নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতার অভিযোগে শ্রীনগরে পথে নামলেন চাকরি প্রার্থীরা। শনিবার শ্রীনগরে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী পথ অবরোধে সামিল হন। জানা গিয়েছে, জম্মু কাশ্মীরের দমকল ও জরুরি পরিষেবা বিভাগের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের দাবি, নিয়োগ প্রক্রিয়ার অস্বচ্ছতার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। তাঁরা এই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনার পাশাপাশি সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
ইতিমধ্যেই ন্যশনাল কনফারেন্স, কংগ্রেস সহ বিরোধীরাও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির প্রতিবাদে সরব হয়েছে। তাঁরা দমকল ও জরুরি পরিষেবা বিভাগের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন করে নিয়োগের দাবি তুলেছেন। একইসঙ্গে বিরোধীরাও সিবিআই তদন্তের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন।
এদিন আন্দোলনাকরীরা হাতে লেখা ব্যানার এবং পোস্টারের মাধ্যমে নিজেদের দাবি তুলে ধরেন। সংবাদসংস্থা পিটিআই’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইজাজ আহমেদ নামের এক চাকরিপ্রার্থী জানিয়েছেন, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় জম্মু কাশ্মীরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব আরকে গোয়েলের নেতৃত্বে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও সেই তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়নি।
ইজাজের অভিযোগ, ইচ্ছাকৃত ভাবে প্যানেল থেকে আমাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে এই প্যানেল বাতিল করতে হবে। তাঁর প্রশ্ন, রিপোর্ট প্রকাশ করতে কিসের সমস্যা প্রশাসনের? কাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে প্রশাসন? আমরা অবিলম্বে সিবিআই তদন্ত চাই।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী দমকল ও জরুরি পরিষেবা বিভাগের ৮৭০টি পদের জন্য আবেদন করেন ৬০ হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী।
লিখিত পরীক্ষা ও শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষা শেষে নির্বাচিত হন ১৪ হাজার চাকরিপ্রার্থী।
কিন্তু ২০১৪ সালে বন্যার কারণ দেখিয়ে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়। পরবর্তীকালে ২০১৭ সালে বিজেপি এবং পিডিপি জোট সরকার গোটা প্রক্রিয়াটিকে বাতিল ঘোষণা করে।
এর প্রতিবাদে জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন চাকরিপ্রার্থীরা। আদালত নির্দেশ দেয়, নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাতে হবে সরকারকে।
২০১৮ সালে আরেক দফা শারিরীক সক্ষমতার পরীক্ষা নেওয়া হয়, এবং সেই পরীক্ষায় পাশ করা ৭ হাজার চাকরি প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষায় ডাকা হয়।
কিন্তু গণ টোকাটুকি ও দুর্নীতির অভিযোগে সেই প্রক্রিয়াও বাতিল হয়।
এরপর ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর একটি নিয়োগ তালিকা প্রকাশিত হয়। চাকরি প্রার্থীদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, এই তালিকায় ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে অযোগ্যরা চাকরি পেয়েছেন।
তারপর থেকেই এই প্যানেল বাতিলের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে আসছেন কাশ্মীরের যুব সমাজ।
২০২২ সালের জুলাই মাসে কারচুপির অভিযোগ ওঠায় পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর পদের নিয়োগ বাতিল করে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন। তারপর থেকে নতুন উদ্যমে দমকল ও জরুরি পরিষেবা বিভাগের চাকরি প্রার্থীরাও আন্দোলনে সামিল হন। আন্দোলনের চাপে তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়। যদিও তার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হয়নি।
চাকরি প্রার্থীদের দমকল ও জরুরি পরিষেবার নিয়োগের ক্ষেত্রেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে হবে।
Comments :0