SSC Scam Folk Singer

চাকরি দুর্নীতির গান: মাথাভাঙার ঘরছাড়া লোকশিল্পীর পাশে থাকার আশ্বাস বিকাশ ভট্টাচার্যের

জেলা

মাথাভাঙার জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত শিল্পী মণীন্দ্র বর্মন।

জয়ন্ত সাহা: মাথাভাঙা

চাকরিহারাদের নিয়ে গান বেঁধে পুলিশের বিষনজরে পড়লেন মাথাভাঙার লোকশিল্পী। 
এখন তিনি ঘর ছেড়ে আত্মগোপন করে রয়েছেন। ঘটনা জানতে পেরেই শিল্পীর পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিলেন আইনজীবি বিকাশ ভট্টাচার্য।
চাকরিহারা শিক্ষকদের নিয়ে দিন কয়েক আগে গান বেঁধে সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন মাথাভাঙার নয়ারহাট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পানিগ্রামের লোকসঙ্গীত শিল্লী মণীন্দ্র বর্মন। উত্তরবঙ্গে তিনি মণীন্দ্র গিদাল নামেই পরিচিত।
সেই জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত শিল্পী এখন পুলিশের ভয়ে, বাড়ি তো বটেই, এলাকা ছেড়ে আত্মগোপন করতে বাধ্য হয়েছেন! 
অভিযোগ, পুলিশ তাঁর বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়েছে ওই গান ডিলিট করে দিতে হবে সোশাল মিডিয়া থেকে। পুলিশ বাড়ি গিয়ে গত ১২ এপ্রিল থেকে হুমকি দিচ্ছে।
আত্মগোপনে থাকা শিল্পী সোশাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে বলেছেন, ‘‘গত ১০ এপ্রিল সোশাল মিডিয়ায় আপলোড করি। সেই গানটি ভাইরাল হয়। এখন পর্যন্ত ৬ কোটি মানুষ গানটি শুনেছেন এবং দেখেছেন। এরপরই ১৩ এপ্রিল থেকে আমার বাড়িতে পুলিশি উৎপীড়ন শুরু হয়। পুলিশ যখন প্রথমবার আমার বাড়িতে আসে তখন বাড়িতে ছিলাম না। পুলিশ বাড়ির লোকজনকে বলে মণীন্দ্র কোথায়? ওই গান ডিলিট করতে হবে। মণীন্দ্রকে থানায় যেতে হবে। বাড়িতে যারা ছিল তারা পুলিশকে বলে, ও কী অপরাধ করেছে তার নোটিশ দিন। এর জবাব দেয়নি ওই পুলিশ।’’ 
লোকশিল্পী বলেছেন, ‘‘আমি নিশ্চিত ওই গানে কাউকে আঘাত করি নি। এখন আমি প্রচণ্ড ভাবে চিন্তাগ্রস্ত ও হতাশাগ্রস্ত। ঘন ঘন পুলিশ এসে আমায় খুঁজছে যেন আমি কোনও বড় ক্রিমিনাল। যদি কোনও এফআইআর হয়ে থাকে তার কপি আমায় দেওয়া হোক। আমি কেন গান ডিলিট করব। কিছু নেতা (তাদের নাম আমি বলছি না) বাড়ি এসে হুমকি দিচ্ছে। আমার বাবা অসুস্থ। এই মুহূর্তে তাঁর পাশে থাকতে পারছি না।’’
তিনি ওই ভিডিওতে সবার কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আবেদন জানান। এই পোস্টেই বিকাশ ভট্টাচার্য কমেন্টস লিখে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘আপনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জানেন। আপনাকে নিয়ে সত্যিই পশ্চিমবঙ্গবাসী খুবই গর্বিত। আপনি আনন্দে গান গেয়ে যান। আবার যদি পুলিশ আপনাকে বিরক্ত করে আপনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে দ্বিধা করবেন না।"
বৃহস্পতিবার সকালে ‘গণশক্তি’-কে বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমি এর মধ্যে ওই শিল্পীর পোস্টে কমেন্ট করেছি। ফের পুলিশ যদি ওঁকে বিরক্ত করে উনি যেন আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’’ 
ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এটা তো আসলে হিটলারি শাসন চলছে। একজন একটি গান করেছে সেজন্য পুলিশ তাকে ডেকে পাঠাচ্ছে! পুলিশের তো এরকম কোনও এক্তিয়ার নেই। উনি বাড়িতেই থাকুন। ফের পুলিশ বাড়িতে গেলে উনি লিখিত দিন। বিষয়টি বুঝে নেওয়া হবে।"
প্রতিবাদী লোক শিল্পী মনীন্দ্র বর্মন এর আগেও সোশাল মিডিয়ায় এরকম প্রতিবাদি গান গেয়েছেন। প্রতিটি গান পোস্ট করতেই লক্ষ লক্ষ ‘ভিউ’ পেয়েছেন। এবার তিনি লিখেছিলেন, "ও পিসি যা খুশি তাই করছো চুরি, রাজ্যটা তোর বাপের নাকি!"
এই গান ছড়াতেই মাথাভাঙা থানার পুলিশ পর পর দু’বার তাঁর বাড়িতে গিয়ে পোষস্ট ডিলিট করার জন্য হুমকি দিয়েছে বলে পরিবারের অভিযোগ। শিল্পীর বাবা নারায়ণ চন্দ্র বর্মন সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘পুলিশ বাড়িতে এসে শাসিয়ে গেছে। কেন পোস্ট ডিলিট করতে হবে? কেনই বা ছেলেকে থানায় গিয়ে দেখা করতে হবে সেটা বুঝতে পারছি না।তাঁর জিজ্ঞাসা, আমাদের রাজ্যে কী গান গাওয়া অপরাধ?’’
এদিকে পুলিশ দু-দু’বার শিল্পীর বাড়িতে গেছে সেটা নাকি জানেনই না মাথাভাঙার অতিরিক্ত পুলিস সুপার সন্দীপ গড়াই। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘কোন পুলিশ মণীন্দ্রের বাড়িতে গিয়েছিল সেটা খোঁজ নেব। আইনত কোন অপরাধ না করলে নির্ভয়ে তিনি বাড়িতে থাকতে পারেন।’’
এদিকে প্রতিবাদী লোক শিল্পীকে পুলিসী হেনস্থার খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোশাল মিডিয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। সরব হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী ও লোকশিল্পী সংঘের কোচবিহার শাখা। সংগঠনের জেলা সম্পাদক ধনঞ্জয় রাভা বিবৃতিতে বলেন, ‘‘একজন প্রতিবাদী লোক শিল্পীর ওপর পুলিসের নগ্ন আক্রমণের আমরা নিন্দা করছি। ওই শিল্পীর পাশে থাকবে সংগঠন।’’

Comments :0

Login to leave a comment