Khandaghosh

নেপথ্যে মন্দিরে তালা দেওয়া, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে নিহত এক, জখম ১৬

রাজ্য জেলা

খণ্ডঘোষ ব্লকের সগরাই গ্রাম পঞ্চায়েতের চিন্তামণিপুর গ্রামে সোমবার সকালে মন্দিরে তালা দেওয়াকে কেন্দ্র করে শাসকদলের দু’পক্ষের সংঘর্ষে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। সংঘর্ষে ১৬ জন জখম হয়েছেন। জখমদের মধ্যে একজন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনার পর থেকে এলাকা থমথমে রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় বিশাল পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মৃতের নাম শীতল খাঁ (৭৩)। তিনি তৃণমূলের একজন কর্মী। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা  ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের ঘটনায় তৃণমূলের বুথ সভাপতি ফাগুন সহ বেশ কয়েকজন নেতার নাম জড়িয়েছে। জানা গিয়েছে, মন্দিরের দখল কাদের হাতে থাকবে, সেনিয়ে গ্রামের দু’টি তৃণমূলের গোষ্ঠীর বিবাদ। তার জেরেই এদিন সকাল থেকে দফায়–দফায় সংঘর্ষ হয়। বুকে পাথরের থেঁতলে আঘাতে আঘাতে শীতলবাবুর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। 
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে চিন্তামণিপুর গ্রামে দোল উৎসবের সময় কালীপুজো হয়। সেখানে মাইক বাজানো নিয়ে রবিবার গভীর রাতেই গ্রামের দু’টি পারিবারিক-গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল হয়। ছোটখাট সংঘর্ষও হয়েছিল। কিন্তু, পুলিশ তখনকার মতো তা নিয়ন্ত্রণে আনে। সোমবার সকালে একটি গোষ্ঠীর লোকজন মন্দির খুলতে এসে দেখেন যে, মূল ফটকে তালা মারা রয়েছে। মৃতের পরিজন ও আক্রান্তদের দাবি, ২০১৯ সালে গ্রামের বারোয়ারি থেকে বাদ দেওয়া হয় বেশ কিছু পরিবারকে। সেসময় গ্রামে একটি মারপিটের ঘটনা হয়। বারোয়ারি থেকে বাদ পড়া পরিবারের লোকজন বাঁশ, লাঠি, ইঁট সহ মদের বোতল দিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় বলে অভিযোগ। তবে, সেসময় সবাই মিলে আলোচনা করে পুজো কমিটি থেকে বর্তমানে তৃণমূলের গ্রামের বুথ সভাপতি শ্রীকান্ত খাঁ, পঞ্চায়েত সদস্য গৌরহরি খাঁকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। তাঁরাই এবার দল পাকিয়ে পুজোর ‘দখল’ নেওয়ার জন্য ঝামেলা শুরু করেছিল।  সোমবার শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দলে একজনের মৃত্যু দিয়ে তা শেষ হল। 
মৃতের ভাইপো আদিত্য খাঁ বলেন, ‘‘ওঁরা ৪০ জন মিলে আক্রমণ করেছিল। আমরা ছিলাম মাত্র ১২ জন। আমার কাকার বুকে পাথর দিয়ে আঘাত করে। তাতেই কাকা মারা গিয়েছেন। মন্দিরের দখল নেওয়ার জন্যই শ্রীকান্তরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চক্রান্ত করেছে। এটা খন্ডঘোষের তৃণমূলের বিধায়কের সাথে বুথ সভাপতির লড়াই!’’ জখমদের দাবি, বুথ সভাপতি ও পঞ্চায়েত সদস্যদের নেতৃত্বে রাতেই হামলা চালানো হয়। পরে সকালের দিকে ইট, মদের বোতল জড়ো করে রেখেছিল। আর মন্দিরে তালা মেরে রেখে দেয়। সেই খবর পেয়ে মন্দিরের দায়িত্বে থাকা আদিত্যরা ছুটে গেলে তাঁদেরকে বোতল দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। তা শুনে সবাই ছুটে গেলে বোতল আর ইঁট ছুঁড়তে থাকে। কারও কারও হাতে টাঙি, কাটারিও ছিল। মৃতের আর এক ভাইপো সুশান্ত খাঁ বলেন, ‘‘মন্দিরকে ঘিরে কোনও রাজনীতি নেই। কিন্তু, সোমবারের ঘটনাতেই অবশ্যই রাজনীতি আছে। অভিযুক্তদের পরিজনরা গ্রাম ছাড়া রয়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজনের দাবি, সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত ৪০-৫০টা মাইক তারস্বরে বাজানো হচ্ছিল। সেনিয়েই প্রতিবাদ করার জন্য ঝামেলা তৈরি হয়েছিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরেই আঘাতে না মাইকের আওয়াজে মারা গিয়েছে তা জানা যাবে।’’ মৃতের ছেলে অজয় খাঁ বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ ঘটনাটি শাসকদলের বুথ সভাপতি শ্রীকান্ত খাঁর নেতৃত্বে ঘটেছে।’’ গ্রাম্য-বিবাদে দলীয় নেতাদের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। 
 

Comments :0

Login to leave a comment