লোকসভায় ঢুকে স্মোক বোম্ব ব্যবহারকারী ২ যুবকের পরিচয় সামনে এসেছে। একাধিক সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, তাঁদের নাম সাগর শর্মা এবং মনোরঞ্জন ডি। জানা যাচ্ছে সাগরকে লোকসভার দর্শক গ্যালারিতে ঢোকার সুপারিশপত্র দিয়েছিলেন কর্ণাটকের মাইসোরের বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহা। অপরদিকে মনোরঞ্জন ডি পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার বলে উঠে এসেছে।
বুধবার ছিল ২০০১ সালে সংসদ ভবন হামলার ২২তম বর্ষপূর্তি। তারমাঝেই দেখা যায় ১ যুবক লোকসভার দর্শক গ্যালারি থেকে লাফ দিয়ে সংসদের মধ্যে প্রবেশ করেন। লোকসভা টিভি’র সম্প্রচারে গোটা দৃশ্য ধরা পড়ে। দেখা যায় সেই যুবক জুতোর ভিতর থেকে স্মোক বোম্ব ব্যবহার করে গোটা হলজুড়ে ঝাঁঝালো হলুদ ধোঁয়া ছড়িয়ে দিতে শুরু করেন।
অপর যুবক গ্যালারির রেলিং ধরে ঝুলতে থাকেন। সংসদের হলের মধ্যে ঢুকে পড়া যুবককে ধরতে তৎপর হন সাংসদরা। কাবাডি খেলার মত করে এক বেঞ্চ থেকে অপর বেঞ্চে লাফিয়ে স্পিকারের দিকে এগোতে থাকেন এক যুবক। কিছুক্ষণের চেষ্টায় তাঁকে ধরে ফেলেন উত্তর প্রদেশের বিজনোরের বিএসপি সাংসদ মালুক নাগর এবং রাজস্থানের নাগৌরের আরএলপি’র সাংসদ হনুমান বেনিওয়াল।
এই ঘটনার জেরে আতঙ্কিত হয়ে ছুটোছুটি শুরু করে দেন সাংসদরা। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ ডিম্পল যাদব জানিয়েছেন, ‘‘কার্যত একে অপরকে ডিঙিয়ে হলের বাইরে বেরিয়েছি আমরা। পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।’’
এর কিছু পরে লোকসভার মার্শালরা এসে দুই যুবককে আটক করেন। দু’জনে দিল্লি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরই মাঝে লোকসভার বাইরে এক মহিলা এবং এক যুবক স্মোক বোম্ব ফাটান। তাঁদেরও গ্রেপ্তার করেছে দিল্লি পুলিশ। এই দুজনের নাম নীলম এবং আনমোল শিন্ডে। নীলম হরিয়ানার বাসিন্দা এবং আনমোলের বাড়ি মহারাষ্ট্রের লাতুরে।
ধৃতদের ‘জয় ভীম’ স্লোগান দিতে শোনা যায়। একইসঙ্গে মোদী সরকারের ‘তানাশাহি’ বা স্বৈরাচারী আচরণের বিরোধীতাও করেন তাঁরা। একইসঙ্গে মণিপুরের মহিলাদের জন্য ন্যায় বিচারের দাবি জানিয়েও স্লোগান দিয়েছেন তাঁরা।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বিজেপির বিরোধীতা শুরু করেছে বিরোধীরা। কংগ্রেস সাংসদ কার্তি চিদাম্বরমের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি বলেছিল নতুন সংসদ ভবনে বেনজির নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। তারপরেও এই ঘটনা ঘটল। এরথেকে স্পষ্ট, নতুন সংসদ ভবনে সাংসদদের নিরাপত্তার ছবিটা ঠিক কি।’’
পেশার সূত্রে নিয়মিত লোকসভায় যেতে হয় সাংবাদিকদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, ৫-৬ দফায় নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে তবেই সংসদের মূল কক্ষে ঢোকা যায়। পেন, মানিব্যগের খুচরো পয়সা, মোবাইল সহ বহু জিনিস নিয়ে ঢোকা যায়না সদনের ভিতরে। দর্শকাসনে বসতে গেলে কোনও না কোনও সাংসদের সুপারিশ লাগে। সুপারিশ পত্রে সাংসদের সই এবং তাঁর রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিতে হয়। এত দফার সুরক্ষা বলয় থাকার পরেও এই ঘটনা ঘটল। এরফলে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
বিরোধীরা জানাচ্ছেন, যাচাই না করে দর্শক গ্যালারিতে প্রবেশের সুপারিশ করেননা সাংসদরা। তারপরেও এই ঘটনা ঘটেছে। নাম জড়িয়েছে মাইসোরের বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহার। তাঁকে বহিষ্কারের দাবিও ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত করার ভার দেওয়া হয়েছে স্পেশাল সেলের উপর। এর পাশাপাশি সন্ত্রাসদমন শাখার অফিসাররাও ধৃতদের জেরা শুরু করেছেন।
Comments :0