আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরায় বিজেপি’কে পরাস্ত করা, বিজেপি যেন রাজ্যে পরবর্তী সরকার গড়তে না পারে তা নিশ্চিত করাই সিপিআই (এম)’র প্রধান লক্ষ্য। জানালেন সিপিআই (এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। সেই লক্ষ্য পূরণে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্য ও সহযোগিতাই প্রাথমিক লক্ষ্য সিপিআই (এম)’র। বুধবার আগরতলায় দশরথ দেব স্মৃতি ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন ইয়েচুরি। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত বামপন্থী দলগুলিরও এটাই লক্ষ্য হবে। ইয়েচুরি বলেন, সন্ত্রাসের রাজত্ব থেকে ত্রিপুরার জনগণকে মুক্ত করাই হবে এই নির্বাচনে আমাদের প্রধান ধ্বনি। সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিপিআই (এম) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি। তিনি বলেন, মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত রাজ্য কমিটির বৈঠকে সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ কারাত এবং মানিক সরকার উপস্থিত ছিলেন। এই সভায় আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের লক্ষ্য এবং নির্বাচনী রণকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে ইয়েচুরি বলেন, ত্রিপুরার আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচন শুধু ত্রিপুরার, ত্রিপুরার জনগণের জন্য, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সংবিধানের শাসন কার্যকর করার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এই নির্বাচন উত্তর পূর্বের জন্য এবং বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে জাতীয় রাজনীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ইয়েচুরি বলেন, গত বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি যত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার একটিও কার্যকর হয়নি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলছেন, ত্রিপুরা এখন ড্রাগ করিডরের অংশ। কোনও প্রতিশ্রুতিই পূরণ হয়নি। এখন বিজেপি আবার সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তীব্র করার চেষ্টা শুরু করেছে।
ইয়েচুরি বলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যে এসে বললেন ২০২৪ এর ১ জানুয়ারির আগে রামমন্দির নির্মাণ শেষ হবে। ২০২০ সালের আগস্টেই জানানো হয়েছিল আগামী বছরের ১ জানুয়ারি অর্থাৎ লোকসভা নির্বাচনের আগে মন্দির তৈরির কাজ শেষ হবে অথচ অমিত শাহ ত্রিপুরার জন্য কী প্রতিশ্রুতি ছিল, কী তারা করেছেন, কীভাবে তারা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, সে নিয়ে কোনও কথা বললেন না। আইন শৃঙ্খলার অবনতি, গণতন্ত্র ধ্বংস, সন্ত্রাসের রাজত্ব নিয়ে কোনও প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। বরং সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের প্রয়াসই করে গেলেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে ইয়েচুরি এও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে বামফ্রন্টের বাইরে কোনও দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা হলেও কোনও রাজনৈতিক জোট বা ফ্রন্ট গঠন করবে না সিপিআই (এম)। তিনি বলেন, গত পার্টি কংগ্রেসে আমরা সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আমাদের প্রথম কর্তব্য বিজেপি-কে বিচ্ছিন্ন ও পরাজিত করা। সেজন্য আমাদের নিজের শক্তি বাড়াতে হবে, বাম দলগুলির মধ্যে ঐক্য আরও শক্তিশালী করতে হবে। অন্য গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির সঙ্গে বিজেপি-র নীতির বিরুদ্ধে বিকল্প নীতির ভিত্তিতে বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গড়তে হবে। আর নির্বাচনে বিজেপি-র পরাজয়ের লক্ষ্যে অ-বিজেপি ভোট সর্বোচ্চ ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে সব ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সম্ভাব্য ব্যাপকতম সমন্বয় ঘটাতে হবে।
ত্রিপুরায় কারা সেই শক্তি, এই প্রশ্নের উত্তরে ইয়েচুরি বলেন তিপ্রা মথা, কংগ্রেস সহ যে শক্তি গণতন্ত্র ও সংবিধানকে রক্ষায় সন্ত্রাসের রাজত্বের বিরুদ্ধে লড়তে এবং জনগণের জীবনের সমস্যা নিয়ে আন্দোলনে নামতে তৈরি, তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনায় যেতে পারি। তিপ্রা মথা সম্পর্কে ইয়েচুরি বলেন, ওরা সংবিধানের চৌহদ্দির মধ্যেই সমস্যার সমাধানের কথা বলছেন, আমরাও চাই সংবিধানের মধ্যে থেকে উপজাতিদের সর্বাধিক স্বায়ত্বশাসনের ব্যবস্থা করা হোক। তিনি গত বিধানসভা ভোটের উল্লেখ করে বলেন, বিজেপি সরকার গড়তেই পারতো না যদি আইপিএফটি’র সঙ্গে এদের জোট না হতো। কিন্তু ক্ষমতায় এসে উপজাতিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বিজেপি। আমরা চাই উপজাতিদের সুষ্ঠু ও সর্বাধিক উন্নয়ন। আর সেই জন্য দরকার এই সন্ত্রাসের রাজত্ব থেকে ত্রিপুরার জনগণকে মুক্ত করা, গণতন্ত্র, সংবিধান ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। সব বিজেপি বিরোধী দল পৃথকভাবে এই একই অবস্থান নিলেও বিজেপি-কে হারাতে চাই ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সর্বোচ্চ ঐক্য। সেই লক্ষ্যেই এখন পার্টি কাজ করবে বলে তিনি জানান।
সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি বলেন, আমাদের এই মূল লক্ষ্য স্থির হবার পর আমরা আশা করব অন্য দলগুলিও পরিস্থিতি বুঝবেন, আলোচনা শুরু হবে এবং একটি সম্মানজনক বন্দোবস্তে পৌঁছতে পারব আমরা। তিনি বলেন, ত্রিপুরায় প্রচারে এসে অমিত শাহ বলেছেন এখানে হিংসার পরিবেশ নেই, যুবকদের কাজের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। সেই কাজ কী? নেশার কারবার, ছিনতাই, পাচারে জড়িত হয়ে পড়ছে যুবরা। এরই নাম রোজগার? উন্নয়ন হয়েছে শুধু বিজেপি নেতাদের ছন, টিনের চালার ঘর থেকে তাদের দোতলা, তিন তলা বাড়ি হয়েছে। সাইকেল নিয়ে যারা ঘুরতো তাদের নামি দামী গাড়ি হয়েছে। জনগণ কিছু পায়নি।
Comments :0