বৈঠকে চাকরিপ্রার্থীদের ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, ‘‘সরকারও চাইছে যোগ্যরা চাকরি পাক। কেউ বঞ্চিত হোক তা চান না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কীভাবে যোগ্যদের চাকরি দেওয়া যায় তা খতিয়ে দেখেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এই নিয়োগের ব্যাপারে যে আইনি জটিলতা আছে, তা কাটাতে হবে আগে। সেটাই করবে সরকার।’’
চাকরিপ্রার্থীরা যদিও নিশ্চিত নন। ২০১৯ সালে মুখ্যমন্ত্রীই নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কমিটি গড়েছিলেন। সেই কমিটির প্রধানই এখন শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে জেলবন্দি!
১ হাজারের বেশি দিন ধরে নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন নবম-দ্বাদশ এসএলএসটি বিভাগের চাকরিপ্রার্থীরা। শনিবার ছিল তাঁদের অবস্থান আন্দোলনের হাজার তম দিন। সেদিন গান্ধীমূর্তির পাদদেশে অবস্থানে উপস্থিত হন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁকে ঘিরে তীব্র বিক্ষোভ হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ফোন করেন। ব্রাত্য জানান, সোমবার তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
সোমবার দুপুর সাড়ে তিনটে থেকে শুরু হয়ে বিকেল পাঁচটার কিছু পরে বৈঠক শেষ হয়। সরকারের তরফে দাবি করা হচ্ছে, চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। সদর্থক পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ব্রাত্য বসু। এই বৈঠকে উপস্থিত আইন বিভাগের আধিকারিককে বিষয়টা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন তিনি। ৫ হাজার ৫৭৮ জন চাকরিপ্রার্থীর নিয়োগ নিয়ে সরকারের কী আইন আছে, তা দেখার জন্য আইন বিভাগের এক আধিকারিককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এই বৈঠকে স্থির হয়, সমাধানসূত্র বের করতে ২২ ডিসেম্বর আরেক দফা বৈঠক হবে দু’তরফের।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাসচিব মণীশ জৈন, স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান রামানুজ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ আরও অনেকে। চাকরিপ্রার্থীদের পক্ষ থেকে এই বৈঠকে ছিলে কুণালও।
এই আবহে তৃণমূলের তরফে প্রচার শুরু হয়েছে, নিয়োগ জটিলতা কাটাতে ভূমিকা নিচ্ছে সরকার। কিন্তু আন্দোলনকারীদের বড় অংশের তরফে সামনে আনা হচ্ছে আরও একটি তথ্য। তাঁরা জানাচ্ছেন, নিয়োগের প্রতিশ্রুতি এর আগেও মিলেছিল। ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ মুখ্যমন্ত্রী ২০১৬’র এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শান্তিপ্রসাদ সিনহাকে সামনে রেখে গঠিত হয়েছিল ৫ সদস্যের এক কমিটি। পরবর্তীকালে দেখা যায়, দুর্নীতির অন্যতম পান্ডা হচ্ছেন এই শান্তিপ্রসাদ। তিনি বর্তমানে সংশোধনাগারে রয়েছেন।
এই অংশের বক্তব্য, ২০২১ সালের ঈদের দিনেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন নিয়োগ প্রার্থীরা। তখনও চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আজ অবধি কোনও সুরাহা হয়নি।
চাকরি প্রার্থী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ইন্দ্রজিৎ ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘আমরা চাই এই সঙ্কটের দ্রুত সমাধান হোক। অযোগ্যদের চাকরি থেকে বের করে যোগ্যদের নিয়োগপত্র দিতে হবে। কিন্তু তারপরেও সকলের চাকরি হওয়ার সম্ভাবনা কম। তখন সরকার বাকিদের জন্য আইনসঙ্গত নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এসে নিয়োগপত্র দিক। এটাই সমাধান।’’
Comments :0