বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সংসদে ঢুকে পড়েছিলেন যুবকরা। হলুদ ধোঁয়ায় ভরিয়ে দিয়ে বার্তা দিতে চেয়েছিলেন সরকারকে, দেশবাসীকেও। সেই ঘটনায় সংসদ ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে কত ঠুনকো তাও প্রমাণ হয়ে গেছে। এইসব নিয়ে জবাব চাওয়ায় যখন সোমবার নজিরবিহীনভাবে ৭৮ জন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে, সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত মন্দির উদ্বোধনে। সেখানে তিনি পরিষ্কার বলেছেন, ‘‘সোমনাথ থেকে যে কাজ শুরু হয়েছিল, তা এখন আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।’’ নিজের নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীর সেই অনুষ্ঠান থেকে তিনি বেকারি দূর করার সোজা পথও বাতলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘এই বিশাল মন্দির দেখতে বহু লোক আসবে, তার ফলে আশপাশের সমস্ত গ্রামে রোজগার ব্যবসা বাড়বে।’’ একইভাবে গরিবি দূর করার সহজ পন্থাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীর কথায়, ‘‘সবাই একটি করে গরিব পরিবারকে সাহায্য করুন, এটাই ভারতে গরিবি দূর করার রাস্তা।’’
বারাণসীর চৌবেপুরে এদিন প্রধানমন্ত্রী বিহঙ্গম যোগ সংস্থানের বিশাল এক মন্দিরের উদ্বোধন করেন। মন্দিরে নাম দেওয়া হয়েছে স্বর্বেদ। ওই সংস্থার শতবার্ষিকী অনুষ্ঠান রবিবার থেকে শুরু হয়েছে। এই সংস্থার প্রতিষ্ঠা সন্ত সদাফল মহারাজের ১৩৫ ফুট উঁচু মূর্তির উদ্বোধনও করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মোট ২০০ একর জমি রয়েছে এই মন্দিরের। তারমধ্যে ৬৪ হাজার বর্গ ফুট এলাকায় তৈরি হয়েছে মন্দির। ১৮০ ফুট উঁচু মার্বেলের বিশাল মন্দির তৈরি করা হয়েছে। বিপুল অর্থ খরচ হয়েছে মন্দির নির্মাণে, খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে। যদিও সংস্থার পক্ষ থেকে মন্দির নির্মাণের খরচ জানানো হয়নি। ৫০টির বেশি দেশে বিহঙ্গম যোগ সংস্থানের শাখা আছে। ৬০ লক্ষ সদস্য আছে। এদিন মন্দির উদ্ধোধনের পরে সমাবেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেও বড় আকারের জমায়েত করা হয়েছিল ওই সংস্থার পক্ষ থেকে। সেই সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে হিন্দু ধর্ম এবং হিন্দুত্বকেই ভারতের ঐতিহ্য, পরম্পরা, সংস্কৃতি, ইতিহাস বলে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেছেন, ‘‘গোলামীর কালখণ্ডে যে অত্যাচারীরা ভারতকে কমজোর করার চেষ্টা করেছে তারা প্রথমেই আমাদের প্রতীককে নিশানা করেছে। স্বাধীনতার পরে এই প্রতীকগুলির নবনির্মাণ আবশ্যক ছিল, দুর্ভাগ্য তা হয়নি। স্বাধীনতার পরে সোমনাথ মন্দিরের পুনর্নির্মাণের বিরোধিতা করা হয়েছিল। এই ভাবনা দশকের পর দশক দেশের উপরে চেপে বসেছিল। দেশ হীন ভাবনার গর্তে চলে গেছিল। নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব করতে ভুলে গেছে। কিন্তু আজাদির সত্তর বছর পরে সময়ের চক্র ঘুরে গেছে। এখন লালকেল্লা থেকে গুলামির মানসিকতার মুক্তি এবং নিজেদের ঐতিহ্য-পরম্পরা নিয়ে গর্ব করছে। যে কাজ সোমনাথ থেকে শুরু হয়েছিল, তা এখন আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।’’ মোদী সহ হিন্দুত্ববাদীরা গোলামি বলতে ব্রিটিশ সময়কে বোঝান না। তারা গোলামি বলতে মুসলিম শাসকদের কথা বলতে চান। অন্যরা সরাসরি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আকারে ইঙ্গিতে বলেন। এদিনও সেই কাজটিই করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই জন্যেই তিনি সোমনাথ মন্দিরের প্রসঙ্গ টেনেছেন। উল্লেখ্য, সোমনাথ মন্দির পুনর্নির্মাণের সময়ে জওহরলাল নেহরু সহ অনেকেরই বক্তব্য ছিল, ধর্মনিরপক্ষে সরকার কোনও ধর্ম বিশেষের উপাসনাস্থল এইভাবে নির্মাণ করতে পারে না। যদিও প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নেহরুর তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও। এদিন নাম না করে প্রধানমন্ত্রী সেই দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। পাশাপাশি দেশের ঐতিহ্য ও পরম্পরা বলতেও তিনি হিন্দু ধর্মকেই বোঝাতে চেয়েছেন।
এই বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে দিয়ে বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সময়ের চাকা ঘুরে গেছে। এখন সোমনাথ মন্দিরে যা শুরু হয়েছিল, সেটাই আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, ‘‘কাশীতে বিশ্বনাথ ধামের ভব্যতা ভারতের অবিনাশী বৈভবের গাঁথা গাইছে। মহাকাল মহালোক আমাদের অমরতার প্রমাণ দিচ্ছে। কেদারনাথ ধামও বিকাশের নয়া উচ্চতা ছুঁয়েছে। রাম সার্কিটের কাজ চলছে দ্রুততার সঙ্গে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।’’ সম্পূর্ণ বক্তৃতায় তিনি স্পষ্ট করেছেন, হিন্দু মন্দির নির্মাণই তাঁর সরকারের অগ্রাধিকার। সেটাকেই তিনি বিকাশ বা উন্নয়ন হিসেবে দেখাতে চাইছেন। এরপর তিনি বারাণসীর উন্নয়ন নিয়ে দীর্ঘ ফিরিস্তি দিয়েছেন। সেই দাবির মূল ছিল পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং কাশী বিশ্বনাথ করিডোর। কাজ, চাকরি, কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সেটাকেই সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, কাশী বিশ্বনাথ করিডোরের জন্য বারাণসীতে রোজগার আর ব্যবসা দ্রুত গতিতে বেড়েছে। একইভাবে নতুন স্বর্বেদ মন্দির নির্মাণের ফলেও আশপাশের গ্রামে গ্রামে মানুষের উন্নয়নের রাস্তা খুলে যাবে, রোজগার ও ব্যবসা বাড়বে।
Comments :0