TMC-BJP SETTING

সন্দেশখালি থেকে বাংলাদেশ: বিভাজনের দুই শক্তির সেটিং বছরভর

রাজ্য

প্রতীম দে

বাইনারি। তুই না মুই। তৃণমূল না বিজেপি। দুই দলের সূক্ষ্ম সেটিং ফের দেখলো রাজ্যের মানুষ। 
এ বছর শুরুটা হয়েছিল সন্দেশখালি দিয়ে। ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতি মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারি সংস্থা ইডি হানা দিল তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়ি। হামলা হলো ইডি’র ওপর। পলাতক হলেন শাহজাহান। তারপর তার এবং তার সঙ্গীদের বিভিন্ন অত্যাচারের কথা সামনে আসতে শুরু করলো। অভিযোগ উঠলো নারী নির্যাতন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। জমি দখল, ভেরি দখলেরও। সকারের সামাজিক সুরক্ষার বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য কাটমানি দিতে হতো শাহজাহানদের। 
গ্রামের মানুষ যখন প্রতিবাদে নেমেছে তখন গ্রামবাসীদের মধ্যে ভেদাভেদ তৈরি করতে মাঠে নামলো বিজেপি। অস্ত্র একটাই, সাম্প্রদায়িক বিভাজন। শুভেন্দু অধিকারি, সুকান্ত মজুমদাররা বলতে শুরু করলো সংখ্যালঘুদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন হিন্দু মহিলারা। জনতার আন্দোলনকে বিভাজিত করার ছক। তবে শেখ শাহজাহান ধরা পড়ল। রাজ্য পুলিশ গ্রেপ্তার করলো। কিন্তু রেশন দুর্নীতি থেকে বেআইনি ভাবে জমি দখলের যে অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে তা নিয়ে এখনও কোন চার্জ গঠন করতে পারলো না কেন্দ্রীয় তদন্তকারি সংস্থা। 
লোকসভা নির্বাচনের সময় দুই দলের বোঝা পড়া আরও স্পষ্ট হতে শুরু করলো। বিরোধীদের ইন্ডিয়া ঐক্য ভাঙার জন্য তৃণমূলকে যে বিজেপি ব্যবহার করবে এটা জানাই ছিল। কোন আলোচনা ছাড়াই মমতা ব্যানার্জি বৈঠকে বলেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী করা হোক। কিন্তু তার সেই যুক্তি ধোপে টেকেনি। আসলে বিজেপি বিরোধী মঞ্চের ভেতরে সংশয় তৈরির খেলা।
বামপন্থীরা যখন ‘হক রুটি রুজি’ স্লোগানকে সামনে রেখে নির্বাচনে লড়ছে তখন ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র। 
টাকার দাবিতে সরব হলেন মমতা। পাল্টা বিজেপি বললো ১০০ দিনের টাকা এবং আবাস যোজনার টাকা লুঠ হয়েছে রাজ্যে। কিন্তু দুই সরকারের কেউ কোন শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে পারলো না। 
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘সাহস থাকলে দুই সরকার শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক যে কতো এলো আর কতো খেলো।’ কিন্তু তার কোন হিসাব আজও পাওয়া যায়নি। ফলাফল হলো এই যে মানুষের কাছে তৃণমূল প্রচার করলো তারা লোকসভায় বাংলার দাবি নিয়ে সরব হবে। কিন্তু রাজ্যের তৃণমূল সাংসদরা মাত্র একবার মুখ খুলেছিলেন রাজ্যের বকেয়া নিয়ে। 
২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় সিপিআই(এম)’এর ‘গ্রাম জাগাও চোর তাড়াও’, ‘নজরে পঞ্চায়েতের’ মাধ্যমে যখন পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূল এবং বিজেপি দুই দলের দুর্নীতি এবং সেটিং সামনে আসতে শুরু করলো, তখন লোকসভা ভোটের আগে ফের নতুন করে বাইনারি তৈরি করা শুরু হলো। 
২০২২ সালে পার্থ চ্যাটার্জির গ্রেপ্তারিতে বেআব্রু হয়ে গিয়েছিল সরকারি মদতে শিক্ষা দপ্তরে দুর্নীতি। চলতি বছর বেআব্রু হয়ে গিয়েছে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতি। আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ঘটনা সামনে এনেছে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা থ্রেট কালচার। সিবিআই তদন্ত শুরু হয়েছে চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ঘটনা এবং আর জি কর হাসপাতালে দুর্নীতি মামলার। উল্লেখ্য এই ঘটনায় প্রথম থেকে যার নাম জড়িয়েছে সেই সন্দীপ ঘোষকে বার বার আড়াল করার চেষ্টা করেছে রাজ্য সরকার। আর জি কর থেকে তাকে সড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের পদে। 
সিবিআই দুটি মামলাতেই গ্রেপ্তার করে সন্দীপ ঘোষকে। কিন্তু তথ্য প্রমাণের অভাবে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় জামিন পেয়েছেন সন্দীপ ঘোষ। 
৯ আগস্ট যখন আর জি কর হাসপাতালের মর্গ থেকে দেহ ময়না তদন্তের নাম করে পাচারের পরিকল্পনা করছিল পুলিশ সেই সময় শববাহী শকট আটকান ছাত্র যুবরা। সাথে ছিলেন সিনিয়র চিকিৎসকরাও। সেদিনের সেই ঘটনার পর রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে যখন মানুষের ক্ষোভ তীব্র হয়ে ওঠে তখন মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় কলতান দাশগুপ্তকে। লালবাজারে ডেকে জেরা করা হয় মীনাক্ষী মুখার্জি, সুবর্ণ গোস্বামীদের।
কলকাতা পুলিশ খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় ধৃত সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে একমাত্র অভিযুক্ত বলে দাবি করে। ওই একই রিপোর্ট কার্যত জমা দিয়েছে সিবিআই। তারাও বলছে একমাত্র অভিযুক্ত সঞ্জয়। কিন্তু নিহত চিকিৎসকের পরিবার এবং চিকিৎসকরা এই দাবি মানতে নারাজ।
রাজ্যের মানুষ যখনই আর জি কর, ১০০ দিনের দুর্নীতি নিয়ে দুই শাসক দলের আঁতাত টের পাচ্ছে তখনই ভাগ করা হচ্ছে মানুষে মানুষে ধর্মের নামে। এখন যেমন দুই মানুষকে বাংলাদেশের জুজু দেখিয়ে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘুতে ভাগ করছে। আর ঢাকা পড়ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান এবং কর্মসংস্থানের দাবিতে লড়াই।

Comments :0

Login to leave a comment