UKRAINE COUNTER OFFENSIVE

ইউক্রেনের প্রতি আক্রমণ রোখার দাবি রাশিয়ার

আন্তর্জাতিক

ukraine conflict china russia france brazil usa bengali news

পূর্ব এবং দক্ষিণ পূর্ব ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল রয়েছে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। রুশ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মূলত ডোনেস্ক, লুগানস্ক, জাপোরোজিয়া এবং খারসন প্রদেশের বড় অংশ। এই এলাকাগুলি থেকে রুশ সেনাবাহিনীকে হঠাতে গত ৩দিন ধরে প্রতি আক্রমণ শুরু করেছে ইউক্রেন। মূলত দক্ষিণ ডোনেস্ক এবং জাপোরোজিয়া প্রদেশে চলছে এই প্রতি আক্রমণ। যদিও রাশিয়ার দাবি, প্রতি আক্রমণে এসে এক ইঞ্চি জমিও দখল করতে পারেনি ইউক্রেন। বরং বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়েছে ইউক্রেন সেনাকে। 

ইউক্রেনের এই প্রতি আক্রমণকে সহযোগিতা করে চলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ গোটা ন্যাটো সামরিক জোট। ইউক্রেনের এই প্রতি আক্রমণকে ঢেলে সাজাতে কয়েকশো লিওপার্ড-১, চ্যালেঞ্জার এবং অ্যাব্রাম্‌স ট্যাঙ্ক পাঠিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন সহ পশ্চিমী দেশগুলি। ২০২৩ সালের বসন্তকাল থেকেই এই প্রতি আক্রমণের প্রস্তুতি শুরু করে ইউক্রেন। গঠিত হয় ৩লক্ষ সেনার নতুন একটি বাহিনী। 

এরইমধ্যে তুরষ্কের সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হওয়া খবর অনুযায়ী, রাশিয়ার দখলে থাকা দক্ষিণ ইউক্রেনের মেলিটোপোল শহরকে পাখির চোখ করে এগোতে চাইছে ইউক্রেন সেনা। এই অভিযানের জন্য জাপোরোজিয়ার ওরেখভস্কি গ্রামের কাছে ৩০ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে ইউক্রেন। 

তুরষ্কের সংবাদমাধ্যমগুলির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনের এই বাহিনীতে ৩০ হাজার জওয়ান ছাড়াও রয়েছে ১০০-১৫০ ট্যাঙ্ক, ৩০০ কামান এবং ১ হাজারের কাছে সাঁজোয়া গাড়ি। ইউক্রেন এবং রাশিয়ার লাইন অফ কন্ট্যাক্ট, বা যেই সরলরেখা বরাবর দুই সেনা মুখোমুখি হচ্ছে, বরাবর মাইন এবং ট্রেঞ্চের বলয় তৈরি করে রেখেছে রাশিয়া। সেই সুরক্ষা বলয় ভেদ করতেই এই বিপুল বাহিনী মজুদ করেছে ইউক্রেন। 

তুরষ্কের বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ইউক্রেন সেনার আধিকারিকরা বিলক্ষণ জানেন, রাশিয়ার সুরক্ষা বলয় পেরোতে গেলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে। ছোটো খাটো বাহিনীর সাহায্যে এই বলয় পেরোনো সম্ভব নয়। তাই বিশাল আয়োজন করা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করতে হলেও, পরবর্তীতে সংখ্যার জোরে রুশ সেনাকে পিছু হঠানোর স্বপ্ন দেখছে ইউক্রেন। 

ইউক্রেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, রুশ সেনাকে লাইন অফ কন্ট্যাক্ট থেকে পিছু হঠানোর পরে তৈরি হওয়া ‘গ্যাপ’ বা শুন্যস্থানে আরও ২০ হাজার সেনার একটি বাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্রে নামানো হবে। তারপর এই দুই বাহিনী সাড়াশির মতো দুইদিক থেকে মেলিটোপোল শহরের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে। ইউক্রেনের সামরিক বিশেষজ্ঞদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, মেলিটোপোলের দখল নিতে পারলে, ইউক্রেনে থাকা রুশ বাহিনীকে দুই ভাগে ভেঙে ফেলা সম্ভব। একইসঙ্গে মেলিটোপোল থেকে ভবিষ্যতে ক্রিমিয়াতেও হামলা চালানো সম্ভব হবে। 

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত রুশপন্থী সরকারকে ক্ষমতা থেকে হঠিয়ে দেয় পশ্চিমপন্থী বিক্ষোভকারীরা। তার পালটা ক্রিমিয়ার দখল নেয় রাশিয়া। 

সামরিক বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মেলিটোপোল অভিযানকে আড়াল করতে জাপোরোজিয়া এবং দক্ষিণ ডোনেস্ক অঞ্চল জুড়ে একের পর এক  হামলা চালাচ্ছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের লক্ষ,এই হামলার মাধ্যমে রুশ সুরক্ষা বলয়ের দুর্বলতা খুঁজে বের করা । পরবর্তীতে সেই দুর্বল এলাকাতেই আছড়ে পড়বে বৃহত্তর আঘাত।

যদিও রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রকের বিবৃতি অনুযায়ী, এই গোটা অঞ্চলে এক ইঞ্চি জমি থেকেও রুশ বাহিনীকে পিছু হঠাতে পারেনি ইউক্রেন। 

রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে,  ৩দিন ধরে চলা লাগাতার সংঘর্ষে ৩৭১৫জন ইউক্রেনীয় জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন। এর পাশাপাশি ইউক্রেনের ৫২টি ট্যাঙ্ক, ২০৭টি সাঁজোয়া গাড়ি, ১৩৪টি অন্যান্য গাড়ি, ৫টি যুদ্ধবিমান এবং ২টি হেলিকপ্টার ধ্বংস করা হয়েছে। ইউক্রেনের হামলা প্রতিহত করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৭১জন রুশ সেনা। আহতের সংখ্যা ২১০। 

Comments :0

Login to leave a comment