দীপক দাশগুপ্ত
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রীত্বে কেন্দ্রে আরএসএস-বিজেপি সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে দেশের সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম সঙ্কট। বেকারি, দারিদ্র, ভুখমারি অভূতপূর্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
মোদির শাসনে জনজীবনের সঙ্কটের তীব্রতা অভূতপূর্ব। এটা বলা যেতে পারে, তা অতীতের সমস্ত সঙ্কটের রেকর্ডকে ম্লান করে দিয়েছে। মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের উদারবাদী আর্থিক নীতির কারণে ব্যাপকহারে লাভজনক সরকারি শিল্প সংস্থার বিরাষ্ট্রীকরণ দেশের স্বনির্ভর আর্থিক নীতির ভিত্তি দুর্বল করছে। ব্যাঙ্ক, বিমা, রেল, প্রতিরক্ষা, বিদ্যুৎ, তৈল, কয়লা, ইস্পাত, বিমান, জাহাজ প্রভৃতি শিল্পকে বেসরকারিকরণের দিকে মোদি সরকার নিয়ে গেছে। এই সরকার গোদিতে আসীন হয়েই আগ্রাসীভাবে উদারবাদী নীতি প্রণয়ন ও তা কার্যকর করে চলেছে। তাতে দেশে গরিবি বৃদ্ধি পাচ্ছে সীমাহীনভাবে। মোদির উক্ত নীতির প্রয়োগে বৃহৎ অংশের জনগণের আর্থিক অবস্থা তলানিতে ঠেকেছে। উল্লেখযোগ্য অংশের গরিব সাধারণ মানুষ রাতে খাদ্য না পেয়ে ঘুমাতে যায়। বিরাট অংশের নারী ও শিশু অপুষ্টির শিকার হচ্ছে মোদির শাসনে।
একই সঙ্গে এই সময়ে কর্পোরেট ও বড় পুঁজিপতিদের মুনাফা বৃদ্ধি দেশে কু-নজির সৃষ্টি করেছে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, অর্থনৈতিক সমীক্ষার সর্বশেষ রিপোর্টও সরকারের এই বিকৃত নীতির দেউলিয়াপনাকে আড়াল করতে পারেনি। যেখানে দেখানো হয়েছে ২০২৩-২৪ সালের অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের বেতন ২০১৭-১৮’র চাইতেও কমে গেছে। অস্থায়ী পুরুষ শ্রমিকদের রোজগার ২০৩ টাকা থেকে ২৪২ টাকা এবং মহিলা শ্রমিকরা পেয়েছেন ১২৮ টাকা থেকে ১৫৯ টাকা। অন্যদিকে ঐ সময়ে কর্পোরেটদের মুনাফা বেড়েছে ২২.৩ শতাংশ। (জাতীয় শ্রমিক কনভেনশনের গৃহীত প্রস্তাব)।
মোদি সরকারের বৃহৎ পুঁজি ও কর্পোরেট স্বার্থবাহী নীতি প্রয়োগের জন্য ঐ অংশের হাতে মুনাফার পাহাড় জমেছে তার জ্বাজ্বল্যমান উদাহরণ হলো, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান সমূহ থেকে প্রত্যক্ষ আয়কর বাবদ সরকারের যত রাজস্ব আদায় হচ্ছে, অপ্রত্যক্ষকর বাবদ আদায়কৃত রাজস্বের পরিমাণ তার তুলনায় শতাংশে অনেক বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে বিগত কয়েক বছরে। সাধারণ মানুষের ওপর পরোক্ষ করের চাপ ক্রমবর্ধমান। এর ফলে সাধারণের জীবনে ভয়ঙ্কর সঙ্কট বৃদ্ধি পেয়েছে। মোদি সরকার জনকল্যাণকর খাতে ব্যয় হ্রাস করেই চলেছে।
প্রসঙ্গত, বলা উচিত কৃষকদের ক্ষেত্রেও মোদি সরকার কর্পোরেট স্বার্থবাহী ভূমিকা নিচ্ছে। স্মরণ করা যেতে পারে ২০২০-২১ সালে মোদিজী কৃষি ও কৃষক বিরোধী তিনটি আইন তৈরী করে। এর বিরুদ্ধে দেশের কৃষকদের প্রায় ৫০০টি সংগঠন যুক্তভাবে সংযুক্ত কৃষক মোর্চা গড়ে তুলে বৎসরাধিক সময়কাল ধরে সংগ্রাম, ধর্মঘট সংগঠিত করেছিলেন। দীর্ঘ সংগ্রামের তীব্রতা ও ব্যাপকতায় প্রধানমন্ত্রী তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। কিন্তু প্রত্যাহারের সময় মোদি প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিগুলির একটিও পরবর্তীতে আর রক্ষা করা হয়নি। বরং পিছনের দরজা দিয়ে মোদি সরকার প্রস্তাবিত আইনের বেশ কিছু ধারা কার্যকর করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মোদির শাসনে কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থবাহী আর্থিক নীতির প্রয়োগে কৃষিক্ষেত্র ও কৃষকের ক্ষতির পরিমাপ করা দুস্কর। মোদির কৃষক বিরোধী নীতি প্রয়োগের কারণে লক্ষাধিক কৃষক আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। মোদির শাসনে দেশের খাদ্য সমস্যা বাড়ছে, মজুতদারি-কালোবাজারিও বাড়ছে।
বলাবাহুল্য ২০২৪ সালে প্রকাশিত বিশ্ব ক্ষুধা সূচক অনুযায়ী ১২৭টি দেশের মধ্যে ভারত ১০৫ তম স্থানে অবস্থান করছে। বাস্তবে মোদির শাসনে ভারত বর্তমানে চরম দারিদ্রের মধ্যে ঢুকে পড়েছে, যে কারণে অনাহার, অর্ধাহার বর্তমান সময়ে ভারতের বাস্তব চিত্র। জাতীয় শ্রমিক কনভেনশনে (১৮ মার্চ ২০২৫) প্রস্তাবেও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এমনকি অর্থনৈতিক সমীক্ষার সর্বশেষ রিপোর্ট সরকারের বিকৃত নীতির দেউলিয়াপনাকে আড়াল করতে পারেনি।’
শ্রম কোডের দ্বারা শ্রমিকদের ওপর শ্রম দাসত্ব চাপিয়ে দিতে চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। দেশের শিল্প ও শ্রমিকদের হালহকিকত আজ কি? শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের অর্থনীতি ধ্বংসাত্মক আকার নিয়েছে, বেশী বেশী শোষণ ও আক্রমণ শ্রমিক শ্রেণি ও কর্মচারীদের ওপরে নামিয়ে আনা হয়েছে। শ্রমিকদের যৌথ অধিকারের ওপর বিশেষ করে তাদের ইউনিয়নের মধ্যে সংগঠিত করার অধিকার হরণ করা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে শ্রমিক কর্মচারীরা কঠিন সংগ্রাম সংগঠিত করে তা প্রতিরোধ করেছেন। মোদিজী শ্রমিক কর্মচারীদের প্রতিরোধ ছিন্নভিন্ন করার উদ্দেশ্যে শ্রম কোড চালু করতে আইন পাশ করেছে। মোদি সরকার শ্রমকোড প্রয়োগ করে শ্রমদাসত্ব প্রথা চালু করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষও মোদির এই শ্রম কোড পরাস্ত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রয়েছেন। শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলে ২০ মে দেশজুড়ে ধর্মঘট আহ্বান করেছে।। মোদি সরকার কর্পোরেটদের সন্তুষ্ট করতে মরিয়া রয়েছে, অতএব শ্রমজীবী মানুষকে নাছোড় আন্দোলন গড়ে তুলেই মোদি সরকারকে পিছু হঠাতে হবে, যাতে কর্পোরেট লুটের সামনে কঠিনতম প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়।
হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতাকে পরাস্ত করো
চরম দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী আরএসএস-এর স্বয়ংসেবক নরেন্দ্র মোদি ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ মতাদর্শ থেকে বের করে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হিসাবে তৈরী করতে চায়। আরএসএস তার জন্মের প্রথম দিন থেকেই ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট থেকেছে। মোদি আরএসএস’র দর্শন, মতাদর্শকে নিয়েই তার সরকারের নীতি স্থির করে থাকেন। আরএসএস পরিবারভুক্ত দলগুলি যেমন হিন্দু মহাসভা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, অতীতের জনসঙ্ঘ বর্তমানের বিজেপি, নারীদের দুর্গাবাহিনী, শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বিদ্যার্থী পরিষদ, প্রভৃতি সংগঠনগুলি আরএসএস’র ‘হিন্দু রাষ্ট্র’গঠন করার পরিকল্পনার শরিক হিসাবে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আরএসএস ও তার শাখা সংগঠনগুলির ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হিসাবে ভারতকে গড়ে তোলার কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। শ্রমিক সহ সাধারণ পশ্চাদপদ জনগণ ‘হিন্দু রাষ্ট্রের’ বক্তব্যে অনেকাংশে বিভ্রান্ত হয়ে প্রভাবিত হচ্ছেন। এদের প্রকৃত বিপজ্জনক স্বরূপ শ্রমজীবী মানুষের সামনে তুলে ধরতে না পারলে, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের সংবিধানকে পালটে, গণতন্ত্র ধ্বংস করে স্বৈরাচারী হিন্দু রাষ্ট্র গঠন করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে দেশের ঐক্য বিনষ্টকারী এই শক্তি। তাদের বক্তব্য হলো অহিন্দু জনগণকে ভারত থেকে চলে যেতে হবে। যদি তারা এ দেশে থাকতে চায়, তাহলে তাদের হিন্দুদের কাছে বশ্যতা মেনে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবে থাকতে হবে। উল্লেখ্য, এদের কাছে হিন্দু মানে শুধু উচ্চ বর্ণের মানুষ আর আদানি-আম্বানিদের মতো ধনী হিন্দু, বাকি দলিত হিন্দু আর গরিব মানুষদের ওদের পায়ের তলায় থাকতে হবে। হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তির তাত্ত্বিক মুখপাত্ররা বহুদিন আগেই বলেছে যে তাদের প্রধান শত্রু মুসলিম, খ্রিস্টান, সংখ্যালঘু ও কমিউনিস্টরা। এই দৃষ্টিভঙ্গী নিয়েই তারা সংখ্যালঘু ও কমিউনিস্টদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।
নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রের আরএসএস-বিজেপি সরকার হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে। আরএসএস’র ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানাবার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যেই মোদিজী ও তার সহযোগীদের অগ্রসর হওয়ার প্রয়াস চলছে। এই হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি হিন্দুত্ববাদী মতবাদের দ্বারা সংবিধান বানাতে ও দেশে তার প্রয়োগ ঘটাতে সচেষ্ট। এই অশুভ শক্তিই ঐতিহ্যমণ্ডিত বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে, তার উপরেই রাম মন্দির তৈরী করে ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে হিন্দু রাষ্ট্রের পরিকাঠামো গড়ে তুলছে। একইভাবে কুম্ভ মেলায় লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটানোর কাজ সংগঠিত করে প্রকৃতপক্ষে হিন্দুত্বের শক্তির পুনরুত্থান ঘটাতে চেয়েছে। প্রতিনিয়ত সংবাদ মাধ্যম, শিল্প সংস্কৃতির মাধ্যমে ধর্মের নামে কুসংস্কার, অতিপ্রাকৃত বহু বিষয় প্রচার চালিয়ে জনমনে কু-সংস্কার সৃষ্টি করে চলেছে। বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক সমাজ থেকে জনগণকে বের করে পশ্চাৎপদ মধ্যযুগীয় সমাজে ঠেলে দিতে চেষ্টা চালাচ্ছে মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের ও বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির সরকারগুলি।
এটা সকলের জানা আছে যে, ভারত কেবলমাত্র হিন্দু ধর্মালম্বীদের দেশ নয়, কোনদিন ছিল না। ‘নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান’; বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য, এটাই ভারত। প্রাক স্বাধীনতাকালীন সময়ে ব্রিটিশের অনুপ্রেরণায় মুসলিম ও হিন্দু উভয়ের মৌলবাদী শক্তিই পাকিস্তান ও হিন্দুস্তান বিভেদ সৃষ্টি করে ভারতকে বিভাজিত করতে অপচেষ্টা চালিয়েছিল। বহু দাঙ্গা হাঙ্গামা হয়। পরিণামে ভারত ও পাকিস্তান হিসাবে দেশ বিভাজিত হয়। ঐ সময়ে একদিকে মুসলিম লিগ, আরএসএস, হিন্দু মহাসভা বিভাজনের জন্য জোর তৎপরতা চালিয়েছিল। ভারত স্বাধীনতা লাভ করে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসাবে গড়ে ওঠে। হিন্দু সাম্প্রদায়িক আরএসএস-বিজেপি ভারতকে আজও তাদের লক্ষ্য হিন্দু রাষ্ট্র বানাবার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল আরএসএস-বিজেপি ও কর্পোরেট সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে মিতালি করে জনবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের প্রতিরোধ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
গণপ্রতিরোধ গড়ে তোল
আরএসএস দ্বারা পরিচালিত মোদি নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের কর্পোরেট পুঁজি পোষিত উদারনীতিবাদী নীতি ও কার্যধারা প্রতিরোধ করে দেশকে জনস্বার্থবাহী ও উন্নয়নমুখী করতে এবং দেশের ধর্মনিরপেক্ষ নীতি ও আদর্শ উঁচুতে তুলে ধরে অগ্রসর হতে হবে দেশের শ্রমজীবী মানুষকে।
কর্পোরেট পুঁজির স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী মোদিজী চালু শ্রম আইনগুলি বাতিল করে অনৈতিক ‘শ্রমকোড’শ্রমজীবী মানুষের উপর চাপাতে চেষ্টা চালাচ্ছে। দেশের মূল্যবান লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্রকে বেসরকারিকরণ করছে। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে মোদি এবং এ রাজ্যের মমতা ব্যানার্জীর সরকারের কর্পোরেট তোষন নীতির জন্যই। সরকারি মন্ত্রী, আমলা, নেতা নেত্রীদের আকাশছোঁয়া দুর্নীতি সহ সমস্ত অনৈতিক কার্যধারা রোধ করতে ধর্মঘট সংগ্রাম গড়ে তুলে অগ্রসর হতে হবে। ব্যাপক গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ২০ এপ্রিল ব্রিগেড ময়দানে সুবিশাল সমাবেশে যোগদান করে সংগ্রামের ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে হবে এবং ২০ মে সর্বভারতীয় সাধারণ ধর্মঘট সফল করে তুলতে হবে। দেশ, দেশের সম্পদ রক্ষা করতে হলে ধর্মঘট, সংগ্রাম, ক্ষেত্রভিত্তিক আন্দোলনে সমাজের সকল অংশের মেহনতি গণতান্ত্রিক মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, গড়ে তুলতে হবে ঐক্যবদ্ধ দুর্বার ও লাগাতার আন্দোলনের তরঙ্গমালা। গণসংগ্রাম, গণপ্রতিরোধের কোনও বিকল্প নেই।
Comments :0