Kalighater Kaku

কন্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা এড়াতে শিশুদের আইসিসিইউ বেডে শুয়ে পড়লেন কালীঘাটের কাকু

রাজ্য


সকাল সাড়ে সাতটায় আধুনিক পরিষেবা যুক্ত ফাইভ-জি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসএসকেএমে হাজির কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি’র আধিকারিকরা। আদালতের নির্দেশ মেনেই জোকায় ইসআই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে নিয়োগ কাণ্ডে ধৃত কালীঘাটের কাকুর কন্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষা করার কথা ছিল শুক্রবারই!

যদিও তার আগেই বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’কে কার্ডিওলজি বিভাগের আইসিসিইউ’তে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। আইসিসিইউ’র ১৮ নম্বর বেডে তড়িঘড়ি তাঁকে ভর্তি করা হয়। এই ১৮নম্বর বেডটি আইসিসিইউ’তে মূলত শিশুদের জন্য সংরক্ষিত!

তবে কী শীর্ষ প্রভাবশালী মহলের ইঙ্গিত পেয়েই এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুদের জন্য আইসিসিইউ’তে সংরক্ষিত বেডেই রাখা হয় কালীঘাটের কাকুকে?

ফলে দিনভর বিস্তর টানাপোড়েনের পরে এবারও খালি হাতেই ফিরতে হলো ইডি’কে। এই নিয়ে পরপর তিনবার চেষ্টা করেও কালীঘাটের কাকুর গলার স্বরের নমুনা সংগ্রহ  করতে পারল না তদন্তকারী সংস্থা, কার্যত এসএসকেএম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার জেরে।

হাসপাতাল সূত্রেই জানা গেছে, এর আগে কন্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের জন্য এসএসকেএমে কালীঘাটের কাকুর জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান চিকিৎসক সম্মতি দিলেও কার্যত হাসপাতাল সুপারের বাধায় কন্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা যায়নি। ইডির দাবি, এর আগে এক চিকিৎসক এবং সুজয়কৃষ্ণ নিজে কণ্ঠস্বরের নমুনা পরীক্ষায় রাজি হলেও আপত্তি জানান সুপার। হাসপাতালের সুপার নাকি জানিয়েছিলেন এসএসকেএমের মেডিক্যাল বোর্ড এই বিষয়ে অনুমতি দেয়নি।

আর এদিন তো একধাপ এগিয়ে ইএসআই, জোকায় নিয়ে যাওয়া আটকাতে আইসিসিইউ’তে শিশুদের জন্য সংরক্ষিত বেডে পর্যন্ত রেখে দেওয়া হলো অভিষেক ব্যানার্জির লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের প্রাক্তন ডিরেক্টর কালীঘাটের কাকুকে!

এদিনের ঘটনয় স্পষ্ট, ইডি’র মত কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কার্যত ঘোল খাওয়ানো হচ্ছে! আর বারেবারেই সেই ফাঁদে পা দিয়ে নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা কালীঘাটের কাকুর কন্ঠস্বরের নমুনা পর্যন্ত গত চার মাস ধরে সংগ্রহ করতে পারছে না ইডি! গত ৩০মে ইডি অভিষেকের ঘনিষ্ট কালীঘাটের কাকুকে গ্রেপ্তার করে। প্রথম দফায় কিছুদিন হাসপাতালে থাকা, বাইপাস সার্জারির পরে ফের গত ২২ আগস্ট থেকেই এসএসকেএম হাসপাতালে রয়েছেন তিনি। তাঁকে কোনরকম জেরাও করতে পারেননি তদন্তকারী আধিকারিকরা। 

আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, ধৃত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহে বাধা দিতে কেন এত মরীয়া হয়ে উঠছে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রশাসন?

ইডি’র একটি সূত্রে জানা গেছে সুজয় ভদ্রের ফোন ও বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু ডিজিটাল এভিডেন্স মিলেছিল। মোবাইলে মিলেছিল একাধিক অডিও ক্লিপ। সেখানে শাসক দলের এক শীর্ষ প্রভাবশালীর সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের ক্লিপ রয়েছে। শিক্ষা দপ্তরের একাধিক জনের সঙ্গেও কথোপকথনের রেকর্ড রয়েছে। 

সুজয় ভদ্রের কন্ঠের নমুনা পাওয়া গেলে রাজ্যের শীর্ষ ঐ প্রভাবশালী নেতার ঘুম উড়ে যাওয়ার কথা। নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁর ভূমিকা সামনে চলে আসবে। ফলে নবান্নের শীর্ষ মহল থেকেই এই কন্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহে বাধা দেওয়ার কৌশল। শুধু তাই নয় তদন্তকারী সংস্থার আশঙ্কা গত চার মাসের দীর্ঘ সময়ে কালীঘাটের কাকুর কন্ঠস্বর বিকৃত করাও হয়ে থাকতে পারে। যে কোনও উপায়ে অডিও ক্লিপের কন্ঠস্বরের সঙ্গে যাতে কালীঘাটের কাকুর কন্ঠস্বর না মেলে তা নিশ্চিত করতে এই চক্রে এখন সক্রিয় ভাবে এসএসকেএমের মত হাসপাতালের যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠছে।

গত জুলাই মাসে ইডির তরফে কালীঘাটের কাকুর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত চার্জশিট দায়ের করা হয়। মোট ১২৬ পাতার চার্জশিট। চার্জশিটে ৭৫নম্বর পাতায় ইডি উল্লেখ করে- সুজয় ভদ্র ‘সেই সময় অভিষেক ব্যানার্জির আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি দেখভাল করতেন। সেই সময় অভিষেক ব্যানার্জি যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। সুজয় ভদ্র তৎকালীন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের অফিসেও নিয়মতি যাতায়াত করতেন। মূলত অভিষেক ব্যানার্জির হয়ে বার্তা মানিক ভট্টাচার্যের কাছে পৌঁছে দিতেই তিনি যেতেন।’ চার্জশিটে স্পষ্ট দাবি, অভিষেক ব্যানার্জির বার্তাবাহক হয়েই মানিক ভট্টাচার্যের অফিসে যেতেন সুজয় ভদ্র। ২০১৪’র টেটে ঐ ৩২৫জনকে পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য চাকরি প্রার্থীদের নথি সুজয় ভদ্র মানিক ভট্টাচার্যের কাছে দিয়েছিলেন। এখানেই প্রশ্ন সুজয় ভদ্র কোনরকম সরকারি বা দলীয় পদে না থাকলেও কিভাবে সুপারিশ করতেন? তাহলে উনি কী অভিষেকের হয়েই সুপারিশ করেছেন?

গত ২৫ নভেম্বর আলিপুরে ইডি’র বিশেষ আদালত এসএসকেএমের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে ইএসআই হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করার নির্দেশ দেন। এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ যে সব চিকিৎসার কথা বলছে, সেগুলির আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা যাচাই করে দেখবে জোকা ইএসআই হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ড। এসএসকেএমের সুপার তদন্তকারী আধিকারিকের হাতে সুজয়কৃষ্ণকে তুলে দেবেন এবং অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হবে। ইএসআই হাসপাতাল যাওয়ার পথে কলকাতা পুলিশ নিরাপত্তা দেবে, না থাকলে তদন্তকারী সংস্থা কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাছে সহযোগিতা চাইবে।

সেই মোতাবেক ইডি এদিন সকালে হাজির হয় এসএসকেএমে। যদিও জানা যায় গত রাতেই নাকি আইসিসিইউ’র ১৮ নম্বর বেডে স্থানান্তরিত করা হয়েছে কালীঘাটের কাকুকে। দিনভর নাটকীয় পরিস্থিতির পরেও কালীঘাটের কাকুকে নিয়ে যাওয়া যায়নি ইএসআই, জোকায়। এসএসকেএমের সুপার পীযুষ রায়ের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

Comments :0

Login to leave a comment