ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষের মাঝেই বিদ্রোহ আছড়ে পড়েছিল রাশিয়ায়। তবে শেষ পর্যন্ত ‘ওয়াগনার’ বিদ্রোহীরা মস্কোর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েও পিছু হঠলো। শনিবার রাতের খবর, রাশিয়াবাসীর রক্তপাত চায় না বলে প্রথমে থমকে থেকে তারপর পিছু হঠার সিদ্ধান্ত নেয় ধনকুবের ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের ভাড়াটে যোদ্ধার দল।
এই ইয়েভজেনি আবার রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। বিদ্রোহ ঘোষণা করেও কেন তিনি হঠাৎ পিছু হঠার সিদ্ধান্ত নিলেন তা অবশ্য এদিন রাতে হজানা যায়নি। তবে আগে পুতিন ‘বিশ্বাসঘাতকদের’ বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন।
বিদ্রোহীরা যে মস্কোর দিকেই এগচ্ছিল তার প্রমাণ মিলেছিল এদিন শহরের মেয়র সের্গেই সোবানিনের একটি টেলিগ্রাম বার্তাতেই। তিনি বিদ্রোহের কথা স্বীকার করে নিয়ে শহরবাসীকে খুব প্রয়োজন না পড়লে ঘর থেকে বেরোতে নিষেধ করেছিলেন। সোমবার ‘কাজের দিন নয়’ বলেও জানিয়ে দেন তিনি। এরই সঙ্গে শহরের প্রশাসন যে এই বিদ্রোহ নিয়ে চূড়ান্ত সতর্ক, একথা জানাতেও দ্বিধা করেননি তিনি।
এরই পাশাপাশি শুক্রবার রাত থেকেই রাশিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটসাঁট করে ফেলা হয়। মস্কোর রাস্তায় সামরিক ট্যাঙ্ক ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে। যান চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। ইন্টারনেট পরিষেবায় নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে। এই নিষেধাজ্ঞা আপাতত ১ জুলাই পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছে মস্কো। এমনিতেও এক বছরেরেও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘর্ষে বিধ্বস্ত রাশিয়া। এর উপরে রয়েছে উন্নত দেশগুলির জারি করা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা।
আগের খবরে জানা যায়, ট্যাঙ্ক এবং সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে প্রায় ২০ হাজার ওয়াগনার বিদ্রোহী মস্কো দখলের অভিযানে নেমেছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তাদের রুখতে রাশিয়ার সামরিক হেলিকপ্টার ধারাবাহিক আক্রমণ চালাচ্ছে। এমনকি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রাণহানির ঝুঁকি সত্ত্বেও আকাশপথে হামলা চালানো হচ্ছে, এও জানা গিয়েছে।
রাষ্ট্রপতি পুতিন এদিন জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেন, ‘‘বিশ্বাসঘাতকেরা উপযুক্ত জবাব পাবে। এই মুহূর্তে যা ঘটছে, তা বেইমানি, বিশ্বাসঘাতকতা। অতি উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং ব্যক্তিস্বার্থ রয়েছে এর সঙ্গে। যে বা যাঁরা দেশের সঙ্গে এই বিশ্বাসঘাতকতা করছেন, সশস্ত্র বিদ্রোহের পরিকল্পনা যাঁদের, সন্ত্রাসবাদীদের মতো প্রতারণা করছেন, দেশের আইন এবং নাগরিকদের কাছে তাঁদের কঠোর শাস্তি অনিবার্য।’’ এই বিদ্রোহকে তিনি ‘পিছন থেকে ছুরি মারা’ বলে কটাক্ষ করেছেন।
এই সঙ্কটের মুহূর্তে রুশ নাগরিকদের একজোট হওয়ার বার্তা দেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের অভ্যন্তরীণ অশান্তি আমাদের রাষ্ট্রীয় এবং জাতিগত পরিচয়ের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটা সমগ্র রাশিয়া এবং দেশের নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত ধাক্কার। এই সময়ে জাতীয় ঐক্য অবশ্য জরুরি।’’ একই সঙ্গে প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছেন তিনি।
বস্তুত, রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সাথে এক নাটকীয় লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে ভাড়াটে ওয়াগনার গোষ্ঠী। বিদ্রোহী বাহিনীর মূল নেতা প্রিগোজিন যদিও ক্রেমলিন বা পুতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙ্গুল তোলেননি। তিনি মূলত রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বের পতন ঘটাতে চাইছেন। ইউক্রেন সঙ্গে সংঘর্ষ ঘিরেই তাঁর নিয়ন্ত্রিত ভাড়াটে আধাসামরিক বাহিনী ওয়াগনার গোষ্ঠীর সঙ্গে বিরোধ বাঁধে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর।
ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আক্রমণে তাঁদের যথেষ্ঠ পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র সহ সামরিক সাহায্য করছে না রাশিয়ার সেনাবাহিনী বলে প্রিগোজিন অনেকদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছিলেন। একারণেই রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে ‘উপযুক্ত শিক্ষা দিতে’ এবার সরাসরি বিদ্রোহের পথ বেছে নিয়েছেন তিনি বলে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যে তাঁরা ভেরোনেজের সামরিক ঘাঁটি দখলে নিয়েছে বলে সংবাদসংস্থা বিবিসি খবর করছে।
ভারতীয় সময় অনেক রাতের খবর, বেলারুশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইয়েভজেনির কথা হবার পরে তাঁর বাহিনী আপাতত যাত্রা স্থগিত রেখেছে।
এদিন রোস্তভের সেনা সদর দপ্তরের কাছাকাছি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় বলে জানিয়েছে রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটি। এক মিনিটের একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, ঘটনাস্থল থেকে অনেক লোক পালিয়ে যাচ্ছেন। তবে এ ঘটনায় হতাহতের তাৎক্ষণিক কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি বা সদর দপ্তরের ভবনটির কোনও ক্ষতি হয়েছে কি না তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
Comments :0