HOMO NALEDI

খোঁজ মিলল বিশ্বের প্রাচীনতম মানব কবরের

আন্তর্জাতিক

HOMO NALEDI HOMO SAPIENS HUMAN CIVILIZATION BENGALI NEWS

দীর্ঘ সময় ধরেই পৃথিবীর বুকে একাধিক মানব প্রজাতি বসবাস করেছে। বৈজ্ঞানিকরা মনে করেন, বর্তমান সময় থেকে ১ লক্ষ বছর আগে নিয়েন্ডারথাল প্রজাতির মানুষকে পরাজিত করে হোমো সেপিয়েন্স প্রজাতি। তারপর থেকে বিশ্বের বুকে একছত্র দাপট এই হোমো সেপিয়েন্সের। আধুনিক মানুষ হোমো সেপিয়েন্স থেকেই বিবর্তিত। 

সাধারণত মনে করা হত, নিজের গোষ্ঠীর মৃত কোনও ব্যক্তিকে যত্ন করে কবর দেওয়ার মতো জটিল বৌদ্ধিক কাজ করার ক্ষমতা কেবলমাত্র হোমো সেপিয়েন্স এবং কিছু ক্ষেত্রে নিয়েন্ডারথাল মানুষের ছিল। বাকি প্রজাতির মানুষের সেই বৌদ্ধিক প্রতিভা ছিল না। সাম্প্রতিক এক আবিষ্কারের পরে সেই ধারণা সম্পূর্ণ ভাবে বদলে গিয়েছে। একইসঙ্গে মানব সভ্যতার বিবর্তনের পাঠ নতুন করে লেখার প্রস্তুতি নিতেই হবে বিজ্ঞানীদের। একই সঙ্গে এই আবিষ্কার প্রমাণ করল বিবর্তনবাদের যথার্থতা। 

সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি কবরের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা। মনে করা হচ্ছে, পৃথিবীর বুকে এটিই কোনও মানব গোষ্ঠীর দ্বারা সংগঠিত আদিমতম কবর। 

সোমবার সেই আবিষ্কারের কথা গোটা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন মার্কিন গবেষক লি বার্গার। তিনি জানান, হোমো নালেডি নামে একটি প্রাচীন মানব প্রজাতির কবরের সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা। এই কবর ব্যবস্থা হোমো সেপিয়েন্সদের কবর ব্যবস্থার থেকে অন্ততপক্ষে ১ লক্ষ বছর প্রাচীন। এবং তাঁরফলে বিবর্তনবাদের ইতিহাস নতুন করে লেখার সময় এসেছে। 

দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী জোহানেসবার্গের ২৫ মাইল উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত ক্রেডেল অফ হিউম্যান কাইন্ড উপত্যকা। এই উপত্যকায় মানব সভ্যতার বহু প্রাচীন নিদর্শনের খোঁজ মেলায় এটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা দিয়েছে ইউনেস্কো। এই উপত্যকার একটি ভূগর্ভস্থ গুহায় হোমো নালেডিদের কবরটির হদিস মিলেছে। 

লি’ বার্গার এবং তাঁর গবেষক দল ২০১৫ সালে প্রথম হোমো নালেডি’র অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। এই প্রজাতির আদিম মানুষের খুলি হোমো সেপিয়েন্সের এক তৃতীয়াংশ ছোট। স্বাভাবিক ভাবেই মনে করা হয়, তাঁদের বৌদ্ধিক বিকাশের স্তরও হোমো সেপিয়েন্সের তুলনায় অনেকটাই স্তিমীত ছিল। 

এতদিন গবেষক মহলের ধারণা ছিল, হোমো নালেডি মূলত গাছে চড়তে এবং ছোটো খাটো প্রাণী শিকার করার ক্ষমতা রাখত। এর থেকে জটিল কাজ করার বৌদ্ধিক ক্ষমতা এই প্রজাতির ছিল না। 

কিন্তু ক্রেডেল অফ হিউম্যান কাইন্ডে ৩০ মাটির ৩০ ফিট নীচে অবস্থিত একটি কবরখানা এতদিনের প্রচলিত সমস্ত ধারণাকেই ভ্রান্ত প্রমাণিত করেছে। 

লি’বার্গার জানাচ্ছেন, এই কবরখানাটির বয়স ৩ লক্ষ ৩৫ হাজার বছর থেকে ২ লক্ষ ৪১ হাজার বছর। হোমো সেপিয়েন্সদের প্রাচীনতম কবরের থেকে এর বয়স অন্ততপক্ষে ১ লক্ষ বছর বেশি। 

প্রাথমিক ভাবে বার্গারের গবেষকদলের অনেকে মনে করেছিলেন, এই কবরটি পরবর্তী কোনও যুগের কোনও শিকারির কাজ। তিনি বা তাঁরাই হয়ত অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া হাড়গোড় তুলে এনে এখানে পুঁতে রেখেছিল। কিন্তু এই ভ্রাম কাটাতে সাহায্য করেন খোদ হোমো নালেডি’দের রেখে যাওয়া আদিমতম এপিটাফ, বা স্মৃতিফলক। 

২০১৭ সালে এই কবরগুলির কাছেই গুহার দেওয়াল খোঁজ মেলে বেশ কিছু পাথরে খোদাই চিহ্ন এবং সঙ্কেতের। এছাড়া কবর খোড়ার পদ্ধতি এবং আনুষাঙ্গিক বিচার করে গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছন, যে রিতীমত উপাচার মেনে নিজের গোষ্ঠীর মানুষদের কবর দিতেন হোমো নালেডিরা। দেওয়ালে রেখে যাওয়া সঙ্কেতগুলি আদিমতম লিখিত কোনও অক্ষরমালা।

সন্দেহ নেই, এই আবিষ্কারের ফলে মানব সভ্যতার ইতিহাস নতুন করে লিখতেই হবে গবেষকদের। লি বার্গার জানাচ্ছেন, তাঁরা এখন খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাবেন, সম সাময়িক অন্যান্য মানব প্রজাতির সঙ্গে কিভাবে মিশতেন হোমো নালেডিরা। কি ছিল সেই সম্পর্কের প্রকৃত চিত্র। 

প্রসঙ্গত, চলতি বছরে এনসিইআরটি’র সিলেবাসে ব্যাপক কাটছাঁট করা হয়। পড়ুয়াদের বোঝা লাঘব করতে সিলেবাস থেকে বাদ গিয়েছে বিবর্তনবাদের মত গুরুতর বিষয়। বিরোধীদের দাবি, আরএসএস-বিজেপির হিন্দুত্ববাদী মতাদর্শ বিবর্তনবাদকে মান্যতা দেয় না। তারফলেই সিলেবাস থেকে বাদ গিয়েছেন চার্লস ডারউইন। উগ্র দক্ষিণপন্থী শক্তি যুক্তিবাদকে ক্ষমতার জোরে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করলেও, সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকার একটি উপত্যকা যেন নতুন করে প্রমাণ করল বিবর্তনবাদের অভ্রান্ততা। 

Comments :0

Login to leave a comment