Gangasagar Mela 2023

‘বড় হিন্দু’ প্রমাণে সাগর মেলাকে হাতিয়ার করে ঝাঁপাচ্ছেন মমতা

রাজ্য

হিন্দুত্বে তিনিও পিছিয়ে নেই বোঝাতে সাগর মেলাকে হাতিয়ার করছেন মমতা ব্যানার্জি। প্রধানমন্ত্রীর রামমন্দির উদ্বোধনের কয়েকদিন আগেই সাগর মেলা। সেই সুযোগে নিজেকেও হিন্দুপ্রাণ প্রমাণ করতে সরকারের টাকায় সাগরে অনেকগুলি ধর্মীয় প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার সাগর মেলাকে ‘সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসাবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি চাইবে রাজ্য সরকার। তার প্রস্তুতির জন্য ২০ লক্ষ ৬ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছেন মমতা ব্যানার্জি।
তবে এখানেই শেষ নয়। রাজ্যের অর্থ দপ্তরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এবারের সাগর মেলার জন্য ইতিমধ্যেই ১৪৯টি টেন্ডার দিয়েছে রাজ্য সরকার। যা সাগর মেলা আয়োজনের ইতিহাসে নজিরবিহীন। আগামী কয়েকদিনে সেই সংখ্যা আরও বাড়বে। এখনও প্রায় একমাস বাকি আছে মেলা শুরুর। কত টাকা খরচ হবে এবার সাগর মেলার জন্য? রাজ্যের অর্থ দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘রাজ্যের পর্যটন দপ্তর, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর, রাজ্য পুলিশ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন, পূর্ত দপ্তর সহ সরকারের অনেকগুলি বিভাগের টাকা খরচ হবে। টাকার অঙ্ক বিশাল সন্দেহ নেই।’’ 
এই টাকার একটি বড় অংশ সাগর মেলাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় প্রচারের কাজে খরচ হবে। যেমন এবার সাগর মেলায় তিনটি বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। প্রথমত, ‘সংকীর্তন এবং প্রবচন।’ দক্ষিণ ২৪পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারের উদ্যোগে মেলায় এবার ধর্মীয় সংকীর্তনের আয়োজন করা হচ্ছে। আয়োজন করা হচ্ছে ‘প্রবচন’-রও। প্রবচন কী? এই বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত জেলা শাসক (জেনারেল) অনীশ দাশগুপ্তর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বুধবার বলেন, ‘‘আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না। যা বলার ডিএম সাহেব বললেন।’’ ‘ডিএম সাহেব’ অর্থাৎ জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা ফোন ধরেননি। তাঁকে মেসেজ করা হলে জবাব দেননি। সাগরের বিধায়ক, রাজ্যের সুন্দরবন উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা জানিয়েছেন, ‘‘আমার এই প্রসঙ্গে কিছু বলার নেই।’’ কিন্তু সরকারি নথি জানাচ্ছে, সংকীর্তন এবং প্রবচনের জন্য সরকারের বরাদ্দ ১৬ লক্ষ টাকা। 
দ্বিতীয়ত, ‘সতীপ্রভা।’ মূলত হিন্দু ধর্মের দেবীদের মাহাত্ম্য প্রচারই হবে এই কর্মসূচির লক্ষ্য। তৃতীয়ত, ‘বাংলার সতীপীঠ-একটি আধ্যাত্মিক যাত্রা।’ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই ক্ষেত্রে মূলত দক্ষযজ্ঞের বর্ণনায় পার্বতীর বিভিন্ন অঙ্গ যেখানে যেখানে ছড়িয়ে পড়েছিল বলে হিন্দু ধর্মের বইগুলিতে কথিত আছে, সেই তীর্থস্থানগুলিকে নিয়ে একটি প্রদর্শনী। মমতা ব্যানার্জির পরিকল্পনা দেখে বোঝা যাচ্ছে, মূলত পুরুষ দেবতার বিপরীতে তিনি নারী দেবতাদের আশ্রয় করতে চাইছেন।
এছাড়া খিদিরপুর থেকে সাগরদ্বীপ পর্যন্ত অনেক গেট হবে। যেখানে মমতা ব্যানার্জির ছবি এবং তাঁর ‘অবদান’ তুলে ধরার পরিকল্পনা আছে। যার মধ্যে রাজ্যের পর্যটন দপ্তরের দায়িত্ব পড়েছে খিদিরপুর থেকে ডায়মন্ডহারবার পর্যন্ত ৩৫টি এমন গেট কিংবা তোরণ বানানোর। সাগর, নামখানার তিনটি জায়গাকে সাজানোর জন্য সরকার এবার খরচ করবে ১৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকাকে নানাভাবে সাজিয়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
আগামী ১২জানুয়ারি থেকে সাগর মেলা শুরু। চলবে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিবছরই এই মেলা হয়। কপিল মুনির আশ্রমকে কেন্দ্র করে এই মেলা হয়। এবার এই মেলার পাঁচদিন পরে অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই মন্দির উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে দেশে ‘হিন্দু জাগরণ’ তৈরি করতে আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মত সংগঠনগুলি নানা কর্মসূচি নিয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৮-র ২৬ ডিসেম্বর সাগরে কপিল মুনির আশ্রমের প্রধান জ্ঞানদাস মোহন্ত মমতা ব্যানার্জির উপস্থিতিতেই বলেছিলেন, ‘‘দিদি প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের মঙ্গল হবে। রামমন্দির নির্মাণও হবে। দেশের সাধু সন্তরা রামমন্দির চান। বিজেপি ভোটের আগে রামমন্দিরের প্রতিশ্রুতি দেয়, তারপর ভুলে যায়।’’
রামমন্দির ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়েছে। মমতা ব্যানার্জি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। তবে দীঘায় পুরীর ধাঁচে জগন্নাথ মন্দির বানানো হচ্ছে সরকারি টাকায়। সম্প্রতি বারাণসীর ধাঁচে কলকাতায়, প্রিন্সেপ ঘাটের কাছে গঙ্গা আরতিরও উদ্যোগ নিয়েছে তৃণমূলের সরকার। এবার মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনায় সাগর মেলা।

 

Comments :0

Login to leave a comment