Gangasagar 2024

স্নান ঘাটের অবস্থা খারাপ, মুখ্যমন্ত্রী মগ্ন আত্ম প্রচারে

জাতীয় রাজ্য

মনোজ আচার্য

 

জলোচ্ছ্বাসে সমুদ্র গর্ভে বিলীন হচ্ছে স্নানের ঘাট, সৈকত ভূমি। সাগর স্নানের  জন্য নির্দিষ্ট পাঁচটি ঘাটের মধ্যে তিনটিই গ্রাস করেছে সমুদ্র। তাই মাত্র দুটি ঘাটেই এবারের মকর স্নান। এই দুটি ঘাটে এতো বিপুল সংখ‍্যক তীর্থযাত্রী  কিভাবে স্নান করবেন ? সেটাই  এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। সোমবার পৌষ সংক্রান্তির দিন পূণ‍্য স্নানের জন্য কাতারে কাতারে মানুষের ভীড় হতে পারে। মাত্র দুটি স্নানের ঘাটে মানুষের ঢল নামলে নানা দূর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। সাগর মেলায় পূণ‍্যস্নানটাই তীর্থ যাত্রীদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু সেটা নিয়েই তেমন তৎপরতা নেই মমতা ব‍্যানার্জির সরকারের। সাগর স্নানের জন্য যে পাঁচটি ঘাট নির্দিষ্ট করা থাকে সেগুলোর প্রায় সবকটিই গ্রাস করেছে সাগর। এনিয়ে সরকারের পরিকল্পনা, ব‍্যবস্থাপনায় যথেষ্ট খামতি রয়েছে বলেই অভিযোগ কপিল মুনির আশ্রম সংলগ্ন স্থানীয় দোকানদারদের। স্থানীয়দের অভিযোগ সাগর ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। জলোচ্ছ্বাসে পাড় ভেঙে স্নানের ঘাটগুলো বেপাত্তা হয়ে যাচ্ছে। এনিয়ে সরকারের উদ্যোগে যথেষ্ট খামতি রয়েছে।

জলোচ্ছ্বাস থেকে পাড়গুলো রক্ষার জন্য নামকাওয়াস্তে ব‍্যবস্থা নিয়ে কার্যত দায়সারা ভুমিকায় দেখা যাচ্ছে মমতা ব‍্যানার্জি র সরকারকে। ২০২৩,মেলার কয়েক মাস আগে শালবল্লা ও বালি, মাটির বস্তা দিয়ে পাড়ের ধারে ধারে যে বাঁধের ব‍্যবস্থা করা হয়েছিল, সেই অপক্ত, অবৈজ্ঞানিক, পরিকল্পনাহীন কাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সমুদ্র লাগাতার তার তান্ডব চালিয়েছে। ভেঙে গেছে কোটি কোটি খরচের বাঁধন। বাঁধে দেওয়া বালি, কাদার বস্তা ধ্বসে এখন ১ থেকে ৩ নম্বর ঘাটে ভাঁটার সময় চটচটে কাদা। সেখানে নামা যায়না। নামলে দূর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। তাই ১ থেকে ৩ নম্বর ঘাট এখন নিষিদ্ধ। চারিদিকে সাবধান বার্তার ব‍্যানার ঝুলছে। এদিকে পূণ‍্যস্নানের  নির্দিষ্ট করা ৪ এবং ৫ নম্বর ঘাটের অবস্থাও খারাপ। সেখানেই শনিবার  কাতারে কাতারে মানুষের ঢল নামতে দেখা গেছে। পূণ‍্যস্নান করতে নেমে অনেকেই ভীড়ের চাপে এদিন বিধ্বস্ত, অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সোমবার মকরসংক্রান্তির দিন স্নানের জন্য আরও মানুষের ঢল নামলে তা কিভাবে সামাল দেওয়া যাবে সেটাই এখন বড় দুশ্চিন্তার বিষয়! 

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রের মোদী সরকারের অনুকরণে মমতা ব‍্যানার্জির সরকার ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, মেলা, এসবকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব‍্যবহার করছেন। চরম আর্থিক সঙ্কটে চলা সরকার, বছর বছর সাগর মেলার বাজেটের গ্রাফকে উর্ধমুখী করে চলেছে। সেই বিপুল বাজেটে চলছে রকমারি আয়োজন ও মমতা ব‍্যনার্জির আত্ম প্রচার। কলকাতা থেকে গঙ্গাসাগর, সাগর মেলার বিজ্ঞাপনের বহর ছড়িয়ে দিতেই খরচ হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। এছাড়াও সাগর মেলার ঐতিহ্যকে পেছনে ফেলে মেলা চত্বরে মমতা ব‍্যানার্জির এই সেই প্রকল্পের বিজ্ঞাপনের ফিরিস্তি তুলে ধরতে বিপুল খরচের প্রদর্শনী দেখা যাচ্ছে। যে সাগর মেলা এই রাজ‍্য ও দেশ বিদেশের মানুষের মিলনের ঐতিহ্য বহন করে, মমতা ব‍্যনার্জির শাসনকালে সেই সাগর মেলা ব‍্যক্তি প্রচারের চুড়ান্ত রমরমায় পরিনত হয়েছে। এই মেলা যেন আর মানুষের মিলনের নয়, তীর্থযাত্রীদের জন্য নয়। এ মেলা মমতা ব‍্যানার্জি, অভিষেক ব‍্যানার্জিদের মেলা, সেই ভাষ্যই ধরা দিচ্ছে সাগর মেলায়। এই আত্মপ্রচার সর্বস্বতায় মমতা ব‍্যানার্জিরা মেলার ঐতিহ্য ও পুণ‍্যস্নানের বিষয়টিকেই  আড়ালে, আপডালে করে দিয়েছে। মেলার জন্য, পুণ‍্যস্নানের জন্য, সর্বোপরি সাগরের করাল গ্রাস থেকে কপিলমুনি আশ্রম সংলগ্ন এলাকা, সেখানের দোকানিদের জীবীকা রক্ষার জন্য সরকারি উদাসীনতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে সাগরমেলার ঐতিহ্য রক্ষা নয়, মেলাকে ঘিরে আত্মপ্রচার মোদ্দাকথা মমতা ব‍্যানার্জিদের।

Comments :0

Login to leave a comment