মাথাপিছু ৫ কেজি করে খাদ্যশস্য বিনামূল্যে দেওয়ার প্রকল্প পাঁচ বছর বাড়ানোর ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর দাবি, এই প্রকল্পের জন্য বছরে ২ লক্ষ কোটি টাকার ব্যয়ভার নেবে কেন্দ্র। উপকৃত হবেন প্রায় ৮০ কোটি নাগরিক।
২০১৩’তে চালু জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প অনুযায়ী অন্ত্যোদয়া প্রকল্পে পরিবার পিছু ৩৫ কেজি শস্য চালু ছিল। এই প্রকল্পেই অপর অংশের উপভোক্তাদের ‘অগ্রাধিকার পরিবার’ বিবেচনা করে মাথাপিছু মাসে ৫ কেজি করে চাল বা গম দেওয়ার আইনি সুরক্ষা চালু হয় তখনই।
খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পে চাল কেজি প্রতি ৩ টাকা এবং গম কেজি প্রতি ২ টাকা দর নির্দিষ্ট ছিল। করোনা মহামারী এবং লকডাউনের বিপর্যয়ে বহু পরিবার কাজ হারায়। বিরোধীদের দাবির মুখে ২০২০’র এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা চালু করে কেন্দ্র। এ বছরের ডিসেম্বরে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার ঘোষণাও করে মোদী সরকার। এই প্রকল্পকে মিলিয়ে দেওয়া হয় জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের সঙ্গে। ফারাক হলো, গরিব কল্যাণ প্রকল্পে ৫ কেজি করে মাথাপিছু শস্য দেওয়া হয় বিনামূল্যে।
শনিবার মোদী ছত্তিশগড় এবং মধ্য প্রদেশে আগের সিদ্ধান্ত বদলে গরিব কল্যাণ যোজনা আরও পাঁচ বছর চালু রাখার ঘোষণা করেছেন।
রবিবার মধ্য প্রদেশের ভোপালে কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতির চাপে ‘ইউ টার্ন’ নিতে হলো মোদীকে। যে প্রকল্প খতম করবেন ঠিক করেছিলেন তার মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়াতে হলো।’’ সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘বিরোধীরা জনকল্যাণ এবং সামাজিক খাতে বরাদ্দের ঘোষণা করলে মোদীই তাকে ‘রেউড়ি’ বা খয়রাতি বলে ব্যঙ্গ করেন। আর নিজে ঘোষণা করলে বলেন ‘মোদী কী গ্যারান্টি’’।
কংগ্রেসের ব্যাখ্যা, আর্থিক সঙ্কট এবং আয়ের বৈষম্য তীব্র হয়েছে মোদীর প্রায় দশ বছরের শাসনে। বেশিরভাগ ভারতীয়েরই আয় দামের তুলনায় বাড়ছে না। কেনার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। পাল্লা দিয়ে কমছে রোজগারের সুযোগ। বিরোধীরা দেশময় প্রতিবাদে এই বিষয়গুলিকে জনতার সামনে হাজিরও করছেন। সে চাপেই ভোল বদলাতে হয়েছে মোদীকে।
কংগ্রেস বলছে, একশো দিনের কাজ বা মনরেগা নিয়েও মোদীকে ‘ইউ টার্ন’ করতে হয়েছিল। কংগ্রেসের সত্তর বছরের কুশাসনের উদাহরণ বলতেন কাজের নিশ্চয়তার এই প্রকল্পকে। বরাদ্দ ছেঁটে প্রকল্পকে বন্ধ করার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। আবার তাঁকেই স্বীকার করতে হচ্ছে যে করোনার কঠিন সময় কর্মহীন পরিবারের রোজগারের একমাত্র উপায় হয়েছিল এই প্রকল্প।
রমেশ বলেছেন, ‘‘মনে রাখা উচিত এই ৮০ কোটি মানুষের খাদ্যশস্যের নিশ্চয়তা কিন্তু খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পেই দেওয়া হয়েছিল। তার আইনি অধিকারও স্বীকৃত। বরং, ২০১৩’তে মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন থেকে এই প্রকল্পের বিরোধিতা করেছিলেন।’’
Comments :0