বকরি ঈদের জন্য নিজের ফ্ল্যাটে ২টি ছাগল কিনে নিয়ে এসেছিলেন মুম্বই শহরতলীর বাসিন্দা মহসীন শেখ। সেই ঘটনাকে ঘিরে কার্যত খণ্ডযুদ্ধ বাঁধল থানের মীরা রোডের একটি বহুতল আবাসনে। মহসিনের পরিবারের অভিযোগ, ছাগল দেখে ক্ষেপে যান আবাসনের বেশ কিছু বাসিন্দা। তাঁরা মহসিনকে বাধা দেন ছাগলগুলিকে নিজের ফ্ল্যাটে ঢোকাতে। ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দেয় জড়ো হয়ে যাওয়া একাংশ।
পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশকে ঘটনাস্থলে হাজির হতে হয়। অভিযোগ, পুলিশের উপরেও চড়াও হয় একাংশ। তাঁরা মহসীন এবং তাঁর পরিবারকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় বলে অভিযোগ। পরবর্তীকালে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। মহসিনকে বাধ্য করা হয় ছাগল দুটিকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলতে। যদিও পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে আবাসনের ১১ বাসিন্দার বিরুদ্ধেও অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
আবাসনের নিয়মাবলিতে লেখা রয়েছে কোনও গবাদি পশু রাখা যাবে না। মহসিন সেই নিয়ম ভেঙেছেন। তাই তাঁকে বাধা দেওয়া হয়েছে। এই মর্মে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়েছে পুলিশকে। কিন্তু বাধা দেওয়ার জন্য ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান কিংবা হনুমান চালিশা পাঠের কী সম্পর্ক, সেই বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি অভিযোগকারীরা।
অপরদিকে মহসিনের বক্তব্য, ২০২২ সালের বকরি ইদের সময় আবাসনের মালিক মুসলিম বাসিন্দাদের জন্য আলাদা জায়গা করে দিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁরা পশুগুলিকে রেখেছিলেন। মাংস কাটার ব্যবস্থা যদিও অন্যত্র হয়েছিল। কিন্তু আবাসনের বেশ কিছু বাসিন্দা এই ব্যবস্থায় আপত্তি জানান। মূলত তাঁদের চাপেই নিয়মাবলীতে বদল আনা হয়। বর্তমানে সেই নিয়মাবলী হাতিয়ার করেই একটি মুসলিম পরিবারকে ধর্মীয় রীতি পালনে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
মহসিনের পরিবারের সদস্যরা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, আবাসনের বাকি বাসিন্দাদের থেকে ন্যূনতম সহযোগিতা না পেয়ে তাঁরা ঠিক করেন ছাগল দুটিকে তাঁদের ঘরের মধ্যেই রাখা হবে। কিন্তু তাতেও আপত্তি জানান বেশ কিছু বাসিন্দা।
মহসিন শেখ জানিয়েছেন, আবাসনের মধ্যে মাংস কাটার ব্যবস্থা কখনই তাঁরা করেন না। এবারেও সেরকম কিছু করার ইচ্ছা তাঁদের ছিল না। অন্যত্রই হবে। কিন্তু তার আগে প্রাণীগুলিকে নিজের বাড়িতেও রাখার ক্ষেত্রেও সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে।
২০১৪’তে কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার আসীন হওয়ার পর থেকে মুসলিমদের ধর্মীয় রীতি পালন ঘিরে বিদ্বেষ ছড়ানের ঘটনা পরপর সামনে আসছে। সামাজিক ভাবেও বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে। ছোট বিবাদকে ধর্মীয় ভাগাভাগির উপাদান করে ফেলা হচ্ছে। গো মাংস খাওয়ার জিগির ছড়িয়ে বায়ুসেনা জওয়ানের পিতা মহম্মদ আখলাককে হত্যা করা হয় ২০১৫’তে। উত্তর প্রদেশের দাদরির ওই ঘটনাকে উগ্র হিন্দুত্ববাদী শক্তি বিভিন্ন সময়ে ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
Comments :0