ভোটার কার্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হবে আধার নম্বর। মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানালো জাতীয় নির্বাচন কমিশন। জানানো হয়েছে, ভারতীয় সংবিধানের ৩২৬ নম্বর ধারা, ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ২৩(৪), ২৩(৫) এবং ২৩(৬) ধারা এবং এই সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের ভিত্তিতে আধার এবং ভোটার কার্ডের সংযুক্তি করা হবে। এর জন্য নির্বাচন কমিশনের টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ ইউআইডিএআই’র প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা শুরু করবে। আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ড সংযুক্তিকরণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার দিল্লির নির্বাচন সদনে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেছিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। বৈঠকে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবসহ উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা, ছিলেন আইন সচিব রাজীব মানি এবং ইউআইডিএআই’র সিইও ভুবনেশ কুমার। বৈঠকেই আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযুক্তির পদ্ধতিগত কাজ শীঘ্রই শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে তারা শীঘ্রই এই প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে প্রযুক্তিগত পরামর্শ নেওয়া শুরু করছে। এই সংযুক্তিকরণের পদ্ধতিগত কাজ দ্রুত শুরু হবে। সংসদের ভেতরে ও বাইরে বিরোধীদল ভোটার তালিকায় অনিয়ম এবং একাধিক ভোটার কার্ডে একই নম্বর থাকার অভিযোগ তোলে সেই পরিপেক্ষিতে এদিন এই বৈঠক হয়। ভোটার হিসেবে নাম নথিভুক্ত করার জন্য ক্লোন করা আধার নম্বর ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। নির্বাচন কমিশনার সুখবীর সিং সান্ধু এবং বিবেক জোশীও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এপিকের সঙ্গে আধার সংযুক্তিকরণের টেকনিক্যাল বিষয়টির জন্য দেশের আধার নিয়ামক সংস্থা ইউআইডিএআই এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আলোচনা শুরু করবে নির্বাচন কমিশন এমনটাই জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য বায়োমেট্রিক তথ্যযুক্ত আধার কার্ড তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইউপিএ সরকার। কাজও তখন শুরু হয়েছিল। ২০১১ সালের লোকসভা ভোটের আগে নির্বাচনী প্রচারে আধার কার্ডকে তুলোধোনা করেছিলেন বিজেপি’র সেদিনের প্রধানমন্ত্রীর পদপ্রার্থী এবং আজকের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েই রাতারাতি ভোল পালটে ফেলেন তিনি। ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে তিনি আধার কার্ডকে সমস্ত আর্থিক পরিষেবা এবং সরকারি ভরতুকির প্রকল্পে বাধ্যতামূলক করার ব্যবস্থা নেন। এমন কী আধার কার্ড সংযুক্ত করা না হলে আর্থিক পরিষেবা এবং সরকারি ভরতুকির প্রকল্পের সুবিধা মিলবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। আধার কার্ড না থাকায় সরকারের নির্দেশ পালন করতে না পারায় দেশের নানা জায়গায় রেশন এবং মিডডে মিল বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছিল। যেমন, আধার নম্বর যুক্ত করতে না পারায় মধ্য প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি রাজ্যে গরিব মানুষের রেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার জেরে অনাহারে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। পাশাপাশি সরকারি নির্দেশের বিরোধিতা করে একগুচ্ছ মামলা দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে। আধার কার্ডে রয়েছে নাগরিকদের বায়োমেট্রিক তথ্য। এই কার্ডকে বিভিন্ন পরিষেবা ও প্রকল্পে বাধ্যতামূলক করে সরকার নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার লঙ্ঘন করছে বলে মামলাগুলিতে অভিযোগ করা হয়েছে। তাছাড়াও ব্যাঙ্ক, বিমা, মোবাইল পরিষেবায় যুক্ত রয়েছে বহু বেসরকারি সংস্থা। তাদের আধার নম্বর জানিয়ে দিলে তারা যে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থায় নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়ে তার অপব্যবহার করবে না, তার নিশ্চয়তাই বা কোথায় বলেও প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। বাস্তবে তেমন ঘটনা ঘটেছেও। একটি বেসরকারি মোবাইল কোম্পানি গ্রাহকদের না জানিয়েই তাঁদের আধার নম্বরকে কাজে লাগিয়ে প্রত্যেককে কোম্পানি পরিচালিত পেমেন্ট ব্যাঙ্কে যুক্ত করে দিয়েছিল, যা সম্পূর্ণ বেআইনি কাজ। পরে বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হতে ওই কোম্পানি পিছু হটে। সরকারি যে সংস্থা আধার কার্ড প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বে, সেই ইউআইডিএআই (ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অব ইন্ডিয়া)-র তরফেও সম্প্রতি স্বীকার করা হয়েছে, আধার কার্ডের তথ্যের অপব্যবহার হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আধার নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত আরও বেশি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। সুপ্রিম কোর্ট যদিও বলেছে যে আধার নম্বর শুধুমাত্র কল্যাণমূলক কর্মসূচির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে ভোটার হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আধার নম্বর প্রদান করা বাধ্যতামূলক নয়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল যে সারা দেশে ৬৬.২৩ কোটি ভোটার স্বেচ্ছায় তাদের আধার নম্বর জমা দিয়েছেন। বর্তমানে মোট ভোটারের সংখ্যা ৯৯.২২ কোটি।
EPIC-Aadhaar Linking
ভোটার কার্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হবে আধার, সিদ্ধান্ত কমিশনের

×
Comments :0