Ration Scam Bakibur Rahman

বাকিবুর রহমানের বি'পুল সম্পত্তির খোজ

রাজ্য

Ration Scam Bakibur Rahman


ফের প্রচুর সম্পত্তির খোজ রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ইডি’র হেফাজতে থাকা বাকিবুর রহমানের। প্রায় ২২০ কাঠা (১১ বিঘা) জমির হদিশ বাদুড়িয়া পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে পাড়ায়।
২০১৩-১৪ সালে এই জমির কিছুটা কেনেন এবং পরবর্তীতে বাকি জমি জোর জবরদস্তি দখল করেন নেন বলে অভিযোগ। তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীদের সাথে ভালো সম্পর্ক হওয়ায় সমাজবিরোধী এবং পুলিশকে পয়সা খাইয়ে বেশকিছু মানুষের জমি জোর জবরদস্তি দখল করে নেয় বাকিবুর। অসহায় অবস্থার মধ্যে সেই কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন অরবিন্দ দত্ত নামে এক জমির মালিক। রিতা দত্ত নামে এক ভদ্রমহিলারও সেই একই অভিযোগ। জানা গিয়েছে প্রথমে যে জমিটি বাকিবুর কেনে সেটি একটি পুকুর ছিল। পরবর্তীতে বেআইনিভাবে মাটি দিয়ে ভরাট করে দেয় পুকুরটি। সেই সময় জমি যাদের কাছ থেকে জমি নিয়েছিল তাদের মধ্যে কয়েকজনকে কাজ দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিল ইডি হেফাজতে থাকা রেশন দুনীতি কান্ডে অভিযুক্ত বাকিবুর রহমান। কিন্তু এত বছরে সে কিছুই করেনি ।পুরো জায়গাটাই উচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। এলাকার মানুষের ভেতরে ঢোকার কোন অধিকার নেই। মাঝে মাঝে গাড়ি ঢুকতো বার হতো এইটুকুই এলাকার মানুষ জানতো। তবে বেশ কিছুদিন এখানে কেউ আসেনা বা কোন গাড়িও ঢুকতে দেখে না এলাকার মানুষ। কিন্তু সেই ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অংশুমান দত্তের দাবি তিনি কিছুই জানেন না। এমনকি এই জায়গাটা যে বাকিবুরের সেটাও তিনি জানেন না।


 

রেশন দুর্নীতির চক্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বাকিবুর রহমান। ১৩টির বেশি কোম্পানি। একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। তাতে গচ্ছিত কোটি কোটি টাকা। বিলাসবহুল বাড়ি, ফ্ল্যাট, গাড়ি। রয়েছে হোটেল, হাসপাতালও। জেলায় একাধিক চাল ও আটাকল। বিদেশেও একাধিক সম্পত্তি। দুবাইতেও খোঁজ মিলেছে সম্পত্তির। ইতিমধ্যে একাধিক শিখণ্ডী সংস্থার সঙ্গে এই বাকিবুর রহমানের কোম্পানির বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেনের তথ্যও ইডি’র আধিকারিকদের হাতে এসেছে। এবার প্রচুর সম্পত্তির খোজ মিলল বাকিবুর রহমানের। রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে ৫৫ ঘণ্টা ধরে টানা তল্লাশি ও জেরা শেষে গত ১৩ অক্টোবর এনফোর্সমেন্ট ডাইরক্টরেট গ্রেপ্তার করে শাসক তৃণমূলের এক দাপুটে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এই বাকিবুর রহমানকে। 
২০১১ থেকে ২০২১— রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ২০২১-এ জ্যোতিপ্রিয়কে অন্য দপ্তরে পাঠিয়ে রথীন ঘোষকে খাদ্যমন্ত্রী করেন মমতা ব্যানার্জি। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক মন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যে ‘পিডিএস অডিট’ হয়নি বলেই অভিযোগ ওঠে। ২০১৫-১৬ আর্থিক বছর থেকে রাজ্যের রেশন নিয়ে কোনও হিসাবই হয়নি। খতিয়ে দেখা হয়নি সব লেনদেন, টাকার আদান প্রদান আদৌ নিয়মমাফিক ছিল কিনা। একে বলা হয় ‘পিডিএস অডিট।’ 
পরপর ৬ বছর রাজ্যে রেশন ব্যবস্থা সংক্রান্ত ওই অডিট না হওয়ার অভিযোগ ওঠে। রেশন দোকানগুলিতে চাল, আটা সহ নানা পণ্য প্রতি সপ্তাহে সরবরাহের দায়িত্ব রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের। এছাড়া এই দপ্তরের মাধ্যমে ধান, চাল সংগ্রহের কাজও হয়। তবে রেগার মতোই এই ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় খাদ্য মন্ত্রক সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখা, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার মতো কিছুই করেনি। 
লকডাউন পর্বেই এই দুর্নীতি সামনে আসে। নদীয়া জেলার একাধিক রেশন দোকানে নিম্নমানের চাল, গম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তা নিয়ে অভিযোগও দায়ের হয় লকডাউন পর্বে। পরে এই তদন্ত যায় ইডি’র হাতে। যদিও সেই তদন্তও থমকে ছিল। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে চলতি সপ্তাহেই একাধিক পৌরসভার পাশাপাশি নদীয়ার বেশ কিছু রেশন দোকান ও চালকলে হানা দিয়েছিল ইডি। সেখান থেকেই মেলে নতুন তথ্য। তার ভিত্তিতেই কৈখালিতে বাকিবুর রহমানের ফ্ল্যাটে চলে ম্যারাথন তল্লাশি। টানা ৩ দিন জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে গ্রেপ্তার করে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি রেশন দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, বাকিবুর রহমান তাতে অন্যতম অভিযুক্ত।


শনিবার রেশন দুর্নীতি মামলায় বাকিবুর রহমানকে ১১ নভেম্বর প্রর্যন্ত জেল হেপাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।

Comments :0

Login to leave a comment