘ প্রশ্ন তুলেছে, যথার্থই এটা পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে ঘটেছে নাকি অন্য কোনও ‘নীতিগত’ কারণে বাংলা সাহিত্যে আকাদেমি পুরস্কার স্থগিত রাখা হয়েছে? যদি সত্যিই পদ্ধতিগত ত্রুটিই হয়ে থাকে তাহলে তা কি সংশোধন যোগ্য নয়? অবিলম্বে সংশোধন করে আকাদেমি এই পুরস্কার ঘোষণা করবে কি?
সাহিত্য আকাদেমির নীরবতায় আকাদেমি পুরস্কারে বাংলা বাদ যাওয়ার পিছনে নানা কারণ ও আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে। সাহিত্য জগতের কেউ বলছেন, বাংলা ভাষার প্রতি ‘অমর্যাদা’ করার জন্যই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে দিল্লি থেকে। আবার আরেক মহলের অভিযোগ, এক নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য বাংলা থেকে সুপারিশ জমা পড়েছিল, কিন্তু তাঁর সাহিত্য কর্মের যোগ্যতা নিয়ে বিচারকরা সহমত না হওয়ায় এবং এক বিচারক সরে দাঁড়ানোয় পুরস্কার ঘোষণা স্থগিত করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘ তাদের পাঠানো চিঠিতে সাহিত্য আকাদেমির কাছে জানতে চেয়েছে, বাংলার বিচারক সমিতি কি এবারে কোনও গ্রন্থ বা লেখকের নাম প্রস্তাব করেছিলেন? যদি করে থাকেন তা কি জনসাধারণের কাছে প্রকাশযোগ্য? বাংলা বা কোনও ভাষার বিচারক সমিতি যদি রাজনৈতিক বা অন্যান্য পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে সাহিত্যগুণহীন কোনও গ্রন্থকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে, তা প্রতিরোধ করার কোনও ক্ষমতা বা ব্যবস্থা সাহিত্য আকাদেমির কি নেই?
পবিত্র সরকার এবং রজত বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠিতে লিখেছেন, কোনও অযোগ্য গ্রন্থের পুরস্কার সেই ভাষার সাহিত্যের বা সাহিত্য আকাদেমির মতো জাতীয় প্রতিষ্ঠানের গৌরব বৃদ্ধি করে না, বরং আকাদেমি পুরস্কারের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে, সেই ভাষার সাহিত্যেরও লজ্জার কারণ হয়। এই অপবাদ থেকে সাহিত্য আকাদেমির আত্মরক্ষার কোনও ব্যবস্থা আছে কি না, জানালে সুখী হবো।
Sahitya Academy
বাংলা সাহিত্য বাদ কেন, জানতে চেয়ে চিঠি আকাদেমিকে

×
Comments :0