INSAAF YATRA

লাল ঝান্ডা অধিকার দেয়, তার টানে ব্রিগেডে

রাজ্য জেলা কলকাতা

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP ওয়াই চ্যানেলের শিবিরে বামপন্থী এক পরিবার।

ঘড়িতে তখন শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। ওয়াই চ্যানেলের সামনে তৈরি হয়েছে বিশাল আকারের তাঁবু। সেখানে রাত কাটাবেন দূরবর্তী জেলাগুলি থেকে আসা ডিওয়াইএফআই সহ বামপন্থী কর্মীরা। 

কড়া শীতের রাত। কিন্তু তাও মনোবলে টান পড়েনি রাজ্যের দূরবর্তী জেলাগুলি থেকে আসা কর্মী সমর্থকদের। 

সেই তাঁবুর বাইরে কথা হচ্ছিল আক্কাস আলি শেখের সঙ্গে। ডোমকল পৌর এলাকার বাসিন্দা। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা লালগোলা ট্রেনটা করে এসেছি। জেনারেলে। কামরায় এত ভিড় ছিল বলার নয়। সবই তো আমাদের লোক। লালগোলা, ভগবানগোলা, রানীনগরের লোকেরাও একই ট্রেনে এসেছে।’’

শীতের রাতে তাঁবুতে মোটা কাপড় পেতে ঘুমোবেন আক্কাসরা। এসেছেন ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে। দিন কয়েকের রোজগার মাঠে ফেলে এসেছেন তাঁরা। কিন্তু কেন? কিসের টানে? 

আক্কাস আলি জানাচ্ছেন, ‘‘বাপের মুখে শোনা, লাল ঝাণ্ডা আমাদের মানুষের মত বাঁচার অধিকার দিয়েছিল। সেই টানেই ব্রিগেডে আসা। ব্রিগেড হয়েছে, আর আমি আসিনি, সেটা কখনো হয়নি’’

কিন্তু লাল ঝাণ্ডা তো এখন দুর্বল। তাও এত কষ্ট করে এলেন ব্রিগেডে? আক্কাস আলির কথায়, ‘‘কে বলেছে দুর্বল। তৃণমূল ভেবেছিল দুর্বল। পঞ্চায়েতে বিডিও অফিসের সামনে কোদালের দামাট নিয়ে ভিড় করেছিল। এমন তাড়া খেয়েছে, ৭দিন এলাকায় মুখ দেখাতে পারেনি। ভোট হয়েছে, একটার পর একটা অঞ্চলে সিপিআই(এম) আর কংগ্রেস জিতেছে। ভোট হলে পৌরসভাতেও এরা জিতবে।’’

ডোমকল ব্লকের ৪টি পঞ্চায়েত নিয়ে পৌরসভা গঠিত হলেও, এখনও তাতে গ্রামের গন্ধ লেগে রয়েছে। সেই পৌর অঞ্চলেই ছাগল চড়ান আক্কাস। শরীরের জোর কমেছে বলে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে পারেন না এখন। ছেলেও রাজমিস্ত্রির পেশায় রয়েছে। কিন্তু গ্রামে কাজ নেই, তাই পরিযায়ী হয়ে এই মুহূর্তে কেরালায়।  
 

প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘ছেলে কেরালায় কাজ করতে চায়না। কিন্তু ওখানে ১২০০টাকা রোজ মেলে। এখানে লাল ঝাণ্ডা ফিরলে এখানেও রোজ বাড়বে। গ্রামের ছেলেরা গ্রামেই কাজ পাবে। মুড়ি,চিড়ে খেয়ে বাইরে পড়ে থাকতে চায়না।’’

দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থেকে এসেছেন শম্ভু সূত্রধর। তাঁর কথায়, ‘‘চিটফান্ডে সর্বস্ব খুইয়েছি আমি। আর তৃণমূল আর বিজেপি মিলে চোরগুলোকে বাঁচাল। একটাও টাকা ফেরত পাইনি আমরা।’’

গঙ্গারামপুর থেকে আসা জমায়েতের বক্তব্য, এলাকার অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল তাঁত শিল্প। তাঁতশিল্পের উপর নির্ভরশীল অন্যান্য কুটির শিল্পেরও রমরমা ছিল গঙ্গারামপুরে। গত ৮-১০ বছরে গোটাটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর পিছনে রাজ্যের যেমন দায় রয়েছে, তেমনই কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিও দায়ী। বহু প্রাক্তন তাঁত শিল্পী এখন পেটের টানে টোটো চালান। কিন্তু সেখানেও লাভ নেই। কোনও রকমে দিনের খোরাকিটুকু মেলে। 

শনিবার সকালে রাধিকাপুর প্যাসেঞ্জার ট্রেনের করে ওয়াই চ্যানেলের শিবিরে এসছেন উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের বামপন্থী কর্মী সমর্থকরা। ৬ তারিখের বদলে ৫ তারিখেই কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন তাঁরা। ট্রেনের জেনারেল কামরায় যদি জায়গা না মেলে? তাই আগেভাগে চলে এসেছেন তাঁরা। 

এই দলের আবু বক্কর আলির সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামের বেকারদের নিঃস্ব করে ফেলেছে এই সরকার। টাকা নিয়ে যাঁদের চাকরি দিয়েছিল, তাদের চাকরি চলে গিয়েছে, আর বেশিরভাগের থেকে টাকা তুললেও চাকরি দেয়নি। তাঁরা একপ্রকার ফকিরে পরিণত হয়েছে। এই অন্যায়ের ইনসাফ চাইতে আমরা ব্রিগেডে এসেছি।’’

কলকাতার ওয়াই চ্যানেলের তাঁবু ছাড়াও মহাজাতি সদনের পাশে একটি ধর্মশালায় এবং ব্রিগেডের ময়দানেও ব্রিগেডে আসা জনতার রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আয়োজনের মূল দায়িত্বে কলকাতা জেলার ডিওয়াইএফআই সহ সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকরা। 

শনিবার বিকেল সাড়ে সাতটার হিসেব অনুযায়ী, ওয়াই চ্যানেলের শিবিরে এসে পৌঁছেছে ২০ হাজার খাবারের প্যাকেট। শহরের বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ মানুষ ব্রিগেডে আসা জনতার জন্য তৈরি করেছেন খাবার। 

সিপিআই(এম) বেহালা পশ্চিম-২ এরিয়া কমিটি এলাকা থেকেই এসেছে ১ হাজার খাবারের প্যাকেট। 
একইসঙ্গে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিয়ালদহ এবং হাওড়া স্টেশনে ভিড় বাড়ছে জেলা থেকে আসা মানুষের। 

দূরপাল্লার ট্রেনগুলির জেনারেল কামরায় কার্যত তিল ধারণের জায়গা নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও’তে দেখা গিয়েছে, বীরভূমের নলহাটি স্টেশনের গণদেবতা এক্সপ্রেসে চড়ার জন্য প্ল্যাটফর্মে বামপন্থী কর্মী সমর্থকদের ভিড়।

Comments :0

Login to leave a comment