Farmer Suicide

বৃষ্টিতে চাষে ক্ষতি, ফের রাজ্যে আত্মঘাতী দুই কৃষক

রাজ্য


সদ্য আলু লাগানো ক্ষেত নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়ার হতাশায় শুক্রবার রাতে আত্মহত্যা করলেন একজন কৃষক। মৃত কৃষকের নাম রূপ সনাতন ঘোষ(৪৫)। পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলী থানার নিমদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের ছাতনি উত্তর পাড়ার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। শনিবার কালনা মহাকুমা হাসপাতালে মৃতদেহের ময়না তদন্ত হয়। পরিবারে একমাত্র রোজগেরে ছিলেন তিনি। তাঁর পরিবারে রয়েছেন মা,  স্ত্রী এবং দুই ছেলে মেয়ে। মেয়ে রিনি ঘোষ কাটোয়া কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ছেলে রবীন ঘোষ স্থানীয় স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র।
টানা কয়েকদিনের নিম্নচাপের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলার  হাজারো কৃষক। বিঘা বিঘা জমি এখনও জলের তলায় ডুবে রয়েছে। এখই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন হুগলী জেলার খানাকুল থানার অন্তর্গত পিলখাঁ কয়েত তলা এলাকার বাসিন্দা তরুণ পালুই(৪৭)। তিনিও আত্মঘাতী হয়েছেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন ক্ষতির পরিমাণ সহ্য করতে না পেরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন এই দরিদ্র এই কৃষক। 
এদিন রূপ সনাতন ঘোষের দাদা অমল ঘোষ জানিয়েছেন, ‘‘ভাই পাঁচ বিঘে জমিতে চাষ করে সংসার চালাতো।  ধার দেনা করে দু বিঘা জমিতে উন্নত আলু বীজ দিয়ে চাষ করেছিল। তাছাড়াও ধান,শর্ষে এবং শসা চাষ ছিল তাঁর। আলু চাষ করতে গিয়ে ইতিমধ্যেই ভাইয়ের ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। কিন্তু সম্প্রতি হওয়া নিম্মচাপের বৃষ্টিতে তাঁর চাষের সমস্ত জমিতে জল জমে যায়। শুক্রবার মাঠ থেকে রূপ সনাতন ঘুরে আসার পর সে হতাশ হয়ে পড়ে। তারপর সকলের অজান্তে  বাড়ির নিকটবর্তী একটি আমগাছে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়েন তিনি।’’
যদিও প্রশাসনের তরফে আত্মহত্যার ভিন্ন কারণ দেওয়া হচ্ছে। কালনার মহকুমা শাসক রুপম আগারওয়াল জানান, ‘‘আমি স্থানীয় প্রধানের মুখে আত্মহত্যার কারণ অন্য শুনেছি। তিনি বলেছেন,উনি চাষ করতে গিয়ে নয়, পারিবারিক কারণেই আত্মহত্যা করেছেন। ইতিপূর্বেও দেখা গেছে, ঋণের দায়ে কৃষকের আত্মঘাতী হওয়ার কথা উঠলেই সেখানে সরকারি ভাবে তদন্ত করানো হয়। আর তার বেশিরভাগই রিপোর্ট আসে এই বলে যে, ঋণের দায়ে নয়, তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন পারিবারিক কলহের জেরে’’।

একই ছবি খানাকুলেও। পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, ‘‘ধার করে জমিতে ধান চাষ করেছিলেন তরুণ পালুই। কিন্তু হটাৎ করেই টানা ৩ দিনের নিম্নচাপ যেন সব অঙ্কই বদলে দিয়েছিলে তরুণের জীবনে। তাঁর প্রায় আট বিঘা জমি  জলের তলায় ডুবে রয়েছে।  জমি থেকে কোনও ফসল তুলতে পারেননি তরুণ। বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি হয়ে বাড়ির সামনে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন।’’
সারা ভারত কৃষক সভার পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি শুকুল শিকদারের বক্তব্য, ‘‘ফসলের দাম না পেলে কৃষকরা চাষ করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন, নিরাশ হবেন। ইতিমধ্যেই কয়েক লক্ষ কৃষক জমি হারিয়ে ক্ষেতমজুর বা অসংগঠিত শ্রমিকে পরিণত হয়েছেন।  নীতি পরিবর্তন না করলে শুধু কৃষক বা কৃষিক্ষেত্রই নয় , বিপদাপন্ন হবে সমস্ত মানুষের জীবনই। তাই উদারর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম ছাড়া কৃষি রক্ষার লড়াই সফল হবে না।’’

 

Comments :0

Login to leave a comment