ভূমিধ্বসে বিপর্যস্ত কেরালার ওয়ানাডের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। তারই মধ্যে নিরবিচ্ছিন্ন ত্রাণকাজ চালাচ্ছে কেরালা প্রশাসন এবং ভারতীয় সেনা বাহিনী। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী ২৯৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। ভূমিধ্বসের ফলে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুন্ডাক্কাই এবং চুরালামালা গ্রাম দুটি। এই দুই জনপদের এখনও ২৪০ জনের বেশি মানুষ মাটির নীচে চাপা পড়ে রয়েছেন বলে উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চালিয়ার নদী থেকেই ১৫১টি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার রাতে সাময়িক বিরতির পরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ফের উদ্ধারকাজ শুরু হয়। সারাদিন চলে উদ্ধার। কিন্তু প্রবল বৃষ্টির জন্য একাধিকবার থমকে যেতে হয়েছে উদ্ধারকারীরা। যত দ্রুত সম্ভব মানুষকে উদ্ধার করার জন্য স্থানীয় এলাকায় কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার তৈরি করেছে সেনাবাহিনী। একজন মেজর জেনারেল এবং একজন ব্রিগেডিয়ার পদমর্যাদার সেনা অফিসার উদ্ধারকারীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
কেরালার মনোরমা পত্রিকা জানাচ্ছে, দূর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়া এবং ওয়ানাডের মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নেহরু ট্রফি নৌকা প্রতিযোগিতা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভূমিধ্বসের ফলে মুন্ডাক্কাই এবং চুরালামালা গ্রাম দুটি সম্পূর্ণ ভাবে কাদামাটির গ্রাসে চলে গিয়েছে। গ্রাম দুটির ৮২০৪ জন বাসিন্দাকে ৮২টি আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কেরালার রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খান জানিয়েছেন, ওয়ানাডের ভূমিধ্বসকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আবেদন জানাবেন তিনি।
কেরালা সরকারের শিক্ষাদপ্তর জানিয়েছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য কাসারগোড, কান্নুর, ওয়ানাড, কোঝিকোড়, মালাপ্পুরম এবং ত্রিশূর জেলার সমস্ত স্কুলে শুক্রবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সেনা জওয়ানদের পাশাপাশি কেরালার চিকিৎসকরাও নিরন্তর পরিষেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআই’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, ‘‘বিভৎস অবস্থায় মৃতদেহ গুলিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছিল। সেই দৃশ্য দেখে মাথা ঠিক রাখা যাচ্ছিল না। কিন্তু তারপরেও বিকেলের মধ্যে আমরা ১৮টি দেহের ময়নাতদন্ত করি।’’
সেই চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসকদের কিছুটা সুরাহা দিতে পাশের হাসপাতালগুলি থেকে চিকিৎসকদের ওয়ানাডে পাঠানো হয়। আমাদের হাসপাতালে ময়নাতদন্তের ৮টি টেবিল রয়েছে। এক সময় প্রতিটি টেবিলের জন্য কমপক্ষে ১ জন চিকিৎসক এসে দাঁড়ান। তারফলে প্রথম দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার মধ্যে আমরা ৫৩টি মৃতদেহের ময়নাতদন্ত শেষ করতে পারি। রাত সাড়ে এগারোটার মধ্যে ৯৩টি দেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।’’
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ময়নাতদন্তের কাজ অত্যন্ত দ্রুত গতিতে হওয়ার ফলে সামগ্রিক উদ্ধারকাজ ও পরবর্তী প্রক্রিয়াগুলিরও গতি বাড়ে। বহু দেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন অবস্থায় হাসপাতালে এসে উপস্থিত হয়। সেই দেহগুলি থেকেও যুদ্ধকালীন তৎপরতায় দেহরস সহ অন্যান্য উপাদান সংগ্রহ করে রাখা হচ্ছে, যাতে পরবর্তীকালে সেগুলিকে সনাক্ত করা যায়।
Comments :0