Left Front Nomination

বামফ্রন্ট প্রার্থী ৫৩ হাজার

রাজ্য

west bengal panchayat election


এবারের পঞ্চায়েতে যে অন্য রকমের লড়াই হবে তা আগে থেকেই বলে আসছিলেন বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ। বাস্তবে মনোনয়নপত্র জমা দেবার পর্ব শেষ হওয়ার পরেই যে চিত্র উঠে আসছে তাতেও স্পষ্ট যে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন আর ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন এক নয়। সন্ত্রাস চালিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পঞ্চায়েত দখলের সুযোগ তৃণমূলের সামনে এবার আর বিশেষ নেই। বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং আইএসএফ যে মনোনয়ন জমা দিয়েছে মিলিতভাবে দেখলে এবার পঞ্চায়েতের তিন স্তরে মোট ৭৩৮৮৭ টি আসনের মধ্যে ৭৩ হাজারের কিছু বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েছে এই তিন পক্ষই। বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী– এই মনোভাব স্পষ্ট শিরদাঁড়া টানটান করা বাম কংগ্রেস আইএসএফ প্রার্থীদের। 
মনোনয়ন পর্ব শেষ হলেও এখনও প্রত্যাহারের পর্ব বাকি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রথমে মনোনয়ন পর্বে বিরোধীদের ওপরে হামলা চালিয়ে বাধা দিয়েছিল তৃণমূলের দুষ্কৃতীবাহিনী। বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডলের ‘গুড় বাতাসা’ স্টাইলে বিরোধী শূন্য করা হয়েছিল পঞ্চায়েতের প্রায় তিন স্তরকেই।

সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম তখন প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়াতে গেলে তাঁরও মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়া মহিলাদের চুলের মুঠি ধরে রাস্তায় ফেলে মেরেছিল তৃণমূল বাহিনী। রাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে ছিল এরকমই বহু চিত্র। শুধু তাই নয়, মনোনয়ন যাঁরা জমা দিতে পেরেছিলেন তাঁদেরও বাড়ি বাড়ি গিয়ে অপহরণ করে, মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে, বাড়ির শিশুদের তুলে নিয়ে গিয়ে হুমকি দিয়েছিল। মনোনয়ন পর্ব থেকে প্রত্যাহার পর্ব জুড়ে চলেছিল এই তাণ্ডব। ফলে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ৩৪ শতাংশ আসনে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল। বামফ্রন্ট তৎকালীন ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের মোট ৫৮৬৯২টি আসনের মধ্যে ২১৬০২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পেরেছিল, অর্থাৎ মাত্র ৩৭ শতাংশ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পেরেছিল গণতন্ত্র হত্যার নির্বাচনে।

২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বেই ইঙ্গিত স্পষ্ট, গ্রাম জাগছে। সন্ত্রাসের কাছে আর মাথা নিচু করে থাকতে রাজি নয়। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে এবারের নির্বাচনে পঞ্চায়েতের তিন স্তরে নির্বাচিত হবেন মোট ৭৩ হাজারের বেশি। বামফ্রন্ট মিলিতভাবে ৫৩ হাজারের বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এছাড়াও কংগ্রেস ১৭৭৫০ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। অর্থাৎ বাম কংগ্রেস মিলিতভাবে প্রায় ৭০ হাজার আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এর সঙ্গে রয়েছেন ৩হাজারের বেশি আইএসএফ প্রার্থী। বিজেপি মোট ৫৬৩২১ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কিন্তু সব মিলিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি বিরোধী প্রার্থীর সংখ্যা ৭৩ হাজারের বেশি, অর্থাৎ লড়াই থাকছে তৃণমূল বিজেপি দুইয়ের বিরুদ্ধেই । জোর করে মনোনয়ন প্রত্যাহার না করাতে পারলে তৃণমূলের পক্ষে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়া আসন থাকবে অনেক কম। 
এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট একদিকে পঞ্চায়েত থেকে লুটেরা তাড়ানোয় মানুষের মরিয়া মনোভাব অন্যদিকে দখল বজায় রাখতে তৃণমূলের বেপরোয়া চেষ্টাই গত কয়েকদিনের রক্তাক্ত মনোনয়ন পর্বের মূল কারণ। এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হবে সেটা তৃণমূল ভাবতেও পারেনি।

এর সঙ্গে রয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের সমস্যা। এই গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের প্রতিফলন সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির নবজোয়ার যাত্রাতেও দেখা গেছে, নকল ভোট প্রক্রিয়ায় মারামারি পর্যন্ত হয়ে গেছে। গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব সামলাতে জেরবার হয়েই তৃণমূল ভোটের প্রার্থী প্রক্রিয়া পেশাদার এজেন্সির হাতে দিয়েছিল এবং শেষ বেলায় দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিয়েছে। তৃণমূলের প্রায় সব মনোনয়নই জমা পড়েছে ১৪ এবং ১৫ জুন। কোন পদ্ধতিতে তৃণমূল একদিনেই ৪০ হাজার মনোনয়ন জমা দিয়েছে তা নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন উঠে গেছে। তারপরেও দেখা যাচ্ছে, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েত তিন স্তরেই মোট আসনের থেকে তৃণমূলের প্রার্থী সংখ্যা বেশি। জেলা পরিষদে মোট আসন ৯২৮, তৃণমূলের পক্ষে মনোনয়ন দিয়েছেন ১০৭৯ জন। পঞ্চায়েত সমিতিতে মোট আসন ৯৭৩০। তৃণমূল মনোনয়ন জমা দিয়েছে ১১৫২৭টি।  গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট আসন ৬৩২২৯। তৃণমূলের পক্ষে মনোনয়ন জমা পড়েছে ৭৩২১১টি। সবমিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার মনোনয়ন বেশি জমা পড়েছে তৃণমূলের। এরমধ্যে কতজন দলের পরিকল্পনামাফিক ‘ডামি’ প্রার্থী সেটা স্পষ্ট হবে ২০ জুন মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর্ব মিটলে। কিন্তু গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে শামিল প্রার্থীদেরও সামলাতে হবে তৃণমূলকে।

 

Comments :0

Login to leave a comment