Weaving Artist

দেনার দায়ে ফের আত্মঘাতী তাঁতশিল্পী

রাজ্য

Weaving Artist

দেনার দায়ে বিপর্যস্ত হয়ে এবার আত্মঘাতী হলেন কমলচন্দ্র বসাক নামে এক তাঁতশিল্পী। মৃতের বাড়ি কালনা থানার ধাত্রীগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের ভবানীপুর গ্রামে। 
জানা গেছে, বুধবার সকালে নিজের বাড়িতেই তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায় পরিবার। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে উদ্ধার করে কালনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। 
তাঁতশিল্পীর পরিবার জানিয়েছে যে কমলচন্দ্র বসাকের বাড়িতে এক সময় সাতটি তাঁতে শ্রমিকরা কাজ করতেন। কিন্তু এই শিল্পের অবস্থা ধীরে ধীরে অবনতির দিকে যাওয়ায় কমলচন্দ্র বসাকের তাঁত সব বন্ধ হয়ে যায়। তিনি একটি মাত্র তাঁত নিজেই চালিয়ে সংসার চালানোর চেষ্টা করতেন। কিন্তু তাতে যা আয় হতো তাতে সংসার চলত না। ফলে বাজারে বিশাল অঙ্কের টাকা ঋণ হয়ে গিয়েছিল। ঋণ শোধ করতে নিজের বাড়ি বন্ধক রাখতে হয়। কিন্তু তাতেও তার ঋণ শোধ হয়নি। 
তাঁত শিল্পের পেশা থেকে দুই ছেলেকে ছাড়িয়ে একজনকে চেন্নাইয়ে শ্রমিকের কাজে পাঠিয়েছিলেন। অন্য ছেলেকে মোবাইলের দোকানে কাজে দিয়েছিলেন। তাতেও তার আর্থিক সমস্যার সমাধান হয়নি। পরে তিনি হতাশাগ্রস্থ হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। একদিকে সংসারের খরচ, অন্যদিকে চিকিৎসার খরচ জোগার করা সম্ভব হচ্ছিল না। 


প্রতিবেশী তাঁতশিল্পী মন্টু বসাক জানান, ‘‘তাঁতশিল্পে ব্যাপক মন্দার জন্য বিপাকে পড়েছেন এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। তাঁদের পরিবারও এই বিপর্যয়ের কবলে পড়ছে। শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।’’ 
মন্টু বসাক জানান যে তাঁর বাড়িতেও এক সময় বারোটি তাঁত চলতো। উত্তরবঙ্গের শ্রমিকরা এসে তার বাড়িতে কাজ করতেন। তিনি বলেছেন, ‘‘সেই সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে, আমি এখন একাই একটি তাঁত চালাই। তাতে যা রোজগার হয় সংসার চালানো কঠিন হয়ে উঠেছে। তাঁত শিল্পের অবনতির কারণেই হয়তো কমলচন্দ্র বসাক আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন।’’
পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে কালনা মহকুমায় ৬০ হাজার মানুষ এই হস্তচালিত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বেসরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখন কেবল ধাত্রীগ্রামেই হস্ত চালিত তাঁত বন্ধ হয়েছে ২২ হাজার, সমুদ্রগড়ে আরও ৩৫ হাজার। 
করোনা মহামারীর প্রকোপে এই শিল্প একেবারেই লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ায় বহু তাঁতশিল্পী কাজ হারান। বিরাট প্রভাব পরে কালনা মহকুমার কালনা শহর, ধাত্রীগ্রাম, কাদিপাড়া, পূর্বস্থলীর নশরতপুর, সমুদ্রগর, মাজিদা, শ্রীরামপুরের মতো তাঁতশিল্প নিবিড় এলাকাগুলিতে। সাধারণত কালনায় ঢাকাই জামদানি শাড়ি বেশি উৎপাদন হয়। এই শাড়ি বেশিরভাগই বুনতেন উত্তরবঙ্গ থেকে আসা পরিযায়ী তাঁত শ্রমিকরা। কিন্তু প্রথম লকডাউনে তারা ফিরে যাওয়ার পর আর এদিকে কেউ পা বাড়াননি। 


জীবনজীবিকার টানে এখানকার তাঁত মালিকরা নিজেরাই শ্রমিক হয়ে গিয়ে তাঁতে বসে যান। কিন্তু কাপড় হাটগুলোতে খরিদ্দার না থাকায় ১ হাজার ২০০ টাকা মূল্যের কাপড়ের দাম নেমে আসে মাত্র সাড়ে ৪০০ টাকায়। ফলে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হন তাঁত শিল্পীরা। 
তাঁত শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা প্রবীর মজুমদার বলেন, ‘‘আগে পুজো এলেই তাঁতিদের নাওয়া-খাওয়া ভুলতে হত। এখন ভাটা পড়েছে হস্তচালিত তাঁত শিল্পে। অর্থের সংস্থান কমেছে তাঁতিদের। আজ ধ্বংসের মুখে তাঁত শিল্প। তবে আত্মহত্যা সমাধানের পথ হতে পারে না। সবাইকে সংঘটিত হয়ে এই সমস্যার সমাধানে নামতে হবে।’’

Comments :0

Login to leave a comment