আইএলও এবং ইন্সটিটিউট অফ হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট বা আইএইচডি যৌথভাবে এই সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, মাধ্যমিক বা তার চেয়ে বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্নদের ৩৫.২ শতাংশ বেকার ছিল ২০০০ সালে। ২০২২ সালে এমন যুবদের হার বেড়ে হয়েছে ৬৫.৭ শতাংশ। প্রায় দ্বিগুণ!
শিক্ষিত বেকারের অংশ বৃদ্ধির হার বুঝিয়ে দিচ্ছে ‘নতুন ভারত’ বা ‘বিকশিত ভারত’-র মতো স্লোগানের পিছনে থাকা আসল ছবি কী।
সমীক্ষা আরও জানাচ্ছে, ভারতে কর্মহীনদের ৮৩ শতাংশই যুব, মানে বয়স চল্লিশের কম।
সমীক্ষায় উঠে এসেছে, প্রাথমিকের স্তরের পরে শিক্ষাক্ষেত্রেও বেড়েছে ড্রপ আউটের সংখ্যা। যে রাজ্যগুলিতে দারিদ্র প্রকট, সেখানে মাঝপথে পড়া ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতাও বেশি। একইভাবে আর্থসামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা অংশের মধ্যেও আশঙ্কাজনক হারে ড্রপ-আউটের সংখ্যা বেড়েছে।
রিপোর্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা গিয়েছে, কোভিড এবং তার পরবর্তী সময়ে শিক্ষিত যুবদের মধ্যে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। একইসঙ্গে দেশে মূল্যবৃদ্ধি বাড়লেও শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি। ২০১৯ সালের পরে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। ২০২২ সালে দাঁড়িয়ে, অধিকাংশ অদক্ষ ও অস্থায়ী শ্রমিক ন্যূনতম মজুরির থেকে কম টাকা আয় করেন।
রিপোর্ট অনুযায়ী, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ওডিশা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং ঝাড়খন্ডের মত রাজ্যগুলিতে বেকারত্বের মাত্রা বাকি দেশের থেকে বেশি। এই রাজ্যগুলিতে শ্রমিকের মজুরিও যথেষ্ট কম।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপির অন্যতম প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে ২ কোটি করে বেকারের চাকরি। সেই প্রতিশ্রুতি যে কার্যকরী হয়নি, তা সাম্প্রতিকতম রিপোর্টেও উঠে এল স্পষ্ট ভাবে।
২০২১ সালে ভারতের মোট জনসংখ্যার ২৭ শতাংশ ছিল যুব সম্প্রদায়ভুক্ত। ২০৩৬ সালে সেই হার কমে দাঁড়াবে ২৩ শতাংশে। এই মুহূর্তে গড় বয়সের নিরিখে বিশ্বের ‘যুব’তম দেশ হল ভারত। রিপোর্টে ফুটে উঠেছে, সেই যুবসমাজের ধার বা ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’-কে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। একইসঙ্গে অধিকাংশ যুব ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর মৌলিক কাজের সঙ্গে সড়গড় নয়। ৬০ শতাংশ যুব ‘অ্যাটাচমেন্ট’ বা একাধিক ফাইল জুড়ে ইমেল পাঠাতে পারেন না, ৬০ শতাংশ যুব কপি-পেস্ট করতে পারেন না।
কোভিড এবং তার পরবর্তীকালে দেশের কাজের বাজারের করুণ ছবিও উঠে এসেছে রিপোর্টে। লকডাউন ওঠার পরে কাজ ও চাকরির বাজারে বাহ্যিক কিছু উন্নতির ছবি ফুটে উঠলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই কাজ ছিল কম মজুরির, অথবা স্বনিযুক্তি কিংবা পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে বিনা পারিশ্রমিকের কাজ।
২০১৯ সালের পর কর্মক্ষেত্রে বেড়েছে শোষণ। কমেছে মজুরি।
একইভাবে ২০১৯ সালের পরে অকৃষিক্ষেত্রে কাজের সুযোগ কমেছে, যা অর্থনীতির গতি শ্লথ হওয়ার দিকেই নির্দেশ করে। অকৃষিক্ষেত্রে কাজ না মেলায় ভিড় বাড়তে শুরু করে কৃষিক্ষেত্রে। তারফলে কৃষিক্ষেত্রের স্থবির মজুরির চিত্র আরও প্রকট হয়েছে।
২০১৮ সালের পরে স্থায়ী কর্মসংস্থানের হারও ২০১৮ সালের পর থেকে কমতে শুরু করেছে। দেশের কর্মীবাহিনীর ৯০ শতাংশ এই মুহূর্তে অস্থায়ী এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। এরমধ্যে রয়েছেন বিপুল সংখ্যক মহিলা শ্রমিক। অস্থায়ী শ্রমিকদের সিংহভাগ সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের অন্তর্ভুক্ত নন। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কা মাথায় নিয়েই কাজ করছেন তাঁরা।
বেকারত্বের হারের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্র থেকে ক্রমেই মহিলাদের হারিয়ে যাওয়ার ছবিও স্পষ্ট হয়েছে রিপোর্টে। দেখা গিয়েছে, শ্রমশক্তিতে মহিলাদের অংশগ্রহণের হার ক্রমেই কমছে। উচ্চশিক্ষার পরেও কাজ পেতে সমস্যা হচ্ছে মহিলাদের।
মহিলাদের পাশাপাশি আদিবাসী ও তপশিলী অংশের মানুষও নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছেন। এর কারণ হিসেবে জাতিগত বিদ্বেষ ও বর্ণবাদের প্রভাব উঠে এসেছে।
Comments :0