National Film Award

বিদ্বেষের ছবিই পেল জাতীয় সংহতির সেরা শিরোপা!

জাতীয়

সম্পূর্ণভাবে প্রচারধর্মী একটি ছবিকে জাতীয় সংহতির শিরোপা দেওয়া হলো! বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রী পরিচালিত বিতর্কিত ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-কে নার্গিস দত্ত পুরস্কারে ভূষিত করা হলো ২০২১ সালের সেরা জাতীয় সংহতিমূলক কাহিনির জন্য। অথচ গোয়ায় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে কীভাবে এমন একটি প্রচারধর্মী চলচ্চিত্রকে প্রতিযোগিতামূলক বিভাগে বাছাই করা হলো তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারকমণ্ডলীর প্রধান ইজরায়েলের নাদাভ লাপিদ। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ একটি প্রচারমূলক, কুরুচিপূর্ণ ছবি, যা মর্যাদাপূর্ণ একটি চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে দেখানো উচিত হয়নি। অথচ তাকেই সেরা জাতীয় সংহতিমূলক ছবি হিসাবে বিবেচিত করলেন বিচারকরা! এমনকি বিভাজনের পক্ষে নির্মিত কোনও ছবিকে কীভাবে জাতীয় সংহতিমূলক সেরা কাহিনীচিত্র হিসাবে বেছে নেওয়া হলো, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। একে চলচ্চিত্রের রাজনীতিকরণ বলেই অভিযোগ করেছে সিনেমাজগতের একাংশ।


‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস্‌’-এ গত শতাব্দীর নয়ের দশকে কাশ্মীরী পণ্ডিতরা কীভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন তা নিয়ে অর্ধসত্য ও অনেকটা মিথ্যার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা সিনেমা। ছবিটিতে সরাসরি বলা হয়েছে, এই আক্রমণের জন্য কাশ্মীরের মুসলমান সমাজ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি দায়ী, যারা সংগঠিতভাবে হিন্দুদের আক্রমণ ও হত্যা করে তাঁদের কাশ্মীর ছাড়তে বাধ্য করে। কোনও রাখঢাক না রেখেই উগ্র হিন্দুত্বের পক্ষে প্রচার চালানো হয়েছে ছবিটির কাহিনীজুড়ে। কাশ্মীরী পণ্ডিতদের আক্রান্তের কথা বলা হলেও সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত কত সংখ্যক নিরাপরাধ কাশ্মীরী মুসলমান বা শিখ সেখানে সশস্ত্র বাহিনীর হাতে প্রাণ দিয়েছেন, ঘরছাড়া হয়েছেন বা জেলে রয়েছেন, সে সম্পর্কে ছবিতে কোনও আলোকপাত করা হয়নি। অর্থাৎ বহু পুরানো কাশ্মীর সংঘাতকে একাধিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হলেও এই ছবিটি পুরোপুরিভাবে একটি নির্দিষ্ট পক্ষের হয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
একারণেই ছবিটিকে ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধে সেই সময়। মুক্তচিন্তার চলচ্চিত্রপ্রেমীরা এই ছবির ভাবনাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, আপত্তি জানান প্রচারধর্মী এমন একটি ছবিকে সরকারিভাবে মদত জোগানোর বিরুদ্ধে। তাঁরা একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছবি বলে অভিযোগ করেন। সিনেমার কাহিনীর মাধ্যমে মেরুকরণের চেষ্টা, বিদ্বেষমূলক ছবি বলেও অভিযোগ ওঠে নানা মহল থেকে। তা সত্ত্বেও দেশের শাসকগোষ্ঠী ছবিটির পক্ষে জোরদার প্রচার চালিয়ে যায়। এমনকি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ওইভাবে বলার জন্য উগ্র হিন্দুত্ববাদী বাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে পড়তে হয় নাদাভ লাপিদকে। এমন এক ‘একচোখা’ ছবি কীভাবে জাতীয় সংহতির শিরোপা পেয়ে গেল তাকে ঘিরে এখন আবার নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। যেখানে বিভেদের কথা আছে তাকে কেন জাতীয় সংহতির জন্য পুরস্কৃত করা হলো, প্রশ্ন করছেন অনেকেই।


বৃহস্পতিবারই ৬৯তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। সেরা অভিনেত্রী হিসাবে এবারই প্রথম সেরার স্বীকৃতি পেলেন আলিয়া ভাট এবং কৃতি শ্যারন। আলিয়া পুরস্কার পেয়েছেন ‘গাঙ্গুভাই কাথিয়াওয়াড়ি’-তে অভিনয়ের জন্য। কৃতি শ্যারনের পেলেন ‘মিমি’র জন্য। দুটি ছবিই নারীকেন্দ্রিক। সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেলেন ‘পুষ্পা’ খ্যাত অল্লু অর্জুন। সেরা ছবি হিসাবে জাতীয় পুরস্কার পেল আর মাধবন পরিচালিত, অভিনীত, প্রযোজিত ‘রকেট্রি: দ্য নাম্বি এফেক্ট’। এক বিজ্ঞানীর জীবনী অবলম্বনে তৈরি এই ছবি। সেরা জনপ্রিয় ছবি হিসাবে জাতীয় পুরস্কার পেল ‘আরআরআর’।  ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ ছবির সৌজন্যে সেরা সহ-অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার পেলেন পল্লবী জোশী। সেরা সহঅভিনেতা হিসাবে জাতীয় পুরস্কার অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠীর হাতে উঠল ‘মিমি’ ছবির জন্য। সেরা পরিচালক হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে মারাঠা ছবি ‘গোদাবরী’র নিখিল মহাজনকে। সেরা বাংলা ছবির সম্মান পেয়েছে রাজদীপ পাল এবং শর্মিষ্ঠা মাইতি পরিচালিত ‘কালকক্ষ’।


সেরা জনপ্রিয় ছবি হিসাবে যেমন জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে ‘আরআরআর’, তেমনই অ্যাকশন ডিরেকশন, কোরিয়োগ্রাফি এবং স্পেশাল এফেক্টস বিভাগেও সেরার স্বীকৃতি বাগিয়ে নিয়েছে এই ছবি। একাধারে ৬টি পুরস্কার জিতেছে। সেরা শিশু শিল্পী হয়েছে ‘ছেলো শো’র জন্য ভাবিন রাবড়ি। ‘পুষ্পা’র সঙ্গীত পরিচালনার জন্য সেরা শিরোপা জুটেছে দেবী শ্রী প্রসাদের, আবার শ্রেষ্ঠ আবহ সঙ্গীত পরিচালক হয়েছেন ‘আরআরআর’র এম এম কেরাবানি। আবার ‘আরআরআর’-এ গান গেয়ে পুরস্কার ছিনিয়ে নিলেন কালা ভৈরব, তেমনই সেরা মহিলা কণ্ঠ হিসাবে ‘ইরাবিন নিজাল’র জন্য সম্মান পেলেন শ্রেয়া ঘোষাল। সেরা সম্পাদনার পুরস্কার পেয়েছেন ‘গাঙ্গুভাই কাথিয়াওয়াড়ি’র জন্য সঞ্জয় লীলা বনশালী। বিশেষ জুরি সম্মান পেয়েছেন ‘বিষ্ণুবর্ধন’র জন্য শের শাহ।
বাংলার ঘরেও বেশ কয়েকটি পুরস্কার এসেছে সেরা আঞ্চলিক ভাষার সম্মান ছাড়াও। সেরা সাউন্ড ডিজাইনার হয়েছেন ‘ঝিল্লি’র জন্য অনীশ বসু, ‘সর্দার উধম’র সিনেমাটোগ্রাফির ক্ষেত্রে অভীক মুখোপাধ্যায়, নন-ফিচার বিভাগে সেরা সম্পাদনার জন্য অভ্র ব্যানার্জি।
 

Comments :0

Login to leave a comment