গাজায় ইজরায়েলী সেনার স্থল অভিযান শুরুর ৬ সপ্তাহ পরেও নিজেদের আক্রমণের ধার বজায় রেখেছে হামাস। আন্তর্জাতিক মহলের মতে, তারফলেই মঙ্গলবার ফাঁদে ফেলে উত্তর গাজায় ১ কর্নেল সহ ৯ সেনা জওয়ানকে হত্যা করতে পেরেছে হামাস।
ইজরায়েলী সেনার তরফে এই হামলার ঘটনা স্বীকার করা হয়েছ। টাইমস অফ ইজরায়েল জানাচ্ছে, বুধবার উত্তর গাজার সেজাইয়া অঞ্চলে হামাসের হামলায় গোলানী ব্রিগেডের এয়ার ফোর্স ইউনিট-৬৬৯’র ৯ সদস্য প্রাণ হারিয়েছে। এখনও অবধি গাজা স্থল অভিযানে ১১৫জন ইজরায়েলী সেনা জওয়ানকে হত্যা করেছে হামাস।
টাইমস অফ ইজরায়েলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেজাইয়া’র হামলায় মৃত কর্নেলের নাম ইৎজ্যাক বেন বাসাৎ। এই প্রথম গাজা অভিযানে কোনও কর্নেল বা সম-পদমর্যাদার অফিসার প্রাণ হারালেন। এই ঘটনায় এক লেফটেন্যান্ট কর্নেল, ২ মেজর এবং ১জন ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার অফিসারও হামাসের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এপি জানাচ্ছে, গাজা অভিযান শুরুর সময় ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ‘‘কয়েক সপ্তাহের মধ্যে হামাসকে ধ্বংস করার জন্য আমরা গাজায় ঢুকছি’’। কিন্তু গাজার প্রায় ৬০ শতাংশ বাড়ি গুড়িয়ে দেওয়ার পরেও হামাসকে যে বাগে আনতে পারেনি ইজরায়েল, তা বুধবারের ঘটনা থেকেই স্পষ্ট।
সামরিক অভিযান চালিয়ে আদৌ হামাসকে নির্মূল করা সম্ভব কিনা, সেই প্রশ্নও তুলেছে এপি।
এপি এবং আল জাজিরা জানাচ্ছে, ইজরায়েলী হামলার ফলে হামাসের পক্ষে সমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে গাজা এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে। একইসঙ্গে ইজরায়েলী সেনার বিরামহীন বোমা বর্ষণের ফলে আন্তর্জাতিক মহলেও ইজরায়েল কোনঠাসা। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ইজরায়েলের সব থেকে বড় সমর্থক আমেরিকাও বিরক্তি প্রকাশ করেছে। ওয়াইট হাউসের তরফে ইজরায়েলকে বলা হয়েছে, লাগামছাড়া হারে অসামরিক নাগরিকদের হত্যা চালিয়ে যাওয়া যাবেনা। সমাধানসূত্র বের করা প্রয়োজন।
মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘নির্বিচারে বোমা ফেলার জন্য দ্রুত আন্তর্জাতিক সমর্থন হারাচ্ছে ইজরায়েল।’’
এই আবহে এপি ইঙ্গিত দিয়েছে, শেষ পর্যন্ত গাজা অভিযানে হারের মুখ দেখতে হতে পারে ইজরায়েলকে।
যদিও ইজরায়েলের উগ্র দক্ষিণপন্থী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার স্পষ্ট করেছে, ‘‘পিছু হটার প্রশ্নই নেই। আন্তর্জাতিক মহল থেকে যতই চাপ আসুক, আমরা অভিযান চালিয়ে যাব। কোনও কিছুই আমাদের থামাতে পারবে না।’’
গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইজরায়েলী হামলায় ১৮ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। আহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। নিহতদের সিংহভাগ মহিলা এবং শিশু।
এপি জানাচ্ছে, গাজা শহরের দখল নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে হামাস এবং ইজরায়েলী সেনার মধ্যে। ১০ লক্ষের বেশি মানুষ গাজা শহর ছেড়ে ভূখণ্ডের দক্ষিণে চলে গেলেও শহরের মধ্যে এখনও লক্ষাধিক মানুষ রয়েছেন। তাঁরা বাড়ি ছেড়ে পালাননি। তাঁদের বক্তব্য, গাজার কোনও অংশই সুরক্ষিত নয়। মরলে নিজের বাড়িতেই মরব। তারমধ্যেই অবিরাম হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েলী সেনা এবং বিমানবাহিনী।
Comments :0