CO-ORDINATION COMMITTEE MEETING

কৃষকদের মতো লড়েই ঠেকাতে হবে শ্রম কোড; সমাবেশে হেমলতা

রাজ্য জেলা

Citu coordination committee

কেন্দ্রের বিজেপি সরকার শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের নয়, কিছু পেটোয়া কর্পোরেট ব্যবসায়ী পুঁজিপতির হয়ে কাজ করে চলেছে। বেসরকারিকরণ, বিলগ্নিকরণ, বাণিজ্যিকীকরণের মধ্যে দিয়ে বিজেপি সরকার দেশ বিক্রির চক্রান্তে লিপ্ত। এই সরকারের অবসান না হলে শ্রমজীবীদের উন্নতি সম্ভব নয়। সোমবার জলপাইগুড়ি রবীন্দ্র ভবনের মাঠে রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির বিংশতিতম সম্মেলনের প্রকাশ্য অধিবেশনে একথা বলেন সিআইটিইউ’র সর্বভারতীয় সভাপতি কে হেমলতা। 

তিনি বলেন, একটার পর একটা শ্রমিক-কর্মচারী বিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে এই সরকার। সরকারের এই আক্রমণকে রুখতে গেলে শুধুমাত্র সিআইটিইউ, রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি, ১২ই জুলাই কমিটিই নয়, সমস্ত শ্রমিক-কর্মচারীকে তাঁদের পরিবার-পরিজনকে সাথে নিয়ে শ্রমিক-কৃষক-খেতমজুর, মেহনতি মানুষের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এদিন প্রকাশ্য অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের নবনির্বাচিত রাজ্য সভাপতি মানস দাস। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নবনির্বাচিত রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ দত্ত চৌধুরি।


এদিন সমাবেশে কে হেমলতা বলেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ও গোটা দেশের যে সমস্ত রাজ্যে বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারগুলি রয়েছে, তারা শ্রমিক-কর্মচারীদের অধিকার হনন করেতে চাইছে শ্রম কোডের মাধ্যমে। গোটা দেশের মানুষ যখন কোভিড অতিমারীতে আতঙ্কিত, তখন সংসদে নিজেদের সংখ্যাধিক্যের জোরে বিজেপি সরকার এই শ্রমকোড পাস করিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু দেশজোড়া শ্রমিক- কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের পর সরকার বোঝে যে সংসদে পাস করালেই হবে না, এই শ্রমকোড কার্যকরী করতে গেলে তা সরকারের পক্ষে বিপদ ডেকে আনবে। তাই এই শ্রমকোডকে এখনও কার্যকরী করা যায়নি।

তিনি বলেন, এই শ্রমকোডের যে শর্তগুলি রয়েছে তাতে শ্রমিক-কর্মচারীরা ইউনিয়ন করে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করার অধিকার হারাবেন। কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব যেভাবে প্রায় দু’বছর ধরে রাস্তায় থেকে লড়াই আন্দোলন করে ৭০০ কৃষকের আত্মবলিদানের মধ্য দিয়ে নয়া কৃষি বিল প্রত্যাহার করতে সরকারকে বাধ্য করেছেন, তেমনি শ্রমকোড প্রত্যাহার করাতেও শ্রমিক-কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই জরুরি। 


এদিন হেমলতা বলেন, মোদী সরকার যে সমস্ত সংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিক-কর্মচারীরা কাজ করেন সে সমস্ত ক্ষেত্রে ৮ ঘণ্টা কাজের যে অধিকার স্বীকৃত ছিল, সেই নিয়ম তুলে দিতে চাইছে। হায়ার অ্যা ন্ড ফায়ার নীতির মধ্যে দিয়ে যেখানে যেরকম সেখানে সেরকম কাজের সময় কার্যকরী করতে চাইছে। 


তিনি বলেন, প্রকল্প শ্রমিকদের ক্ষেত্রে যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা সরকারের দেওয়ার কথা সে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা না দিয়ে সরকার তাদের দিয়ে সর্বোচ্চ কাজ করিয়ে নিতে চাইছে। যখন একজন শ্রমিকের ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম মাসিক ২৬ হাজার টাকা বেতনের প্রয়োজন , কেন্দ্রীয় সরকার সেখানে শ্রমিক-কর্মচারীদের দৈনিক মজুরি মাত্র ১৬৮ টাকা করার কথা ভাবছে। আজ স্থায়ী কর্মচারীর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তর ও রাজ্য সরকারি দপ্তরে অস্থায়ী কর্মচারীর সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষিত এইসব ছেলেমেয়েরা কম্পিউটার সহ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী। সরকার এই সমস্ত কর্মচারীদের শুধুমাত্র সামান্য বেতনে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। এই অংশের কর্মচারীদের সঙ্ঘবদ্ধ করার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের সংগঠনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। 


বিশ্বজিৎ দত্ত চৌধুরি এদিন সভায় বলেন, তৃণমূল সরকারের আমলে রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটিকে ভাঙার বারবার প্রচেষ্টা হয়েছে। বিশেষত যে জেলায় দাঁড়িয়ে আমরা রাজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত করলাম সেই জেলার তৃণমূলের জেলা সভাপতি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি করা কাউকে জেলার কোনও দপ্তরে খুঁজে পাওয়া যাবে না। শাসকের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে গত ৮মাস ধরে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন কর্মসূচি করে সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন এই জেলার সংগঠকরা। যাঁরা সংগঠন করছেন, তাঁরা যেকোনও দিন সরকারের রোষের মুখে পড়তে পারেন, জেনেই সংগঠন করতে এসেছেন। কাজেই হুমকি দিয়ে আমাদের সংগঠন ভাঙা যায় না, তা আজকের সমাবেশ আরেকবার প্রমাণ করল।

Comments :0

Login to leave a comment