DELHI WRESTLERS PROTEST

দিল্লিতে মহিলা মহা পঞ্চায়েত আটকাতে জোর তৎপরতা পুলিশের

খেলা

Wrestlers Protest indian sports politics of sports bengali news সাক্ষী মালিককে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে।

দিল্লিতে ফের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর হামলা চালাল কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত দিল্লি পুলিশ। জন্তর মন্তরের অবস্থান স্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হল আন্দোলনরত কুস্তিগীরদের। তাঁদের অবস্থান স্থলের সমস্ত জিনিস লন্ডভন্ড করে দেয় পুলিশ। ভেঙে দেওয়া হয় তাঁবু সহ সমস্ত অস্থায়ী ছাউনি। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, সাক্ষী মালিক, বজরঙ পুনিয়া সহ সমস্ত আন্দোলনরত কূুস্তিগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, পুলিশের নির্দেশ অমান্য করে আইন ভেঙেছেন কুস্তিগীররা। তাঁরা ব্যারিকেড টপকানো এবং ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন। 

কুস্তিগীরদের অভিযোগ, মহিলা কুস্তিগীরদের যৌন হেনস্থাকারী বিজেপি সাংসদ ব্রীজভূষণ শরণ সিং নতুন সংসদ ভবনে বসে রয়েছেন। আর ন্যায়ের দাবি আন্দোলন করায় তাঁদের উপর অমানুষিক অত্যাচার নামিয়ে আনা হচ্ছে। 

দিল্লি পুলিশের স্পেশাল কমিশনার (আইন শৃঙ্খলা) দীপেন্দ্র পাঠক জানিয়েছেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতেই কুস্তিগীরদের আটক করা হয়েছে। অপরদিকে আটক হওয়ার পরে পুলিশের গাড়ি থেকে সাক্ষী মালিক অভিযোগ করেন, তাঁদের হেনস্থা করা হচ্ছে। জোর জবরদস্তি তাঁদের আটক করা হয়েছে। দেশের হয়ে পদকজয়ী কুস্তিগীরদের টেনে হিঁচড়ে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়েছে বলেও তাঁর অভিযোগ। 

কুস্তিগীরদের পাশে দাঁড়িয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন মহিলা আন্দোলনের নেত্রী জগমতী সাঙ্গওয়ান। সিপিআই(এম), সিপিআই(এম-এল) সহ বিভিন্ন বামপন্থী দলের কর্মীদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, কুস্তিগীরদের তরফে গত সপ্তাহে জানানো হয়, নয়া সংসদ ভাবনের উদ্বোধনের দিনেই তার সামনে মহিলা মহা পঞ্চায়েত করা হবে। সেই পঞ্চায়েত আটকাতে ইতিমধ্যেই যুদ্ধকালীন তৎপরতা দেখাচ্ছে বিজেপি পরিচালিত দিল্লি পুলিশ এবং বিজেপি শাসিত হরিয়ানার পুলিশ। মহিলা মহা পঞ্চায়েতে যোগ দিতে আসা পাঞ্জাবের কৃষকদের পাঞ্জাব হরিয়ানা সীমান্তের আম্বালায় আটক করা হয়। পাঞ্জাব কৃষক মজদুর সংঘর্ষ কমিটির অভিযোগ, গণতন্ত্রের কন্ঠ রোধের জন্যেই তাঁদের আম্বালায় আটকে দেওয়া হয়েছে। সংঘর্ষ কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁরা অমৃতসর থেকে দিল্লি যাচ্ছিলেন মহিলা মহা পঞ্চায়েতে যোগ দিতে। 

এর পাশাপাশি হরিয়ানার ঝিন্দ, কুরুক্ষেত্র, রোহতক, ভিওয়ানি, হিসার থেকেও আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার করার খবর মিলেছে। দিল্লির কানজাওয়ালা চৌকে মেয়েদের একটি প্রাথমিক স্কুলকে অস্থায়ী জেলে পরিণত করার আবেদন জানিয়ে দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকে চিঠিও দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। যদিও সেই আবেদন পত্রপাট খারিজ করে দিয়েছেন দিল্লির মেয়র শেলি ওবেরয়। 

অপরদিকে দিল্লির উপকন্ঠে গাজিপুর সীমান্তেও আন্দোলনকারীদের উপর বলপ্রয়োগ করেছে দিল্লি পুলিশ। গাজিপুর সীমান্তে রাস্তার উপর লোহার পেরেক পুঁতে কৃষকদের গাড়ি আটকেছে পুলিশ। ভারতীয় কৃষক ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েতের অভিযোগ, গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে সরকার ভয় পাচ্ছে। তাই এই ভাবে তাঁদের হেনস্থা করা হচ্ছে। পুলিশি অতি সক্রিয়তার প্রতিবাদে গাজিপুর সীমান্তে পথ অবরোধ করে ধর্নায় বসেছেন ভারতীয় কৃষক ইউনিয়নের কর্মী সমর্থকরা। 

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের গোড়ায় ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি ব্রীজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনেন মহিলা কুস্তিগীররা। গোটা কুস্তিগীর সমাজ তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ায়। নাবালিকাদের যৌন হেনস্থা করার অভিযোগ উঠলেও উত্তর প্রদেশের বিজেপি সাংসদ ব্রীজভূষণকে রক্ষা করতে তৎপর হয় কেন্দ্রীয় সরকার। এর প্রতিবাদে দিল্লির জন্তর মন্তরে টানা অবস্থান শুরু করেন সাক্ষী মালিক, বজরঙ পুনিয়া, ভিনেশ ফোগটের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদকজয়ী কুস্তিগীররা। 

পরবর্তীকালে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ব্রীজভূষণের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়। নাবালিকা যৌন হেনস্থা রোধী পকসো ধারায় মামলা হলেও এখনও ব্রীজভূষণকে গ্রেপ্তার করে নি দিল্লি পুলিশ। তারই প্রতিবাদে নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধনের দিন মহিলা মহা পঞ্চায়েতের ডাক দেওয়া হয়। হরিয়ানা, রাজস্থান এবং পশ্চিম উত্তর প্রদেশের সমস্ত খাপ পঞ্চায়েত একজোট হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেয়। সেই আন্দোলন আটকাতেই রবিবার অতি সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গেল দিল্লি পুলিশকে। 

ইতিমধ্যেই অলিম্পিক, কমনওয়েল্থ গেমস সহ আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদকজয়ী কুস্তিগীরদের রাস্তা থেকে টেনে হিঁচড়ে গ্রেপ্তার করার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে গোটা দেশ। টুইটারে ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। টুইট করে সাধারণ মানুষ জানাচ্ছেন, নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের দিনেই শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর এই ধরণের পুলিশি হামলা গণতন্ত্রকে খুন করার সামিল। 

Comments :0

Login to leave a comment