মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাজেট অধিবেশন। তার আগে সোমবার সর্বদল বৈঠকে অধিবেশনে ঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে গেছে সরকার পক্ষ।
এদিন সিপিআই (এম), ডিএমকে, আরজেডি, আপ, শিবসেনার উদ্ধব থ্যাকারে অংশ প্রভৃতি দলের পক্ষ থেকে আদানিকাণ্ড নিয়ে আলোচনার দাবি জানানো হয়েছে। সিপিআই (এম)’র লোকসভার নেতা এলামারাম করিম বৈঠকে স্পষ্ট করে চারটি বিষয়ে আলোচনা করার দাবি জানিয়েছেন। আদানিকাণ্ড ছাড়াও, বিবিসি’র তথ্যচিত্র, মূল্যবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন রাজ্যে রাজ্যপালের মারফত কেন্দ্র রাজ্যগুলির সঙ্গে যে সঙ্ঘাত শুরু করেছে সেই বিষয়ে। রাজ্যপালের বিষয় তুলেছে একাধিক রাজনৈতিক দল। তৃণমূল কংগ্রেস বলেছে বিরোধীদের যাতে আলোচনার সুযোগ দেওয়া হয়।
বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে জাতভিত্তিক জনগণনা সংক্রান্ত আলোচনার দাবি জানানো হয়েছে। এরমধ্যেই ওয়াইএসআর কংগ্রেসের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে জাতভিত্তিক অর্থনৈতিক সমীক্ষার। ভারত জোড়ো যাত্রার জন্য প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের কোনও নেতা উপস্থিত ছিলেন না বৈঠকে।
বাজেট অধিবেশনের শুরুতেই মঙ্গলবার যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। ফেব্রুয়ারির পয়লায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বাজেট পেশ করবেন। আগামী বছর লোকসভা ভোটের আগে এটাই শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। ফলে সেদিকেও সকলের নজর থাকবে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের পরে মঙ্গলবারই অর্থনৈতিক সমীক্ষা প্রকাশিত হবে। সরকারের ৩৬টি বিল আনার পরিকল্পনা আছে। দুই দফায় ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ২৭দিন বসবে সংসদের অধিবেশন। প্রথম দফায় ১৪ ফেব্রুয়ারি অধিবেশন শেষ হবে। এক মাসের বিরতির পরে আবার ১২ মার্চ থেকে বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে।
এদিনের বৈঠক শেষে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী বলেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং সহ ৩৭ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। ২৭টি দল থেকে তাঁরা ছিলেন বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। সরকার পক্ষ সর্বদল বৈঠকে জানিয়েছে সব বিষয়েই আলোচনার জন্য প্রস্তুত সরকার। কিন্তু সেটা সংসদের ‘রুল’ অনুযায়ী। যোশী বলেছেন, অধিবেশন সুষ্ঠুভাবে চালাতে আমরা বিরোধীদের থেকে সহযোগিতা চেয়েছি। মন্ত্রী জানিয়েছেন, কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠক হবে।
সর্বদল বৈঠকের পরে আরজেডি নেতা মনোজ ঝা এবং আপের সঞ্জয় সিং বলেন, রাষ্ট্রয়ত্ত সংস্থা এলআইসি বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে আদানির সংস্থাগুলিতে। সেই লক্ষ কোটি টাকা ডুবতে বসেছে। কোটি কোটি মানুষ এলআইসি’র বিভিন্ন প্রকল্পে তাদের অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। মনোজ ঝা বলেন, অথচ এই নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। এই বিষয়টি অবশ্যই সংসদে আলোচনা করতে হবে।
সিপিআই (এম) সাংসদ এলামারাম করিমও বলেছেন, আদানিকাণ্ড নিয়ে সংসদের বাজেট অধিবেশনে আলোচনা করতেই হবে। এর পাশাপাশি তিনি বিবিসি তথ্যচিত্র নিয়েও আলোচনা চেয়েছেন। আরও অনেকগুলি বিরোধী দলের পক্ষ থেকেও আলোচনার দাবি জানানো হয়েছে বিবিসি’র তথ্যচিত্র নিয়ে।
এর পাশাপাশি করিম দাবি জানিয়েছেন, সংসদে যাতে মানুষের সমস্যার বিষয়গুলি গুরুত্ব দিয়ে আলোচিত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। উল্লেখ্য, প্রতিটি অধিবেশনেই বেশ কিছু দল সরকারকে সুবিধা করে দিতে অধিবেশন ভেস্তে দেওয়ার কাজ করে। সরকারের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতেই এই কাজ তারা করে। আরজেডি, জেডি(ইউ), সমাজবাদী পার্টি যখন জাতভিত্তিক জনগণনার দাবি জানাচ্ছে, তখন অর্থনৈতিক অবস্থার দাবি তুলে সেই চেষ্টাকেই বানচাল করতে চাইছে ওয়াইএসআর কংগ্রেস, এমনও আশঙ্কা করছেন অনেকেই। দুর্নীতির বহু অভিযোগের তদন্তের আওতায় থাকা জগনমোহন রেড্ডি সবসময়ই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের পাশে দাঁড়ান বলে অভিযোগ।
বিবিসি তথ্যচিত্র নিয়ে আলোচনার দাবি উঠবে বলে বিজেপি’র অনুমান ছিলই। বিজেপি সূত্রে জানা গেছে, সেই নিয়ে দলের অতটা চাপ ছিল না। তাদের মতে, লোকসভা ভোটের আগে গুজরাটে সংখ্যালঘু গণহত্যায় মোদীর ভূমিকা নিয়ে যত আলোচনা হবে, ততই তাদের মেরুকরণে লাভ হবে। কিন্তু অধিবেশন শুরুর মুখে দল বেকায়দায় পড়েছে আদানিকাণ্ড নিয়ে। এটা সরাসরি মানুষের সঞ্চয়ের প্রশ্নের সঙ্গে যুক্ত। যে কারণে আদানি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভুয়ো বলার পাশাপাশি একে দেশের সম্মান এবং জাতীয়তাবাদের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন। যেভাবে গত ৯ বছরে প্রতিটি বিষয়ে জাতীয়তাবাদকে ঢাল বানিয়েছেন মোদী, সেই পন্থাই নিয়েছেন আদানি। তবুও সরকার এর থেকে পুরোপুরি দায় ঝেড়ে ফেলতে পারবে না বলেই মনে করছে বিজেপি। কিভাবে তা সংসদে মোকাবিলা হবে এখন সেই কৌশল স্থির করছে সরকার পক্ষ।
Comments :0