বৃহস্পতিবার বকেয়া ডিএ, শূন্যপদে স্বচ্ছ নিয়োগের মতো গুরুত্বপূর্ণ দাবিতে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল কর্মচারীদের যৌথ মঞ্চ। হাওড়া লঞ্চঘাট থেকে মিছিল যায় সোজা হাওড়া শরৎ সদন। সেখানে সভা করেন সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শুধু বকেয়া ডিএ নয় সমস্ত রাজ্য সরকারি দপ্তরগুলো ধুঁকছে কর্মচারীর অভাবে। শূন্যপদে অবিলম্বে নিয়োগ করতে হবে সেই দাবি বারবার উঠে এসেছে। আন্দোলনরত সরকারি কর্মী, শিক্ষক-শিক্ষিাদের সকলেরই দাবি, শুধু নিজেদের জন্য নয়, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও এই লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সভায় কর্মী এবং শিক্ষক আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, যুবক-যুবতীরা যেন স্বচ্ছ নিয়োগের মাধ্যমে চাকরি পান, সেই জন্যও এই লড়াই। কর্মচারীদের ক্ষোভ, বছরের পর বছর মহার্ঘ ভাতা দিচ্ছে না মমতা ব্যানার্জির সরকার। অথচ আঙুল উঠছে সরকারি কর্মীদের দিকে। কর্মচারী আন্দোলন ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও ডিএ’র অধিকার সুরক্ষিত রাখতে চাইছে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে যাতে এই বঞ্চনার মুখে পড়তে না হয়। নিজেদের ন্যায্য অধিকার যেন তাঁরা পান, বলেছেন আন্দোলনরত কর্মচারীরা।
২০১১’তে পশ্চিমবঙ্গে সরকারে আসীন হয়েছে তৃণমূল। কর্মীরা বলেছেন, রাজ্য সরকারি দপ্তরগুলির হাল খুব ভাল নয়। পালা বদলের পর প্রায় কোনও দপ্তরেই নিয়োগ হয়নি। ফলে কর্মীর অভাবে বহু সরকারি কাজ হচ্ছে না। জনস্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মী এবং রাজ্য সরকারি কর্মচারী কোঅর্ডিনেশন কমিটির কেন্দ্রীয় সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য মানস বড়ুয়া বলেন, ‘‘এক সময় গ্রাম থেকে শহরে বাড়ি বাড়ি ঘুরে কাজ করতেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। কেবল আশা কর্মীরা নন, সরকারি স্বাস্থ্য কর্মীরাও এই কাজ করতেন। সেই কাজ ব্যাহত হয়েছে। কর্মীদের অভাবেই কোভিড অতিমারীর সময় পরিষেবার ব্যাপক সমস্যা হয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘কয়েকবছর আগে পিএসসি‘র মাধ্যমে কিছু নিয়োগ হয়েছিল। কিন্তু তারা স্বাস্থ্য কর্মী নন, করণিকের পদে নিয়োগ হয়েছিল। বিশেষ করে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যাপক ভূমিকা ছিল এই সব স্বাস্থ্যকর্মীদের। নিয়ম ছিল পৌরসভা অনুযায়ী ওয়ার্ড ভিত্তিক বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবেন। জ্বর আসলে ওসুধ দেবে। যাতে হাসপাতালে যেতে না হয়, রোগ প্রতিরোধের কাঠামো গড়ে ওঠে। নিয়মিত রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখা যায়। কিন্তু এখন আর তা কিভাবে সম্ভব? ১৭ হাজার স্থায়ী স্বাস্থ্য কর্মীর সংখ্যা এখন কমে ঠেকেছে ৬০০’তে। স্থায়ী স্বাস্থ্য কর্মী না থাকলে শুধু ঠিকা কর্মী দিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বজায় রাখা সম্ভব নয়।’’
সরকারি কর্মীরা বলছেন, ‘‘সব থেকে বড় কথা ম্যালেরিয়া হলে সরকারি ওসুধ না খেলে তা নির্মূল সম্ভব নয়। ক্লোরোকুইন এবং প্রাইমাকুইন খাওয়ানোর নির্দেশ রয়েছে স্বাস্থ্যকর্মীদেরই। তাঁরা নিয়মিত আক্রান্ত রোগীর বাড়ি গিয়ে ওষুধ খাওয়াবেন এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখবেন। কিন্তু কর্মী নেই। ফলে সরকারি কর্মীরা নিজেদের দপ্তরটিকে টিকিয়ে রাখার দাবিও রয়েছে। রয়েছে স্বচ্ছ নিয়োগের দাবি। এই লড়াই ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও এই লড়াই বস্ত্র দপ্তরের কর্মী এবং কোঅর্ডিনেশন কমিটির নেতা আশিস মিত্রও বলেছেন যে তাঁর দপ্তরে নিয়োগ হয়েছে, কিন্তু তা খুবই সামান্য। কিন্তু নিয়োগের পাশাপাশি দপ্তরের কাজ থাকাও প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘‘এক সময় বয়ন শিল্প দপ্তরের কর্মীদের কাজ ছিল গ্রামে তাঁতিদের কাছ থেকে সরাসরি বস্ত্র কিনে তা সরকারি বিপণন বা মেলায় বিক্রি করা। যেমন ফুলিয়া, শান্তিপুরী, ধনেখালিতে তাঁতিরা তাঁতের শাড়ি বানাবে, ডিজাইন অবং সুতো দেবে সরকার সঙ্গে কিছু পারিশ্রমিক। এর ফলে সরকারি বিপণন কেন্দ্রগুলি, যেমন তন্তুজ, মঞ্জুষা এরাও যেমনটিকে থাকবে তেমনি তাঁতিরাও থাকবেন।
আশিস মিত্র বলছেন, ‘‘তৃণমূল সরকার এসে কাপড় কেনে সরাসরি মহাজনদের থেকে। ফলে তাঁতিদের কোনও লাভ হয় না। আর মুনাফা লোটে মহাজনরা। আর মেলার নামে এখন যা হচ্ছে তাতে যোগ দেওয়া তাঁতি বা হস্তশিল্পীদের আয়ের অধিকাংশই চলে যায় হয় তৃণমূলের পকেটে। সরকার খরচ করে শিল্পীদের উৎকর্ষে নয়, গেট এবং স্টেজে। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়া দরকার। তাঁতিদের পরবর্তী প্রজন্ম তাঁত শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়েছে শুধুমাত্র সরকারি সদিচ্ছার কারণে। তেমনি এই দপ্তরটিও বন্ধের মুখে, সরকারের ভুল নীতির কারণে, আক্ষেপ আশিস মিত্রের
Comments :0