OBC CERTIFICATE

ওবিসি শংসাপত্র বাতিলে জট সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা

রাজ্য

ওবিসি শংসাপত্র বাতিলের জেরে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার মুখে এরাজ্যে সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা। 

শংসাপত্র বাতিল নিয়ে আদালতে রায়ের পর পিএসসি (পাবলিক সার্ভিস কমিশন) ওয়েস্ট বেঙ্গল জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারেনি। থমকে গেছে ২০২৪ সালের রাজ্যের ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি। অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে রাজ্যের সরকারি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক, শিক্ষিকাসহ শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও। নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা সম্ভব হচ্ছে না আইডিও(ইনডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অফিসার) নিয়োগ প্রক্রিয়াও। ভোট প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীর কাছে ১০ লক্ষ সরকারি চাকরি রেডি আছে বলে ঘোষণা করেছিলেন। এখন ওবিসি জটকে অজুহাত করে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেন কিনা সেটাই দেখার।

গত ২২ মে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিসন বেঞ্চে রায়ে ২০১০ সাল পরবর্তী সমস্ত ওবিসি শংসাপত্র বাতিল হয়ে গেছে। আর তারই প্রভাব পড়েছে চলতি বছরে সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায়। সরকারি চাকরি পরীক্ষায় ফি বছর অন্তত ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা নেওয়াটা চালু ছিল। কিন্তু এবার এখনও পর্যন্ত পিএসসি, বিসিএস পরীক্ষার নিয়োগের কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি।

এমনিতেই চলতি বছরে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার সিলেবাস পরিবর্তন করার পরিকল্পনা নিয়েছিল রাজ্য সরকার। প্রাক্তন পুলিশকর্তা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটিও রাজ্য সরকার তৈরি করে। সূত্রের খবর, ইউপিএসসি’র অধীনে আইএএস পরীক্ষার ধাঁচে এরাজ্যে ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সিলেবাস বদল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কমিটি দফায়, দফায় বৈঠক করে। কিন্তু পিএসসি প্রশাসনের কাছে এখনও পরিবর্তিত সিলেবাস এসে পৌঁছায়নি। রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, সিলেবাস বদল না হলে পিএসসি ডব্লিউবিসিএস পরীক্ষার জন্য পুরানো সিলেবাসের ভিত্তিতেই পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারত। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। এখন সিলেবাস বদল হয়ে এলেও ওবিসি গেরোয় পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি করাও যাবে না।

গত মার্চ মাসে দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পিএসসিতে কোনও স্থায়ী চেয়ারম্যান না থাকায় কলকাতা হাইকোর্টের কাছে কড়া ধমকের মুখে পড়েছিল রাজ্য সরকার। কারণ, স্থায়ী চেয়ারম্যান ছাড়া বিচারক নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত গত ১২ মার্চ পিএসসিতে স্থায়ী চেয়ারম্যান হিসাবে কাজে যোগ দেন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস আধিকারিক মহুয়া ব্যানার্জি। কিন্তু ওবিসি গেরোয় পড়ে এখন জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারি করা যাবে না। রাজ্য প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, ‘‘পরীক্ষা নেওয়ার পর ফল প্রকাশের সময় জেনারেল ক্যাটাগরি, এসসি, এসটি ও ওবিসি’দের জন্য ভিন্ন কাট অব মার্কস থাকে। একইসঙ্গে নিয়োগের জন্য কোটাও থাকে। আদালতের রায়ে ২০১০ সালের পরবর্তী সমস্ত ওবিসি শংসাপত্র বাতিল হওয়ার পর নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়টাই কঠিন হয়ে গেছে।’’

এরাজ্যে এমনিতেই সরকারি চাকরিতে নিয়োগ কার্যত বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। নিয়োগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দুর্নীতি। পিএসসি তরফ থেকে নেওয়া খাদ্য দপ্তরের এসআই নিয়োগ নিয়ে মামলা হয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের নিয়োগ হয়নি। কলেজ সার্ভিস কমিশনেও নিয়োগ নিয়ে কেলেঙ্কারি সামনে এসেছে। অতি সম্প্রতি মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের নিয়োগের পরীক্ষায় ভুল প্রশ্নপত্র নিয়ে গোলমাল শুরু হয়েছে। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের ভুল প্রশ্নপত্র নিয়ে বিস্তর অভিযোগ সামনে আসার পর মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন ভুল প্রশ্নের জন্য অভিযোগ করলে প্রশ্ন পিছু ১ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। নিয়োগের সংস্থান নেই, কিন্তু ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে চাকরিপ্রার্থীদের। 

সরকারি চাকরির নিয়োগের এই দূরবস্থার মধ্যে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির জেরে শিক্ষকতার চাকরিও এরাজ্যে অমিল। বাধ্য হয়ে রাজ্য থেকে লক্ষাধিক শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা এখন বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড এমনকি উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যে গিয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসতে বাধ্য হচ্ছে। 

তবে হাইকোর্টের রায়ের আগে যেসব নিয়োগের পরীক্ষার জন্য পিএসসি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে তা বহাল থাকছে। ফলে ক্লার্কশিপ ও মিসলেনিয়াস পরীক্ষার জন্য ইতিমধ্যেই আবেদন জমা পড়েছে। ক্লার্কশিপ পরীক্ষার জন্য প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে। একইসঙ্গে, মিসলেনিয়াস পরীক্ষার জন্য প্রায় ৩লক্ষ চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেছে। এই দুই পরীক্ষা নিতে কোনও অসুবিধা নেই বলেই প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে। 

২২মে ওবিসি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের রায় প্রকাশ্যে আসার পরই নির্বাচনী সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী রায় মানেন না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ১০ জুন সুপ্রিম কোর্টের গ্রীষ্মাবকাশ শেষ হচ্ছে। তারপর রাজ্যের তরফ থেকে কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মমলা উঠবে। সেই মামলার স্থগিতাদেশ না পাওয়া পর্যন্ত এরাজ্যে অনিশ্চিত সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা। 


 

Comments :0

Login to leave a comment