Climate change

জলবায়ু পরিবর্তনে গত এক বছরে বাস্তুচ্যুত ৫ লক্ষ

জাতীয়

 ভারতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব টের পাচ্ছেন পরিবেশ নিয়ে সমীক্ষায় মতামত দেওয়া প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ। তাঁদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশের বেশি লোককে ইতিমধ্যে জমি-বাড়ি থেকে উৎখাতও হতে হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্ণায়ক হয়েছে দাবদাহ, খরা অথবা অতি বৃষ্টি ও বন্যা।
গত বছর ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ইয়েল প্রোগ্রাম অন ক্লাইমেট চেঞ্জ কমিউনিকেশন এবং সি-ভোটার একটি সমীক্ষায় চালায়। বর্তমানে লোকসভা নির্বাচনের আবহে যা বিশেষ ভাবেই তাঁৎপর্যপূর্ণ। 
সমীক্ষায় ২,১৭৮ জনের ৯১ শতাংশই ভুবন উষ্ণায়ন প্রসঙ্গে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব ভালোমতোই বুঝতে পারছেন বলে স্বীকার করেছেন ৮৫ শতাংশ।
উদাহারণ স্বরূপ ধরা যেতে পারে মুম্বাইকে। দুর্বার গতিতে নগরায়ন বাণিজ্য নগরীতে পরিবেশ দূষণ, জল যন্ত্রণা, জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করেছে। কিন্তু নাগরিক অথবা পরিবেশ কর্মীদের অভিযোগ রাজনৈতিক দলগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে উদাসীন। বিজেপি ও কংগ্রেস নিজেদের ইশ্‌তেহারে পরিবেশ নিয়ে দু’-চার কথা লিখলেও, ভোট প্রচারে উপেক্ষিত থেকে পরিবেশ সচেতনতা।
কিন্তু সমীক্ষা তুলে ধরেছে বিষয়টির নির্মম বাস্তবতা। যেমন ৩৮ শতাংশ মানুষ জানান জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত বছর অন্তত চব্বিশ ঘণ্টা তাঁদের পরিস্রুত পানীয় জল ছাড়াই কাটাতে হয়। আবার ৭২ শতাংশ অভিযোগ করেন একই কারণে ন্যূনতম এক দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন থাকার বিষয়ে।
তীব্র গরম, খরা এবং বন্যার জন্য ৩৪ শতাংশ তুলে ধরেন বাস্তুচ্যুত হওয়ার যন্ত্রণা। অথবা অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন।
জেনেভার ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার অনুসারে, ২০২৩ সালে ভারতে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ৫ লক্ষের বেশি মানুষকে ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়। ঠিক তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালে উৎখাত নাগরিকের তালিকা ছিল ২৫ লক্ষ।
রিপোর্টটি অনুসারে, গত তিন বছর ধরে প্রবল গরমে দেশের একটা বড় অংশের আমজনতাকে ভুগতে হয়েছে। তীব্র উত্তাপে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। জলের উৎস শুকিয়ে যেতে ব্যাহত হয়েছে জোগান। ক্ষতি হয়েছে চাষের। বিঘ্নিত হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। 
শুধু তাই না, অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রেই এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। কিছু ক্ষেত্রে যার পরিণাম হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি।
আবার মারণ বন্যায় হিমাচলের দুই রাজ্য উত্তরাখণ্ড ও হিমাচল প্রদেশে ঘটে গেছে বহু মৃত্যু ও ধ্বংস। এছাড়া গত বছরেরই অক্টোবরে হিমবাহ পুষ্ট হদ্র উপচে বাঁধ ভেঙে তিস্তা নদীতে ভয়াবহ হড়পা বানে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। সটান গৃহীন হয়ে পড়েন ৮৮,০০০ বেশি স্থানীয়।
ইয়েল প্রোগ্রাম অন ক্লাইমেট চেঞ্জ কমিউনিকেশন এবং সি-ভোটারের সমীক্ষা অনুসারে, ৭০ শতাংশই মনে করেন জলবায়ু পরিবর্তন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মূলে। কিন্তু ৬৬ শতাংশের আগে থাকতে এমন বিপর্যয়ের সতর্কতা পান না বলেই জানান। এক্ষেত্রে ৭৮ শতাংশ মনে করেন ভারত সরকারের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
ভুবন উষ্ণানের ধাক্কা আমজনতাকে পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে সচেতন হতে সাহায্য করছে কি না সে বিষয়ে বিতর্ক চলতেই পারে। কিন্তু তার মাঝেই সমীক্ষায় ১৪ শতাংশ মানুষ জানান কেন্দ্রের উচিত পর্যায়ক্রমে জীবাষ্ম জ্বালানির ব্যবহার ক্রমশ নিয়ন্ত্রিত করার। আবার ৬১ শতাংশ চান পুনর্নবীকরণ যোগ্য শক্তির ব্যবহার ভারতীয় সমাজে রেওয়াজে পরিণত হোক।
বিশ্বে জনসংখ্যার বিচারে ভারত প্রথম। পৃথিবীর ১৮ শতাংশ লোক ভারতেই বসবাস করেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থার তথ্য জানাচ্ছে, ভারতে মাত্র ৬ শতাংশ জীবাষ্ম জ্বালানির ব্যবহার হয়। অবশ্য বিপুল জনসংখ্যার প্রভাবে, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর ভারত থেকে ঘটে সর্বোচ্চ পরিমাণে গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন।
বিভিন্ন পরিবেশ সংক্রান্ত গবেষণায় দেখা গেছে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় বিশ্বে সব থেকে বিপন্ন দেশগুলির মধ্য অন্যতম ভারত। দেশের মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি কৃষিকাজ এবং জলবায়ু প্রভাবিত জীবিকা ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। কেন্দ্রের মোদী সরকারের নয়া উদারবাদী নীতি ও কর্পোরেট তোষণ এমন ক্ষেত্রগুলিকে দুর্বল করেছে। তাই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাবে উৎপাদন এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ছাপ ফেলেছে। 

Comments :0

Login to leave a comment