JOB CARD REGA

বাতিল জবকার্ডের মালিক কারা, জানতে চাইছে দিল্লি

রাজ্য

নির্বিচারে বাতিল হওয়া জবকার্ডের গ্রাহকদের এখন হদিশ চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার!

১০০ দিনের কাজের লাগামছাড়া দুর্নীতির তথ্য লোপাট করতে গত দু’বছরে এরাজ্যে দেড় কোটির ওপর জব কার্ডকে বাতিল করেছে রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তর। অভিযোগ এটাই যে, ভুয়ো জবকার্ড তৈরি করে ১০০ দিনের কাজের কোটি, কোটি টাকা চুরি হয়েছে। ফলে সেই জবকার্ডের আসল মালিক কারা, তাদের তথ্য সন্ধানে রাজ্যের ওপর চাপ বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। দিল্লির সঙ্গে সভা করে রেগার টাকা পাওয়ার আশা ছেড়ে এখন দুর্নীতি ঢাকতে নেমেছে নবান্ন। ফলে এরাজ্যের গরিব মানুষের রেগার বকেয়া কাজের টাকা পাওয়া ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে উঠছে। 

১০০ দিনের টাকা পাওয়ার জন্য দিল্লিতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করে এসেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। রাজ্যের বকেয়া নিয়ে তাঁদের কথা প্রধানমন্ত্রী মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন বলেও দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শেষ পর্যন্ত গত ২৩ জানুয়ারি প্রথম বৈঠকের পর রাজ্যের আধিকারিকদের  কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিকদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। এখন বোঝা যাচ্ছে, প্রশ্নের মুখে পড়ার অন্যতম কারণ, এরাজ্যে বিপুল জবকার্ড বাতিল হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করতে নেমে দুর্নীতির তদন্তে গতি আনতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। টাকা পাওয়া ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে এটা বুঝতে পেরে সুর চড়াচ্ছেন মমতা ব্যানার্জিও। ঘনিষ্ঠ মহলে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, দরকার হলে টাকার জন্য আরও সাতদিন অপেক্ষা করবো। তারপর কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগে আরও বড় আন্দোলন করা হবে।’’ সোমবার থেকে ফের উত্তরবঙ্গ সফরে থাকবেন মমতা ব্যানার্জি। সোমবারই তাঁর প্রথম সরকারি সভা কোচবিহারে। আগামী লোকসভা ভোটের আগে উত্তরবঙ্গে সম্ভবত শেষ প্রশাসনিক সফরে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়েই সরব হতে বাধ্য হবেন মমতা ব্যানার্জি।

রেগায় কাজ করে বকেয়া টাকা জোগায় করে আনা দূর অস্ত, এখন জবকার্ড বাতিল করার জন্য আইন মেনে শর্তবলী পূরণ করার জন্য জেলাগুলিতে নির্দেশিকা পাঠাচ্ছে রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তর। জবকার্ড বাতিল হলে, সেই ব্যাক্তিকে নোটিস পাঠাতে হয় স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধানকে। নোটিস পাঠিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত দপ্তরে শুনানি এসে, কেন জবকার্ড বাতিল হলো তার ব্যাখ্যা দিতে হয়। তারপর শুনানির কাগজে জবকার্ড বাতিল হওয়া গ্রামবাসীর স্বাক্ষরের সঙ্গে স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান ও গ্রাম পঞ্চায়েতের আধিকারিকের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক। কেউ যদি পরপর তিনবার শুনানির নোটিস দেওয়ার পরও অনুপস্থিত থাকে, তাহলে বাতিল হওয়া জবকার্ড গ্রাহকদের নামের তালিকা পঞ্চায়েত অফিসের নোটিস বোর্ডে টাঙিয়ে দিতে হবে। এমননি বাতিল হওয়া জবকার্ড গ্রাহক কারা, তাদের নামের তালিকা তৈরি করে গ্রাম সংসদ ও গ্রামসভাতেও অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা আছে রেগা আইনে। 

এমনকি নতুন জবকার্ডের জন্য কোনও আবেদন করলে তার সেই আবেদনের ফাইল এখন দেখতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। নতুন আবেদনের মধ্যে কোনও আবেদনকে গ্রহণ করা হয়েছে তার এনকোয়ারি রিপোর্ট পর্যন্ত তলব করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার, এটা জানার পর নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকার। এমনকি এক বছর আগে পুরানো তারিখ দিয়ে নোটিস তৈরি করে জবকার্ড বাতিলের শুনানির কাগজ তৈরি রাখতে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তর। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতে এখন এক বছর আগের দিন খুঁজে জবকার্ড বাতিলের বৈধতা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। 

গত ২৩ জানুয়ারি নয়াদিল্লিতে বৈঠকে বসেছিল রাজ্য সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর সহ পাঁচ দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকরা। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বৈঠকে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের আধিকারিক ও কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের আধিকারিকরাও। সূত্রের খবর, ওই বৈঠকেই কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের আধিকারিকরা গত দু’বছরে এরাজ্যে বাতিল হওয়া জবকার্ডের যাবতীয় তথ্য জানতে চেয়েছে। রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য,‘‘ ১০০ দিনের কাজে কীভাবে দুর্নীতির টাকা লোপাট হয়েছে সেটাই এখন ধরতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। তাই যে জবকার্ড বাতিল হয়েছে, সেই ব্যাক্তিটি কে তার খোঁজখবর নেওয়ার সঙ্গে তার অ্যাকাউন্টে কত টাকা ঢুকেছে সেই তথ্যও তালাশ করতে চাইছে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর।’’

এরাজ্যে এখনও পর্যন্ত ১ কোটি ৬২ লক্ষের ওপর জবকার্ড বাতিল হয়েছে। তারমধ্যে গত ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ এই দুই আর্থিক বছরে বাতিল হওয়া জবকার্ডই এখন কেন্দ্রীয় সরকারের নজরে। কারণ, এই দুই আর্থিক বছরে রাজ্যে বন্ধ ছিল ১০০ দিনের কাজ। রেগা বন্ধের কারণ হিসাবে বিপুল আর্থিক দূর্নীতির অভিযোগ সামনে আসায় রাজ্য সরকার নির্বিচারে জবকার্ড বাতিল অভিযানে নামে। আধারের সঙ্গে জবকার্ড সংযুক্ত করতে গিয়ে জবকার্ডের মালিককে খুঁজে না পাওয়ার কারণ দেখিয়ে বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল জবকার্ডকে। আবার গত দু’বছরে দুয়ারে সরকার শিবির থেকে নতুন জবকার্ডের আবেদন নেওয়া হয়নি। কিন্তু তার আগে রাজ্য সরকারের পরিষেবা প্রদানের কর্মসূচি দুয়ারে সরকার শিবির থেকে হু হু করে দেওয়া হয়েছিল জবকার্ড। কিন্তু জব কার্ড বাতিল করা কিংবা নতুন কার্ড তুলে দেওয়া, কোনও ক্ষেত্রেই মানা হয়নি রেগা আইনের বিধিকে। এখন বাতিল জবকার্ড নিয়েই কেন্দ্রীয় সরকার চেপে ধরতে চাইছে রাজ্য সরকারকে।

Comments :0

Login to leave a comment