MD SALIM PRESS CONFERENCE

বামফ্রন্টকে ভোলানো যায়নি ১২ বছরে, বললেন সেলিম

রাজ্য

CPIM BJP RSS TMC WEST BENGAL POLITICS BENGALI NEWS

বারো বছরে বামফ্রন্ট সরকারে অভিজ্ঞতা ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। আজ কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ মানুষ সেই লালঝাণ্ডাই তুলে নিচ্ছেন। শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এমন বার্তাই দিলেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। একইসঙ্গে মমতা ব্যানার্জির টুইটের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দশ বছর দুর্নীতি করেছেন। আর শেষ দু’বছর দুর্নীতি সামলাতে কাটিয়েছেন। 

ভাইপো অভিষোক ব্যানার্জিকে জেরায় ডাকায় এদিন শনিবার মমতা ব্যানার্জি বলেন যে এজেন্সি রাজ তাঁর বারো বছরের সরকারের কাজে বাধা তৈরি করে চলেছে।

শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে থেকে  মমতা ব্যানার্জির এই দাবিকে কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন সেলিম। 

শনিবার অর্থাৎ ২০ মে নিজেদের সরকারের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করে তৃণমূল। সেই রেশ ধরে এদিন একটি টুইট করেন মমতা ব্যানার্জি। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্রের স্বৈরাচারী শাসক দেশজুড়ে এজেন্সি রাজ চালাচ্ছে। তারফলে আমাদের কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু সারা দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ আমাদের পাশে রয়েছে। 

শনিবারই শিক্ষক নিয়োগ কান্ডে সিবিআই জেরার মুখোমুখি হতে হয়েছে অভিষেক ব্যানার্জিকে। সেদিনই আবার তৃণমূল সরকারের প্রতিষ্ঠা দিবস। 

সেলিম বলেন, ২০১১ সালের পর থেকে বস্তি উচ্ছেদ, পুকুর ভরাট, ত্রাণের ত্রিপল চুরি- হেন দুর্নীতি নেই যার সঙ্গে তৃণমূল যুক্ত নয়। শিশুদের মিড ডে মিলের চাল, সংখ্যালঘু ও আদিবাসী পড়ুয়াদের স্টাইপেন্ড দেওয়ার ক্ষেত্রেও দুর্নীতি হয়েছে। মমতা ব্যানার্জি নিজে ৭৫ শতাংশ ও ২৫ শতাংশ কাটমানির তত্ত্ব হাজির করেছিলেন। গত ১০-১২ বছর ধরে তৃণমূল যে ২৫ শতাংশ কাটমানি খেয়েছে, এখন তারই হিসেব সামনে আসছে। আর তাতেই তিনি ভিরমি খাচ্ছেন। 

সেলিম এদিন বলেছেন, রাজ্যের সাধারণ মানুষ তৈরি হচ্ছেন বাকি ৭৫ শতাংশের হিসেব নিতে। তৃণমূল নেতাদের ঘিরে ধরে গ্রামের মানুষ স্লোগান দিচ্ছেন, কত পেলে আর কত খেলে, তার হিসেব দিতে হবে। যত মানুষ জাগছে, ততই পিসি আর ভাইপোর বুক কাঁপছে। 

সেলিম এদিন আত্মবিশ্বাসের সুরে বলেন, কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার লালঝান্ডার প্লাবন দেখছে বাংলা। প্রতিদিন কোনও না কোনও জনপদের মানুষ হাতে লাল ঝান্ডা তুলে নিচ্ছে। তৃণমূল সরকার এসেই নীল সাদা রঙ করে বামফ্রন্ট সরকারের অভিজ্ঞতা মানুষের মন থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল। মমতা ব্যানার্জি ভেবেছিলেন, বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে আইনের শাসন কী ছিল, পঞ্চায়েত কিভাবে গরিব মানুষের পক্ষে দাঁড়াতো, সরকার কি ভাবে দাঙ্গা হাঙ্গামা ঠেকাতো, সেই সমস্ত কিছু নীল সাদা রঙ করে ঢেকে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু এখন মানুষ ফের একবার বলা শুরু করেছেন, কিভাবে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে রাজ্যকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এখন পরিস্থিতির চাপে তৃণমূল নেতাদেরও বলতে হচ্ছে, বাম আমলে কি হত, কত ভালো ভাবে হত। 

সেলিম এদিন অভিযোগ করে বলেন, কালীঘাটের কাকুর নাম তো কয়েক মাস আগেই উঠে এসেছিল। এতদিন লাগল কেন তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালাতে? আর পিসির বাড়িতে কবে তল্লাশি চালানো হবে? তাঁর সংযোজন, পিসির সম্পত্তি খুঁজে পেতে ৬শো জায়গায় তল্লাশি চালাতে হবে ইডি-সিবিআইকে। 

মমতা ব্যানার্জি বিরোধী ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করছেন। এই অভিযোগ তুলে সেলিম বলেন, বিরোধী ঐক্যের একটি বৈঠকেও মমতা ব্যানার্জি অংশ নেন নি। দলের একজন দুইজনকে পাঠিয়ে ধরি মাছ না ছুঁই পানি অবস্থান নিয়েছে তৃণমূল। অথচ মমতা ব্যানার্জি নিজে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ’র সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। হাঁসি মুখে ছবি তুলেছেন। কিন্তু আজ কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত মমতা ব্যানার্জি। 

এর পাশাপাশি বিজেপিকে নিশানা করে তিনি বলেন, আমরা বলছি দুর্নীতি কান্ডে শুভেন্দু অধিকারীকেও জেরা করা হোক। তৃণমূলে থাকাকালীন তিনি নিজেও অজস্র দুর্নীতির অংশ ছিলেন। একইসঙ্গে ২ হাজার টাকা বাতিল প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, আদানীর অর্থনীতি ছাড়া মোদী কিছু বোঝেন না। সংসদীয় কমিটি বলেছিল, কালো টাকা ঠেকাতে নোটবন্দী কাজে আসে না। বাস্তবে তাই হচ্ছে। এখন নোটবন্দীর ব্যর্থতার দায় কী নরেন্দ্র মোদী নেবেন? কালো টাকা কীভাবে সাদা হল সেই তদন্ত করবেন? সেলিমের সংযোজন, আরএসএস, তৃণমূল এবং বিজেপির কাছে সবথেকে বেশি কালো টাকা রয়েছে।

অভিষেক ব্যানার্জির জেরা প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, কুন্তল ঘোষের চিঠির আগেই শহীদ মিনার ময়দানের সভা থেকে অভিষেক নিজে এই প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। সেলিম বলেন, নিয়োগ দুর্নীতির পাশাপাশি কয়লা পাচার কান্ডেও অভিষেককে জেরা করতে হবে।

সাম্প্রতিক আইন শৃঙ্খলার সমস্যা নিয়ে সেলিম বলেন, পুলিশ অপরাধীদের না ধরলে মানুষ পুলিশকেও তাড়া করছে। এগরার খাদিকুলে আগেও পাঁচ বার বিস্ফোরণ হয়েছিল। পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। তারফলেই এতবড় দুর্ঘটনা ঘটল। আমরা চাই না মানুষ আইন হাতে তুলে নিক। কিন্তু দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সাধারণ মানুষ কি করবেন? 

মদন মিত্র প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মক্ষেত্রে মমতা ব্যানার্জি যেই ব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন, তাতে তৃণমূলের একটা অংশেরও নাভিশ্বাস উঠছে। 

Comments :0

Login to leave a comment