Salim on governor peace room

হত্যা করেছে তৃণমূল, গণতন্ত্রের শব সংরক্ষণে ‘পিস রুম’: খেদ সেলিমের

রাজ্য

‘‘ দেশের ইতিহাসে যখনই গণতন্ত্র হত্যা হয়েছে তখনই তার পৌরহিত্য করেছে রাজ্যপাল এবং রাজভবন।’’ সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বললেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। 
পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে অশান্তিকে কেন্দ্র করে যেই কন্ট্রোল রুম রাজভবনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘পিস রুম’। তা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজ্য এবং রাজভবনের সংঘাত। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস সোমবার সাংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, রাজ্যের মানুষের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা থেকে তিনি এই কন্ট্রোল রুম রাজভবনে খুলেছেন। অন্য দিকে তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে যে, রাজ্যপালের এই পদক্ষেপ অসাংবিধানিক।
সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এদিন বলেন, ‘‘রাজভবনে এর আগে কখনও এই ধরনের পিস রুম হয়েছে? আমাদের রাজ্যে তৃণমূল গনতন্ত্রকে হত্যা করছে। কেউ মারা গেলে দেহ সংরক্ষণের জন্য যেমন পিস হাভেন বা পিস ওয়ার্ল্ডে রাখা হয় সেই ভাবে এখানে বিজেপি রাজভবনে পিস রুমে বাংলার গণতন্ত্রের শব রাখতে চাইছে। আর আমরা চাইছে গণতন্ত্র ফেরাতে। মানুষের পঞ্চায়েত তৈরি করতে।’’ 


সেলিম আরও বলেন, ‘‘যেমন এক ফোনে এক লাখ, মিস কলে মেম্বারশিপ, সেই ভাবে এই কন্ট্রোল রুম। বিজেপির কোন নেতার দম নেই রাস্তায় নামার তাই তারা রাজভবনকে ব্যবহার করে মানুষের তথ্য সংগ্রহ করতে চাইছে।’’ রাজভবনের এই কন্ট্রোল রুমকে কটাক্ষ করে সেলিম বলেন, ‘‘সংবিধান অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রী, নির্বাচন কমিশনার রাজ্যপাল নিযুক্ত করেন। তাহলে তিনি কেন এই হিংসার বিষয় মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্য সচিব বা স্বরাষ্ট্র সচিবকে তলব করছেন না? আসলে রাজ্যপাল কেন্দ্রীয় সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্ট হিসাবে কাজ করছে। এই সব মিথ্যা নাটক করে কোন লাভ নেই। মানুষ গ্রামে গ্রামে লড়ছেন এবং লড়াই করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।’’ 
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপিকা কাবেরী চক্রবর্তীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একজন ছাত্র হিসাবে বলতে পারি যে সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপাল মন্ত্রীসভার সাথে আলোচনা করে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী রাজ্যপাল নিজে কোন পদক্ষেপ নিতেও পারেন। আমাদের বর্তমান রাজ্যপাল একজন প্রাক্তন আইএএস অফিসার। আইন তাঁর জানা। হয়তো আইনের সেই ফাঁককে তিনি কাজে লাগিয়েছেন।’’
তবে রাজভবন সূত্রে খবর সকাল থেকে কন্ট্রোল রুমে বিভিন্ন অভিযোগ আসছে। তার প্রধান কারণ পুলিশ নিষ্ক্রিয়। কোথাও বিরোধীদের ওপর আক্রমণ তো কোথাও আবার শাসক দলের এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলে রাজভবনে অভিযোগ জানাচ্ছে। উল্লেখ্য রাজভবনে অভিযোগ জমা পড়লেও তার বিরুদ্ধে কে পদক্ষেপ নেবে? রাজ্য প্রশাসন না রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। তার কোন উত্তর নেই।


৮ জুন পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে অশান্তির খবর সামনে আসতে শুরু করেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, ভাঙড়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। আক্রান্ত হয়েছেন সিপিআই(এম) এবং আইএসএফ কর্মীরা। মৃত্যু হয়েছে একজন আইএসএফ কর্মীর। চোপড়ায় আহত হয়েছেন সিপিআই(এম) কর্মী।  
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্য প্রশাসনে আক্রমণ করে সেলিম বলেন, ‘‘বিডিও অফিস যখন তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনী ঘিরে রাখছে তখন পুলিশ কিছু করছে না। কিন্তু বিরোধীরা যখন মনোনয়ন দিতে যাচ্ছে তখন যাতে তারা মনোনয়ন দিতে না পারে তার ব্যবস্থা করছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভেবেছিলেন নির্বাচন একতরফা হবে। কিন্তু আমরা বলেছিলাম আমরা তৈরি আছি। আর তাই এখন বামফ্রন্ট, বামফ্রন্টের সহযোগী প্রার্থীদের মনোনয়ন তুলে নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে। দিনহাটা থেকে ডায়মন্ড হারবার সর্বত্র এই চলছে। ডায়মন্ড হারবারে সব থেকে বেশি চাপ দেওয়া হচ্ছে অভিষেকের গুন্ডা বাহিনীর পক্ষ থেকে। কিন্তু এবার মানুষ তৈরি ঢাকি সমতে বিদায় দিতে এবং নিজেদের পঞ্চায়েত গড়তে।’’
সোমবার ফরাক্কায় বোমা ফেটে পাঁচজন শিশু আহত হয়েছে। যার মধ্যে একজনের আঘাত গুরুতর। এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘বগটুইয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী পুলিশের ডিজি-কে বলেছিলেন ১৫ দিনের মধ্যে গোটা রাজ্যে যত বেআইনি অস্ত্র রয়েছে সব উদ্ধার করার জন্য। কিন্তু কিছু হয়নি। তাহলে ভাবতে হবে ওটা মুখ্যমন্ত্রীর নাটক ছিল। এতো বোমা পিস্তল কোথা থেকে আসছে? মমতা এবং শুভেন্দু (অধিকারী) দুজনে মিলে রাজ্যে বেআইনি অস্ত্র কারখানা তৈরি করেছে। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালিন যখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কনভয়ে ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণ হয় তখন কেন মমতা কোন কথা বলেননি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রচার মাধ্যমের উচিত বলা যাতে কোনও শিশু বল ভেবে বোমা নিয়ে না খেলে। এছাড়া প্রচার চালানো উচিত যাতে যুব সমাজ অস্ত্র হাতে তুলে না নিয়ে ভাড়াটে গুন্ডার কাজ না করে।’’
মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের হিংসা সংক্রান্ত যেই যেই অভিযোগ তারা নির্বাচন কমিশনের জানিয়েছে সেই সব অভিযোগ মানবাধিকার কমিশন, মহিলা কমিশন এবং এসসি এসটি কমিশনে জানাবেন যাতে পদক্ষেপ নেয়।

Comments :0

Login to leave a comment