লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের ও রাজ্যের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার কথা মানুষের কাছে তুলে ধরতে প্রচার পত্র প্রকাশ করলো এসএফআই কলকাতা জেলা কমিটি। ‘হাতে পেন্সিলটুকুও থাকবে কি?’ নামে এই প্রচার পত্রের প্রতিটা পাতায় শিক্ষার বেহাল অবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
এসএফআইয়ের কথায়, সংসদে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস প্রার্থীরা থাকলে শিক্ষাখাতে জিডিপি-র ন্যূনতম ৬%, কেন্দ্রীয় বাজেটের ন্যূনতম ১০% ব্যায় বরাদ্দ হবে। শিক্ষায় বিশেষ স্টিমুলাস প্যাকেজ। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ প্রত্যাহার। স্কলারশীপ, ফেলোশিপের পরিমান বৃদ্ধি। ছাত্রী, সংখ্যালঘু, প্রান্তিক লিঙ্গের ছাত্রের নিরাপত্তা, সামাজিক অধিকার, শিক্ষার অধিকার সুনিশ্চিত করা হবে।
ড্রপ আউট থেকে জিডিপি সব কিছুই উল্লেখ করা হয়েছে এসএফআইয়ের পক্ষ থেকে। এসএফআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘গত কয়েক বছরে সারাদেশে ৪ লক্ষেরও বেশি সরকারি স্কুল বন্ধ হয়েছে। আর শেষ ১৩ বছরে, তৃণমূলের জমানায় আমাদের রাজ্যে বন্ধ সরকারি স্কুলের সংখ্যা – ৮,২০৭টি। শুধুমাত্র কলকাতা শহরে রাতারাতি উবে গেছে ২৮টি কর্পোরেশন স্কুল এর মধ্যে ১৮টি স্কুল মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্য স্কুলের সাথে। কর্পোরেশন স্কুল বাদ দিয়েও আরও ১৫টি স্কুল উঠে গেছে। ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী কলকাতায়।’
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলা চলাকালিন রাজ্যের পক্ষ থেকে একটি তালিকা আদালতের কাছে জমা দেওয়া হয়। সেখানে ৮,২০৭টি স্কুলের নাম উল্লেখ করা হয় যা সরকার তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এই নিয়ে বিধানসভা অভিযান করে এসএফআই।
কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও ফাঁকা শিক্ষক পদ। বিভিন্ন বিভাগেও সিট খালি থাকছে। একদিকে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা যেমন ঢুঁকছে অন্যদিকে সরকারের মদতে মাথা চাড়া দিচ্ছে একের পর এক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসএফআইয়ের পক্ষ থেকে এই প্রচার পত্রে বলা হয়েছে যে বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষার উন্নতির বদলে জ্যোতিষ শাস্ত্র কোর্স হিসাবে চালু করা হচ্ছে বিজেপি সরকারের পক্ষ থেকে।
উল্লেখ্য লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে লক্ষীর ভান্ডার স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ডের মতো সরকারি প্রকল্প গুলোর কথা বার বার শোনা যায় তৃণমূলের মুখে। কিন্তু সত্যিই সব আবেদনকারি রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা পায়.
না।
এসএফআই বলছে, ‘মুখ্যমন্ত্রীর সাধের স্টুডেন্টস্ ক্রেডিট কার্ডের ১ লক্ষ আবেদনকারীর মধ্যে ১৫ হাজারেরও কম ছাত্রের ঋণের আবেদন গৃহীত হয়েছে।’
এসএফআইয়ের কথায় শিক্ষা ক্ষেত্রে এই বেহাল দশার অন্যতম কারণ বাজেট বরাদ্দে হ্রাস।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-তে জিডিপি-র ৬% বরাদ্দ করার কথা হলেও তার অর্ধেকও ব্যায় বরাদ্দ জোটে না শিক্ষার জন্য। ২০১৪- ২৪ সালে এই বরাদ্দের মাত্র ০.৪৪% খরচ করা হয়েছে। গত বাজেটেও স্কুল শিক্ষার জন্য বরাদ্দ কমেছে। ইউজিসি-র ফাণ্ড কাট হয়েছে ৬১%। উচ্চশিক্ষায় ৯৬০০ কোটি টাকা কমেছে শেষ কেন্দ্রীয় অন্তর্ববর্তীকালীন বাজেটে। প্রফেশনাল ও টেকনিক্যাল কোর্সে বরাদ্দ ২৪৩ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে মাত্র ৩৩ কোটি টাকা। আদিবাসী ছাত্রদের স্কলারশিপের অর্থের পরিমাণ কমেছে, বন্ধ হয়েছে সংখ্যালঘু ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ থাকা মৌলানা আজাদ স্কলারশীপ। বাচ্চাদের মিড-ডে মিলের ১২০০ কোটি টাকা কমানো হয়েছে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে। এছাড়াও রয়েছে শিক্ষক না থাকার সমস্যা। মাদ্রাসায় শিক্ষকের শূন্যপদ-১০,০০০, প্রাথমিকে ১,৯০,০৮৫, মাধ্যমিকে ১,৩৯,২৯৫, উচ্চ মাধ্যমিক ২৩,৭১১, ৬৬২৮টি স্কুলে স্থায়ী প্রধান শিক্ষক নেই। শিক্ষাকর্মীর শূন্যপদ ২৯,২৩৫টি। ২০০৮ সালে শিক্ষক ছাত্র অনুপাত ছিল ১:৩৫, বর্তমানে তা ১:৭৩। দেশে শুধুমাত্র বিভিন্ন কেন্দ্রীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১০,০০০ শিক্ষকপদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে।’
পাঠ্যক্রম থেকে ডারউইন, মুঘল যুগকে বাদ দেওয়ার যেই কাজ বিজেপি করেছে তার সমালোচনাও করা হয়েছে। এছাড়া রাজ্যের নারী পাচার, বাল্য বিবাহের কথাও উল্লেখ রয়েছে।
কলকাতা জেলা সভাপতি বর্ণনা মুখার্জি বলেন, ‘‘সামগ্রিক ভাবে শিক্ষার কর্পোরেটাইজেশন, মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর কমে যাওয়া নিয়ে লড়াই করছে এসএফআই। তাই আমরা আমাদের কথা বামপন্থীদের কথা এর মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছি। দেশের সংবিধান একজন শিশুকে জন্মানোর পর শিক্ষার অধিকার দিয়েছে। বিজেপি তৃণমূল তা কেড়ে নিচ্ছে। সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষার অঙিনায় ফিরিয়ে আনার যেই লড়াই তা সংসদ থেকে আরও জোরদার হোক। ইউপিএ ১ এর সময় যেই স্কলারশিপ ছিল তা ফিরিয়ে আনতে হবে। সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা জোরদার হলে তবে একজন সাধারণ ছেলে মেয়ে ভালো ভাবে লেখা পড়া করতে পারবে।’’
সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন, সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিং সেন্টার। প্রতি ক্যাম্পাসে GSCASH, আর যাতে কোন সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা ছাত্রকে রোহিথ ভেমুলার মতন আত্মহত্যার শিকার না হতে হয়,তার জন্য রোহিত অ্যাক্ট। সকল প্রকার সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে স্বচ্ছভাবে নিয়োগ। শিক্ষার সাম্প্রদায়িকীকরণ, বেসরকারিকরণ রুখে দেওয়া। শিক্ষাক্ষেত্রের গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষা করা। অবাধ ও সুষ্ঠ ছাত্র সংসদ নির্বাচন।
Comments :0