MOHUN BAGAN VS MUMBAI CITY FC

পালতোলা নৌকার আক্রমণে চূর্ণ-বিচূর্ণ মুম্বই

খেলা

durand cup mohun bagan indian football bangladesh army east bengal bengali news mumbai city fc গোল করার মুহূর্তে আনওয়ার আলি। ছবি মোহনবাগান সুপার জায়েন্ট’র অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত।

যুবভারতীর রং সবুজ মেরুন। অনবদ্য ফুটবল এবং অসাধারণ দলীয় সংহতিকে সঙ্গী করেই জয়ের পতাকা ওড়াল মোহনবাগান। যে ফুটবলে চোখ জুড়িয়ে যায়। রবিবার, ডুরান্ড কাপের হাইভোল্টেজ কোয়ার্টার ফাইনালে মুম্বই সিটি এফসিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল মোহনবাগান। 

রবিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মুখোমুখি হয় দুই দল। প্রথম মিনিট থেকে শুরু হয় সমানে সমানে টক্কর। হাড্ডাহাড্ডি এই ম্যাচে, প্রথম থেকেই আক্রমণ শুরু করে বাগান শিবির। 

জোরালো গতির কামিংসকে আটকাতে তখন হিমশিম অবস্থা মুম্বই ডিফেন্সের। ফলস্বরূপ, হঠাৎই ভুল করে বসল তাঁরা। কামিংসকে টপ বক্সে ফাউল করেন বিপক্ষ দলের গোলরক্ষক লাচেনপা। 

সেই জায়গা থেকেই, ম্যাচের ৯ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন জেসন কামিংস। আর তারপরই গোটা স্টেডিয়াম জুড়ে মোহনবাগান সমর্থকদের গর্জন শুরু। ম্যাচ শেষের পরেও দীর্ঘক্ষণ গ্যালারি থেকে শোনা গিয়েছে সেই গর্জন। 

স্লোগান, হাততালি এবং গলা ছেড়ে সবুজ মেরুন সমর্থকদের গান আলাদাই পরিবেশ তৈরি করে। এই ম্যাচে বিভিন্ন ফ্যান ক্লাব সহ বাগান সমর্থকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

হুগো বুমোস, সাহাল, সাদিকু এবং মনবীররা বারবার আক্রমণ তুলে আনছিলেন বিপক্ষ বক্সে। বলা যেতে পারে, পুরো মাঠ জুড়ে খেলছিল সবুজ মেরুন ব্রিগেড। সেইসঙ্গে, সজাগ ছিল রক্ষণভাগও। কিন্তু হাল ছাড়েনি মুম্বই সিটি এফসি।

পাল্টা অ্যাটাকে উঠে আসে তাঁরাও। 

আর সেই সুবাদেই, ম্যাচের ২৮ মিনিটে আলবার্তো নোগুয়েরার মাইনাস থেকে গোল করে মুম্বইকে ম্যাচে ফেরান পেরেরা দিয়াজ। কিন্তু আজ যেন হার না মানা মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামে ফেরেন্দোর ছেলেরা। 

ম্যাচের ৩০ মিনিটে বুমোসের সেন্টার থেকে মনবীরের দুরন্ত হেডে ২-১ ব্যবধানে লিড নেয় মোহনবাগান। শুধু তাই নয়, প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার একটু আগে মনবীরের শট বিপক্ষ ডিফেন্ডারের পায়ে না লাগলে ব্যবধান আরও বাড়তে পারত। 

শেষপর্যন্ত ফার্স্ট হাফ শেষ হয় ২-১ ফলাফল নিয়েই। 

এদিন দুই কোচের ট্যাকটিকাল মুভে টানটান উত্তেজনার একটি ফুটবল ম্যাচ দেখল কলকাতা। পেন্ডুলামের মতো ম্যাচ এদিক থেকে ওদিকে দুলছিল ক্রমশই। 

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই দলে একটি পরিবর্তন করে মুম্বই। আকাশ মিশ্রর বদলে মাঠে আসেন বিক্রমপ্রতাপ সিং। ম্যাচের ৫৮ মিনিটে, বাগানের আশিক কুরনিয়ানের মাইনাস থেকে পাওয়া বলে আর্মান্দো সাদিকুর শট একটুর জন্য বাইরে না গেলে ফলাফল বদলে যেতে পারত। কিন্তু সবুজ মেরুন ঝড় যে তখনও থামেনি। 

ম্যাচের ৬৭ মিনিটে, আশিক কুরনিয়ানের ক্রস থেকে হেডে দুর্দান্ত গোল করে যান আনোয়ার আলি। সেই সুবাদেই মোহনবাগান এগিয়ে যায় ৩-১ ব্যবধানে। 

এরপরই দলে দুটি পরিবর্তন করেন সবুজ মেরুন হেডস্যার। সাদিকুর বদলে মাঠে আসেন দিমিত্রি পেত্রাতোস এবং সাহাল আবদুল সামাদের পরিবর্তে মাঠে আসেন গ্লেন মার্টিন্স। কিছুক্ষণ পর, কামিংসের জায়গায় মাঠে নামেন লিস্টন কোলাসো। 

অন্যদিকে, মুম্বই সিটি এফসি কোচ লাচেনপাকে তুলে নামান অপর গোলকিপার মহম্মদ নাওয়াজকে। তিন কাঠির প্রহরী বদল হলেও, পালতোলা নৌকার ক্রমাগত আক্রমণে তখন নাভিশ্বাস উঠছে মুম্বই ডিফেন্সের। 

ম্যাচ শেষের একটু আগে, হুগো বুমোসের পরিবর্তে মাঠে নামেন কিয়ান নাসিরি। মুম্বই সিটি এফসির উইং-প্লেকে পুরোপুরি আটকে দিয়েই বাজিমাৎ করল মোহনবাগান। শুধু তাই নয়, মুম্বইয়ের হয়ে খেলা ভারতের জাতীয় দলের মিডফিল্ডার ছাংতেকে রীতিমতো বোতলবন্দী করে ফেলেন সবুজ মেরুন ফুটবলাররা। 

ম্যাচ শেষে ধন্যবাদ জানাতে সমর্থকদের দিকে এগিয়ে যান সবুজ মেরুন ফুটবলাররা। ভাইকিং ক্ল্যাপ সহ  হাত তুলে ফুটবলারদের অভিবাদন জানান সমর্থকরা। 

ম্যাচের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এসে মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরেন্দো জানান, ‘‘মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে জয় পেয়ে দারুণ লাগছে। ছেলেরা নিজেদের প্রমাণ করতে পেরেছে। এইবার পরবর্তী ম্যাচে ফোকাস করতে চাই।’’

এই ম্যাচ জয়ের ফলে ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল বাগান। সেমিফাইনালে মোহনবাগানের প্রতিপক্ষ এফসি গোয়া। অপর সেমিফাইনালে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের মুখোমুখি হবে ইস্টবেঙ্গল।

 

Comments :0

Login to leave a comment