‘‘বাড়তি উদ্যোমের সঙ্গে চার রাজ্যের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করেছে কংগ্রেস। আমাদের কর্মীরা মনপ্রাণ ঢেলে লড়াই চালিয়েছেন। আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই পরাজয় সাময়িক। আমরা পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে আগামী লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করব। ইন্ডিয়া মঞ্চের বাকি দলগুলিকে সঙ্গী করেই ময়দানে নামব আমরা।’’
রবিবার মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা এবং রাজস্থানের নির্বাচনের পরে এমন বার্তাই দিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে।
তিনি সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে লিখেছেন, ‘‘রাজস্থান, ছত্তিশগড় এবং মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনী ফলাফল নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য হতাশার। আমরা এই ফল থেকে শিক্ষা নেব। এই তিন রাজ্যে আমরা খুব তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়াব।’’
একইসঙ্গে কংগ্রেসকে সমর্থন করার জন্য তেলেঙ্গানার সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন খাড়গে।
চার রাজ্যে ফল ঘোষণার দিনই রাজনৈতিক মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’-র বৈঠক ডেকেছে কংগ্রেস। দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে ৬ ডিসেম্বর বৈঠক ডেকেছেন।
কংগ্রেসের সূত্র জানাচ্ছে, রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্য প্রদেশ, তেলেঙ্গানা এবং মিজোরামের ভোট মিটে যাওয়ার পর লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে নামতে চাইছিল দল। রাজ্যস্তরের নেতারাও সেভাবে এগনোর পক্ষপাতী ছিলেন।
জাতীয় স্তরে বিজেপি-কে হটানোর লক্ষ্যে এই মঞ্চে এসেছে ২৮টি রাজনৈতিক দল। তবে রাজ্যস্তরে পরিস্থিতি অনুযায়ী লোকসভা নির্বাচনের কৌশল স্থির হবে। কারণ ‘ইন্ডিয়া’ নির্বাচনী জোট নয়, রাজনৈতিক মঞ্চ।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্সে লিখেছেন, ‘‘মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানের জনাদেশ আমরা গ্রহণ করছি। বিচারধারার লড়াই জারি থাকবে।’’
একইসঙ্গে কংগ্রেসের উপর আস্থা রাখার জন্য তেলেঙ্গানার মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘‘ প্রজালু তেলেঙ্গানা বা মানুষের তেলেঙ্গানা গঠনের প্রতিশ্রুতি আমরা অবশ্যই পূরণ করব।’’
মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ এক্সে লিখেছেন, ‘‘মানুষ আমাদের বিরোধী আসনে বসার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা সেই দায়িত্ব পালন করব। মধ্যপ্রদেশের সবথেকে বড় ইস্যু হল যুব’দের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করা, কৃষকদের জীবনে স্বচ্ছলতা আনা। আমরা এখনও বলছি যে, মধ্যপ্রদেশের মানুষের উপর আমাদের পূর্ণ ভরসা রয়েছে।’’
কমলনাথ লিখেছেন, ‘‘সমস্ত পরাজিত কংগ্রেস প্রার্থীদের নিয়ে আমরা সমীক্ষা করব। আমাদের কী কী খামতি ছিল, কেন আমরা আমাদের কথা মানুষকে বোঝাতে পারলাম না, তা আমরা খুঁজে বের করব।’’
রাজস্থানের সদ্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট এক্সে লিখেছেন, ‘‘নির্বাচনে জয়ী সমস্ত কংগ্রেস প্রার্থীকে আমার অভিনন্দন। আমার আশা, আগামী দিনে আপনারা দলের বিচারধারা এবং রাজনৈতিক কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ চালিয়ে যাবেন। রাজস্থানের মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য আমরা যথার্থ বিরোধীর ভূমিকা পালন করব।’’
এদিনের জয়ের পরে নরেন্দ্র মোদী বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘‘ভাগাভাগির রাজনীতির মোকাবিলা করতে হবে। জবাবও দিতে হবে। একইসঙ্গে নিজেদের প্রতি জনগণের বিশ্বাসও অটুট রাখতে হবে।’’
মোদীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘুরিয়ে জাতিভিত্তিক জনগণনার দাবিকেই বিঁধেছেন মোদী। কংগ্রেস, সিপিআই(এম) সহ বিরোধীরা সারা দেশে জাতি ভিত্তিক জনগণনার দাবি তুলতে শুরু করেছেন। বিরোধীদের বক্তব্য, এই সমীক্ষা ছাড়া দেশের সমস্ত অংশের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থান সঠিক ভাবে বোঝা সম্ভব নয়। জাতি ভিত্তিক জনগণনা হলে বিজেপির ‘হিন্দু কনসোলিডেশন’ ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু সরাসরি সেই দাবি অগ্রাহ্য করা বিজেপির পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ঘুরিয়ে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মোদী।
একইসঙ্গে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করাচ্ছেন, জাতি ভিত্তিক জনগণনার পালটা হিসেবে প্রতিটি রাজ্যে গিয়ে জানুয়ারি মাসে উদ্বোধন হতে চলা রাম মন্দিরের প্রচার চালিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ এনে মেরুকরণের চেষ্টা করেছেন।
Comments :0