SITARAM YECHURY

‘বিদ্বেষেই মোদী, সংবিধান-জনজীবনের দাবি কেড়েছে বিজেপি’র হাওয়া’

জাতীয়

CPIM TMC BJP AIKS WEST BENGAL PANCHAYAT ELECTION WEST BENGAL POLITICS 2023 BENGALI NEWS

তীব্র মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় মাঝে আবার দাবি করেছেন তিনি হিন্দু-মুসলমান ভাগ করেন না। সংবিধান রক্ষা আর জনজীবনের জ্বলন্ত সংকটকেই প্রচারের কেন্দ্রে রেখেছেন বিরোধীরা। বিজেপি’র হাওয়া কেড়ে নেওয়া গিয়েছে। 

পাঁচ দফা ভোটের আগে দেশের পরিস্থিতি এভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি বলেছেন, ‘‘বিদ্বেষেই মোদী, সংবিধান-জনজীবনের দাবি কেড়েছে বিজেপি’র হাওয়া।’’

‘‘যেদিন আমি জনসাধারণের সামনে হিন্দু-মুসলমান ভাগ করব, সেদিন আমি সর্বজনীন পরিসরে থাকার যোগ্যতা হারাব। তাই আমি হিন্দু-মুসলমান করব না। এটা আমার সংকল্প।’’

চলতি বছরের ১৪ মে বারাণসীর গঙ্গাবক্ষে নৌকাবিহার করতে করতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঠিক এই কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু গোটা নির্বাচনী মরশুম জুড়ে মোদীর একের পর জনসভার ভাষণে উঠে এসেছে তীব্র মুসলিম বিদ্বেষ। নিয়ম করে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বার্তা দিয়ে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। 

এমন ভাষণের সংক্ষিপ্ত ভিডিও সংকলন বেরিয়েও পড়েছে। নিজের এক্স হ্যান্ডেল থেকে শুক্রবার সেই ভিডিও পোস্ট করে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির প্রশ্ন, ‘‘ভেবেছিলাম এমন মিথ্যা বলা সম্ভব নয়। নরেন্দ্র মোদী প্রতিদিন আমাদের ভুল প্রমাণ করছেন।’’ 

সীতারাম ইয়েচুরি লিখেছেন, ‘‘মোদী বলেছেন তিনি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ভাষণ দেন না। কিন্তু একের পর এক জনসভায় দেওয়া তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্য ভিন্ন কথা বলছে।’’

ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ১ মে মধ্য প্রদেশের খাড়গোনের সভায় মোদী বলেছেন, ‘‘জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ভারতে ভোট জিহাদ চলবে, না রাম রাজ্য চলবে।’’

২১ এপ্রিল রাজস্থানের বাঁশওয়াড়ার সভায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস আপনাদের সম্পদ কেড়ে, যাদের বেশি সন্তান রয়েছে তাদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে।’’ ২৫ এপ্রিল মধ্যপ্রদেশের মোরেনার সভা থেকে সরাসরি মুসলমান সম্প্রদায়ের নাম নিয়ে আক্রমণ করে মোদী বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস মনে করে দেশের সম্পদের উপর প্রথম অধিকার মুসলমানদের।’’ একইদিনে উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরের সভা থেকে নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘‘অন্যান্য অনগ্রসর অংশের মানুষকে বঞ্চিত করে, তাঁদের সংরক্ষণের ভাগ থেকে মুসলমানদের সংরক্ষণ ভেট দিয়েছে কংগ্রেস। সমস্ত মুসলমানকে অন্যান্য অনগ্রসর অংশের তকমা দেওয়া হয়েছে।’’

ঠিক একদিন পরে, ২৬ এপ্রিল বিহারের আরারিয়ার সভায় মোদী ফের বলেন, ‘‘কংগ্রেস কারোর কথা শুনছে না। এখনও বলছে রাষ্ট্রীয় সম্পদের উপর প্রথম অধিকার মুসলমানদের।’’ ২৮ এপ্রিল কর্ণাটকের বেলগাভীর সভা থেকে মোদী বলেছেন, ‘‘ভোট ব্যাঙ্ক রাজনীতির জন্য কংগ্রেস রাজা মহারাজাদের সমালোচনা করলেও নবাব, বাদশা কিংবা সুলতানদের নিয়ে চুপ।’’

সাহারানপুরের রেশ মহারাষ্ট্রের সাতারায় টেনে এনে, ২৯ এপ্রিল মোদী ফের বলেছেন, ‘‘রাতারাতি কংগ্রেস সমস্ত মুসলমানকে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর তকমা দিয়েছে।’’ একইদিনে পুনের সভায় দাঁড়িয়ে মোদী বলেছেন, ‘‘সংরক্ষণকে নিয়ে ধর্মীয় তাস খেলেছে কংগ্রেস। তাই সমস্ত মুসলমানকে অন্যান্য অনগ্রসর অংশের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ ৩০ এপ্রিল তেলেঙ্গানার জাহিরাবাদের সভা থেকেও একই বক্তব্য রাখেন তিনি। 

৩ মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের সভা থেকে মোদী বলেছেন, ‘‘কংগ্রেস আপনাদের আয়ের একটা অংশ বাজেয়াপ্ত করে ভোট জেহাদীদের দিয়ে দেবে।’’ ৪ মে ঝাড়খন্ডের লোহারডাগার সভা থেকে মোদী বলেছেন, ‘‘কংগ্রেসের চশমায় শুধুমাত্র মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক দেখা যায়।’’ নিউজ মিনিটের ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, মোট ১৫ বার এই কায়দায় ভাষণ দিয়েছেন মোদী। 

অপরদিকে দৈনিক সংবাদপত্র দি হিন্দুকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ দৈনিক খরচ চালানোর জন্য ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিবার পিছু সঞ্চয়ের হার তলানিতে এসে ঠেকেছে। কিন্তু সেই সমস্ত বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কোনও বক্তব্য নেই। সংবিধান অনুযায়ী আমরা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ। সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী মন্দিরের উদ্বোধনকে সরকারি বিষয় বানিয়ে ফেললেন। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের প্রতি পক্ষপাত দেখাতে পারে না। সংবিধানকে অগ্রাহ্য করে সরকার চালাচ্ছেন মোদী। এর বিরুদ্ধেই জনমত গড়তে সফল হয়েছেন বিরোধীরা। জনজীবনের জ্বলন্ত বিষয়গুলিকে হাতিয়ার করে বিজেপি’র পালের হাওয়া কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছে বিরোধীরা।’’

Comments :0

Login to leave a comment