প্রবীর দাস
‘‘
আইন কিন্তু মানুষ তৈরি করেছে তার নিজের বর্তমান,ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে। সাধারণ খেটে খাওয়া গরিব মেহনতি মানুষের জীবনজীবিকা, রুটিরুজি, বাড়ির ছাদ যদি কেড়ে নেন তবে মানুষ সব হিসেব বুঝে নেবেন। কোনও খাকি উর্দি মানুষ দেখবেন না। মানুষ জাগছেন। আপনারা সাবধান হয়ে যান।’’
শনিবার বসিরহাটের সভা থেকে পুলিশ এবং তৃণমূলের ধামাধরা সরকারি আধিকারিকদের এমনই হুঁশিয়ারি দিলেন ডিওয়াইএফআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির ডাকে এই সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সদস্য ও প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দার এবং সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ। তাঁরা বলেছেন, সব অংশ একজোট লড়াই চলছে সন্দেশখালিতে। জাত বর্ণ ধর্মের নামে লড়াইকে ভাঙতে তৎপর আরএসএস। মানুষ তা হতে দেবেন না।
তিনি বলেন, ‘‘সন্দেশখালি যেমন আক্রমণের প্রতীক তেমনি সন্দেশখালি প্রতিবাদেরও প্রতীক। সন্দেশখালি থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজ্যের দিকে দিকে তৃণমূলের নৈরাজ্য, লুটতরাজ, নারীর সম্ভ্রম নিয়ে ছিনিমিনি খেলা, জঙ্গলের রাজত্ব কায়েম করা সর্বোপরি মহিলাদের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করতে ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্নভিন্ন করে দিতে মহিলাদেরকেই সামনের সারিতে আসতে হবে। এটাই সময়ের দাবি।’’
সন্দেশখালির বীভৎসতা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা বাংলা তথা ভারতকে। নারীর সম্ভ্রম লুট, জমি, মেছোঘেরি লুটের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে শনিবার বসিরহাট চলো ডাক দেয় সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটি। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সন্দেশখালির আন্দোলনরত মহিলাদের কুর্নিশ জানিয়ে এই কর্মসূচি ঘৃণার রাজনীতিকে পরাস্ত করে মহিলাদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছে।
সভা হয় বসিরহাট টাউন হল ময়দানে। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা সভানেত্রী যশোধরা বাগচী। শুরুতে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন সৌমেন রায়। মীনাক্ষী মুখার্জি ছাড়াও এদিনের সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক কনিনীকা ঘোষ, জেলা সম্পাদক রুনু ব্যানার্জি, পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সমিতির নেত্রী ভ্রান্তি অধিকারী, অগ্রগামী মহিলা সমিতির দোলা মাসচটক ও সিপিআই(এম) নেতা এবং সন্দেশখালির প্রাক্তন বিধায়ক নিরাপদ সর্দার।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সন্দেশখালির মহিলাদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানিয়ে কনীনিকা ঘোষ বলেন, ‘‘জাত ধর্ম বর্ণের নামে মানুষকে ভাগ করে দিয়ে সন্দেশখালির অহল্যা মায়েদের আন্দোলনকে ভেঙে দিতে তৎপর আরএসএস। ওদের 'মনুবাদ' হিন্দু মুসলমানের মধ্যে ভাগ করে দিতে চায়। মহিলা সমাজকে পদদলিত করে রাখতে চায়। আমাদের লড়াই মহিলাদের হক আদায় করে নিতে চায়।’’
কনীনিকা বলেন, ‘‘বামফ্রন্টের সময়ে দেওয়া পাট্টা বর্গা জমি কেড়ে নিয়েছে শেখ শাহজাহান শিবু হাজরা উত্তম সর্দাররা। বছরের পর বছর লিজের টাকা দেয়নি। পিঠে তৈরির অছিলায় মা বোনদের ইজ্জত কেড়ে নিয়েছে। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি সন্দেশখালির মা বোনেদের পাশে আগেও ছিল এখনো আছে ভবিষ্যতেও থাকবে। এটাই আমাদের শপথ, এটাই আমাদের অঙ্গীকার।’’
সভায় নিরাপদ সর্দার তেভাগা আন্দোলনের অতীত ঐতিহ্য তুলে ধরে বলেন, ‘‘তেভাগা আন্দোলনে মহিলারা সামনের সারিতে থেকে লড়াই করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সেই তেভাগার মাটিতেই তারা দিনের পর দিন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ফের তাঁরাই আবার অধিকার বুঝে নিতে, পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। যেখানে কোন রঙ বর্ণ জাত পাত কিছুই ছিল না। ছিল শুধু সম্মান,মর্যাদা রক্ষার লড়াই। সেই লড়াইকে ভেঙে দিতে বিজেপি সন্দেশখালিতে গিয়ে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিচ্ছে। আসলে ওদের লক্ষ্য লড়াই ভেঙে দেওয়া।’’
নিরাপদ বলেন, ‘‘বামপন্হার অতীত ঐতিহ্য আছে সন্দেশখালির মাটিতে। মানুষ তার অভিজ্ঞতায় দেখেছেন এবং বলছেন আমরা আগে ভালো ছিলাম। সে কারণে মানুষ নিজেদের গ্রামে আবার লাল ঝান্ডায় ভরিয়ে দিচ্ছেন। যা কিনা ১২বছর আগে কল্পনা করা যেত না। দ্বীপগুলিতে পতপত করে উড়ছে লালঝান্ডা। সন্দেশখালির মানুষ বিজেপির ষড়যন্ত্র ধরে ফেলেছেন।’’
Comments :0