জয়ন্ত সাহা
শিতলকুচির গোলেনাওহাটি জামে হাই মাদ্রাসা (উচ্চমাধ্যমিক)-র ছাত্ররা পরীক্ষায় ভালো ফল করত। মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষার মেধা তালিকায় কেউ তৃতীয় হয়েছে। কেউ চতুর্থ। এমন কি দ্বিতীয় স্থানাধিকারীও ছিল এই মাদ্রাসা থেকে। তবে এই সবই লকডাউনের আগের কথা। তখন মাদ্রাসায় ১৭ জন শিক্ষক ১১০০ পড়ুয়াকে পড়াতেন। স্কুলের প্রবীণ শিক্ষক বিধান অধিকারীর কথায়,‘‘সে ছিল স্কুলের সোনালি অতীত।’’
এখন সেই স্কুলে পড়ুয়া কমে হয়েছে ৭০০। আর শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র ৭ জন! উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ানোর একজন শিক্ষকও নেই! নামেই মাদ্রাসা, অথচ নেই আরবি পড়ানোর শিক্ষকও। অঙ্ক, ভূগোল সহ একাধিক বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ৮ টি ক্লাসে কী করে পড়াবেন ৭ জন শিক্ষক? এর মধ্যে আগামী বছরের মে মাসে আরেক জন শিক্ষক অবসর নিতে চলেছেন।
অভিভাবকরা ধরেই নিয়েছেন মাদ্রাসা আজ নয় তো কাল উঠে যাবে। যে সব অভিভাবকের ট্যাঁকে কানাকড়িও আছে তাঁরা ছেলে মেয়েদের দূরের অন্য স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন। আর যাদের সে সামর্থ্যও নেই তাঁদের কেউ কেউ পরিযায়ী শ্রমিকের খাতায় নাম লিখিয়েছে! কেউ কেউ এখনও বই খাতা হাতে মাদ্রাসায় যায়!
ফি বছর মাদ্রাসা বোর্ডের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পড়ুয়ার সংখ্যা কমছে। বাড়ছে ড্রপ আউট। গত বছরও এই মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল ৮৪ জন পড়ুয়া। এবারে মাধ্যমিক পর্যায়ের টেস্ট পরীক্ষা সবে শেষ হয়েছে। ৫২ জন পড়ুয়ার মধ্যে টেস্ট পরীক্ষায় বসেছে মাত্র ৪৬ জন। চূড়ান্ত পরীক্ষায় পড়ুয়ার সংখ্যা কমে গেলেও অবাক হবার কিছু নেই।
স্কুলের অভিভাবক সিরাজ মিয়া,সোলেমান মিয়াদের বক্তব্য, প্রথমত শিক্ষক নেই। অঙ্ক সহ অনেক বিষয় এমনকি আরবি ভাষাটাও পড়ার সুযোগ নেই স্কুলে। পরীক্ষা ভীতিতেই অনেক ছেলে মেয়ে আর মাদ্রাসায় যেতে চায় না। এছাড়াও গরিব প্রধান এলাকা হওয়ার কারণে কাজের জন্য ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেগুলো। যেমন, সামিনা বিবির ছেলে সামসুল ক্লাস নাইনে পড়তে পড়তেই জয়পুরে চলে গেছে কাজ করতে। সামিনা বিবির কথায়,‘‘ আমার ছেলের বড় প্রিয় ছিল স্কুল। সেই মাদ্রাসার স্কুল বাড়িটাই থাকবে। একদিন আর কোনও ছাত্র মাদ্রাসায় যাবে না। স্কুলের ঘন্টাও বাজবে না।’’
Comments :0