working class unity

মেহনতির জোটেই চ্যালেঞ্জ বিভাজনকে

সম্পাদকীয় বিভাগ

working class unity

২০ মে দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে দশটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন। তার আগে, ২০ এপ্রিল কলকাতায় ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে  সমাবেশের ডাক দিয়েছে রাজ্যের শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর এবং বস্তি আন্দোলন। 
দেশে বেকারির হার চড়া। কাজ যা আছে সেখানে শ্রমের মর্যাদা নেই। দেশের শ্রমিক আন্দোলন বলেছে যে শ্রমকোড এনে শ্রমিকদের দাসে পরিণত করার ব্যবস্থা হচ্ছে। স্থায়ী কাজ নেই, কতক্ষণ কাজ করতে হবে তার ঠিক নেই, মজুরি বা রোজগারের নিশ্চয়তা তো দূরের কথা। এ রাজ্যে আলুচাষিরা ফসল রাস্তায় ফেলে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। রাজ্যের সরকার যে সহায়ক মূল্য ঘোষণা করছে তাতে কৃষকের খরচ ওঠা কঠিন। 
রাজ্যে দুর্নীতি-দু্ষ্কৃতীতন্ত্র দাপট দেখাচ্ছে। গণতান্ত্রিক পথে প্রতিবাদের স্বর তুললেই প্রশাসনিক হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। এ রাজ্যে আসছে না কাজের সুযোগ খুলে দেওয়ার মতো শিল্প। কাজ নেই। যুবরা চলে যাচ্ছে বাইরের রাজ্যে, বিপদ মাথায় নিয়ে, পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে। তাঁদের অনেকের দেহ ফিরছে কফিনবন্দি হয়ে। আরেকদিকে মজুরির সঙ্কট, রোজগারের সঙ্কট। ২০ এপ্রিল ব্রিগেডের প্রচারে, মতবিনিময়ে আসছে জনজীবনের কথা। 
দেশে বিজেপি-আরএসএস, রাজ্যে তৃণমূলের মতো শক্তি তৎপর জীবিকার দাবিতে জনতার সরব দাবির স্বর চুপ করিয়ে দিতে। হামলা-হুমকি তো আছেই। সেই সঙ্গে রয়েছে বিভাজনের কৌশল। হোলি সারা দেশে আনন্দের উৎসব বলেই পালিত হয়ে এসেছে। বরাবর রামনবমীও পালিত হয়েছে আনন্দে। গত কয়েক বছরের মতো এবারও পরিস্থিতি আর তেমন নেই। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হোলির দিন মুসলিমদের ঘরে ঢুকে থাকার নিদান দিচ্ছেন। একই দিনে, রমজান মাসে, শুক্রবারের নমাজ ছিল। তাকে ঘিরে সমানে চলেছে উসকানি। মৃত্যুর তিন শতক পেরিয়ে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবি তুলে উসকা দেওয়া হচ্ছে বিভাজনের রাজনীতি। সামনের দিকে এগনোর মতো কাজের ধারা নেই। পিছনের দিকে হাঁটিয়ে জনজীবনের দাবি আঁস্তাকুড়ে পাঠানোর কৌশল চলছে পুরোদমে।   
ধর্মীয় অনুষ্ঠান মানে এ রাজ্যে বিজেপি আর তৃণমূলের রাজনৈতিক প্রচার কর্মসূচি। বিধানসভায় বিজেপি’র শুভেন্দু অধিকারী হিন্দু-হিন্দু করছেন। আর মুখ্যমন্ত্রী তার প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বিধানসভায় ভাষণ দিচ্ছেন তিনি কত ধর্মপ্রাণ। বাজেট ভাষণে সর্বদা সরকারের অর্থনৈতিক নীতির চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়ে এসেছে। তার বদলে ‘পরিপূরক সাম্প্রদায়িকতা’ চলছে বিধানসভায়। চলছে ২০২৬’র বিধানসভা ভোটের আগে রাজনীতিতে দ্বিমেরু তৈরির মহড়া। এই আবহের কারণেই গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে ঈদ-রামনবমী পর্বে বিভাজনের উসকানিকে রুখে দেওয়া। সিপিআই(এম) স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে দাঙ্গার পর শান্তি মিছিল কেবল নয়। দাঙ্গা রুখতে আগে থেকেই রাস্তায় নামতে হবে। ব্রিগেডের প্রচারে শ্রমজীবী মহল্লায় বিভাজনের এই কৌশল রোখার পালটা ভাষ্য তৈরি হচ্ছে। রক্তে, ঘামে, জীবনের অভিজ্ঞতায় জীবিকার পক্ষে, ভবিষ্যৎ গড়ার পক্ষে দাবিতে একজোট হচ্ছেন লড়াকু মেহনতি। লড়াইয়ের এই জোটই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে বিভাজনের রাজনীতিকে।

Comments :0

Login to leave a comment