Narendrapur

ছাত্রীর যৌন হেনস্তাকে ধামাচাপা দিতে নরেন্দ্রপুরের স্কুলে তাণ্ডব তৃণমূলীদের

রাজ্য জেলা

শনিবার স্কুল চলাকালীন তৃণমূলপন্থী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ওপরেই বেপরোয়া হামলা, ভাঙচুর, তাণ্ডব চালালো তৃণমূলীরা। স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূলপন্থী শিক্ষক তারক ঘোষকে আড়াল করাতেই এই হামলা বলে জানা গিয়েছে। আবার তৃণমূলপন্থী ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছেন, দুর্নীতির মামলা না তোলায় স্কুলের প্রধান শিক্ষকের মদতেই এই হামলা হয়েছে। তবে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক সৈয়দ ইমতেয়াজ আহমেদ। এদিন ঘটনাটি ঘটে নরেন্দ্রপুর থানার বনহুগলী-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বলরামপুর মন্মথনাথ বিদ্যামন্দির স্কুলে। 
স্থানীয় বাসিন্দারা এদিন অভিযোগ করেছেন, স্কুলে আধিপত্য কায়েম করতে তৃণমূলের শিক্ষা সেলের নেতা রত্নদীপ মিশ্র প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এককাট্টা করেছেন। এই পরিস্থিতিতে অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা তৃণমূলের শিক্ষা সেলের সঙ্গে যুক্ত হলেও প্রায় ১০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা নীরব রয়েছেন। মাসছয়েক আগে তৃণমূলের শিক্ষা সেলের ওই নেতাসহ ৪ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুল পরিচালনায় অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন প্রধান শিক্ষক। তারপর ওই শিক্ষকেরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে মামলা করেন। এই মামলার কয়েক দফা শুনানির পর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে স্কুলে সরকারি অডিটর অডিট করেন। 
এই পরিস্থিতির মধ্যেই কিছুদিন আগে স্কুলের অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে তৃণমূলপন্থী শিক্ষক তারক ঘোষের বিরুদ্ধে। স্থানীয় নরেন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে, পকসো আইনে মামলাও হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে জানান, অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে আড়াল করতে আক্রান্ত ওই ছাত্রীকে ধমকানো পর্যন্ত হয়েছে। তৃণমূলপন্থী শিক্ষক-শিক্ষিকারা অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের পাশে দাঁড়ানোয় এলাকার অভিভাবক থেকে স্থানীয় তৃণমূল নেতা, কর্মীরা বিষয়টি ভালো চোখে দেখছিলেন না। আজকের এই ঘটনা তারই বহিঃপ্রকাশ, এমনটাই অভিমত তাঁদের। স্কুল পরিচালন সমিতিতে তৃণমূলের শিক্ষা সেলের নেতা রত্নদীপ মিশ্র, শ্যামাশ্রী গাঙ্গুলি, শিবনাথ ছাঁটুই শিক্ষক প্রতিনিধি হিসাবে রয়েছেন। তাঁরাই স্কুলের আধিপত্য কায়েম করতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সকলকে এককাট্টা করতে চাইছেন। স্কুলে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছেন এই শিক্ষকেরাই। এমনকি, ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের পাশে দাঁড়ানো এবং তাঁকে আড়াল করাতেই গোটা এলাকার মানুষ, অভিভাবকেরা ক্ষিপ্ত হয়েছেন ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে স্থানীয় তৃণমূলের নেতা, কর্মীরাও ওই শিক্ষকদের কাণ্ডকারখানায় ক্ষুব্ধ হওয়ায় এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। 
এদিকে স্কুলের আক্রান্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা মূল ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে অভিযোগ করে বলেছেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টে সম্প্রতি মামলা করা হয়। ওই মামলা প্রত্যাহার করতে তাঁদের উপর বেশ কয়েকবার চাপ দেওয়া হয়। মামলা প্রত্যাহার না করায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলার ঘটনায় এদিন নরেন্দ্রপুর থানায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। 
ঘটনার বিবরণে জানা গিয়েছে, এদিন স্কুলের প্রথম ক্লাস চলাকালীন স্থানীয় তৃণমূলের নেতা, কর্মী, অভিভাবকসহ প্রায় ৫০ জন স্কুলে আচমকা ঢোকেন। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর চড়াও হয়ে হামলা চালান। মোবাইল ফোনে ছবি তুলতে গেলে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা স্কুলের এই নৈরাজ্য বন্ধ করার দাবিতে সরব হয়েছেন। তাঁদের কথায়, প্রকৃত ঘটনার তদন্ত ও দোষী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে স্কুলের পঠনপাঠন ব্যবস্থা ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে সুষ্ঠুভাবে চালু করা হোক। ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। 
এদিন নরেন্দ্রপুরের স্কুলের মধ্যে এই তাণ্ডব নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, ‘‘এ বিষয়ে তথ্য তলব করা হচ্ছে। ১০০ শতাংশ পদক্ষেপ করা হবে। আমি আগে বিষয়টা জানতাম না। কিন্তু কাউকে ছাড়া হবে না। রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। যা পদক্ষেপ করার করব।’’
 

Comments :0

Login to leave a comment