দিল্লির রামলীলা ময়দানে কিষাণ মজদুর মহাপঞ্চায়েতে হাজার হাজার কৃষক এবং শ্রমিক জমায়েত হয়েছেন। তাঁরা এখানে তাঁদের ক্ষোভ প্রকাশ করতে এসেছেন। নরেন্দ্র মোদী সরকার দফায় দফায় প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। তার বিরুদ্ধেই এদিন সমাবেশ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রমিক-কৃষকরা।
বৃহস্পতিবার দিল্লির রামলীলা ময়দানে শ্রমিক কৃষক মহাপঞ্চায়েত সমাবেশ থেকে এমনটাই জানালেন সারাভারত কৃষকসভার সাধারণ সম্পাদক বিজু কৃষ্ণন। তিনি বলেছেন, ‘‘মোদী সরকারকে সাজা দিতে চাইছেন কৃষকরা।’’
কৃষ্ণন বলেন, ২০২১ সালের ৯ ডিসেম্বরে ৩৮০ দিনের আন্দোলন শেষে মোদী সরকার কৃষকদের এমএসপি’র দাবি মেনে নেওয়া সহ একগুচ্ছ লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মোদী সরকার লিখিত ভাবে ঘোষণা করেছিল, সমস্ত ফসলের এমএসপি বা ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি বৈধতা দেওয়া হবে। সরকার বলেছিল, ফসলের দাম ঠিক হবে স্বামীনাথন কমিশনের নির্ধারিত সি২+৫০% ফর্মুলা অনুযায়ী। এই ফর্মুলা অনুযায়ী ফসলের ন্যূনতম দাম উৎপাদন খরচের দেড়গুণ হওয়ার কথা। কোনওটাই হয়নি।
তিনি বলেন, ‘‘এর পাশাপাশি কৃষিঋণ মুকুব, কৃষকদের উপর চাপিয়ে দেওয়া মামলা প্রত্যাহার, কৃষক আন্দোলনে প্রাণ হারানো সাতশো’র বেশি কৃষকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও লিখিত ভাবে মেনে নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সময় সংশোধিত বিদ্যুৎ বিলও প্রত্যাহার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মোদী সরকার। কিন্তু ২ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কোনও প্রতিশ্রুতি পালন করেনি বিজেপি সরকার।’’
কৃষকদের ক্ষোভের কারণ হিসেবে কৃষ্ণন বলেন,‘‘লখিমপুর খেরিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সদস্য অজয় মিশ্র’র ছেলে ৫জন কৃষক ও ১জন সাংবাদিককে গাড়িতে পিষে মারেন। এরপরেও অজয় মিশ্রকে মন্ত্রীসভায় রেখে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। ২০২৪’র নির্বাচনেও তাঁকে প্রার্থী করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষকরা।’’
কৃষ্ণন বলেছেন,‘‘কৃষকদের রুখতে নজিরবিহীন নিপীড়ন চালিয়েছে দিল্লি পুলিশ ও হরিয়ানার বিজেপি সরকারের পুলিশ। রাস্তায় পেরেক পোঁতা থেকে শুরু করে ড্রোনের মাধ্যমে টিয়ার গ্যাসের শেল ফেলা, কোনও পদ্ধতি বাদ দেয়নি বিজেপি প্রশাসন।’’
সর্বভারতীয় এই কৃষক নেতার বক্তব্য, ‘‘মোদী সরকারের ১০ বছরে কৃষিক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ৪লক্ষের বেশি কৃষক ও খেতমজুর আত্মহত্যা করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের পাশে দাঁড়ায়নি। বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ১০০ দিনের কাজ বাড়িয়ে ২০০ দিন করা হবে। সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে সরকার। কর্পোরেটদের লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মুকুব করা হলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে অসহায় কৃষকদের কোনও সাহায্য করেনি সরকার। প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা থেকেও তাঁরা সাহায্য পান নি। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা থেকে ৫৭ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে কর্পোরেট সংস্থাগুলি। কৃষকদের ৩ হাজার টাকা পেনশনেরও ঘোষণা করেছিল মোদী সরকার। এখনও অবধি কোনও কৃষক সেই টাকা পাননি।’’
বিজু কৃষ্ণন বলেন,‘‘মোদীর সমস্ত প্রতিশ্রুতি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এখন ডাব্লিউটিও’র চাপে একাধিক ত্রুটিপূর্ণ বাণিজ্যচুক্তি করতে চাইছে সরকার। এর পরিণাম কৃষকদের জন্য ভয়াবহ হবে। বিদেশি কৃষিপণ্য ভারতের বাজারে এনে ফেলা হবে। তারফলে দেশের কৃষিপণ্য আরও অলাভজনক হয়ে পড়বে। কৃষি সঙ্কট বাড়বে। এই সমস্ত কিছুর বিরুদ্ধে কৃষকরা লড়াই করছেন। তাঁদের দাবি, ‘মোদী সরকার কো সাজা দো’ বা মোদী সরকারকে সাজা দিতে হবে।’’
Comments :0