ইচ্ছে — নতুনপাতা, বর্ষ ৩
বিয়োগের খাতা
মনীষ দেব
পান্তাবুড়ির গল্প, নোটন নোটন পায়রাগুলি, পাখী সব করে রব — সব ছিল শৈশবের পাঠ ও পাঠশালার সাঁকো, সাঁকো পেরিয়ে পাঠশালা। সাঁকো — এক জোড়া কাঁচাবাঁশের সাঁকো ক্রমশ ধূসর মলিন হতে হতে কালের নিয়মে জীর্ণ হয়ে যেত। সেই সাঁকো কখনও অতীত হয়নি জীবনের পাঠে।
শীত-বর্ষার সাঁকো গ্রীষ্মে পড়ে থাকত একা শুকনো খালের ওপারে পৌঁছে যাওয়া এক ছুট্টে। বর্ষায় সাঁকো ছুঁয়ে যেত জল। শীতের কলমিলতায় ঢাকা পড়ে যেত খাল। হলুদ সরষে খেতের শেষ সীমানায় পাঠশালা — একদিন ছিল খড়ের চালার মটির পাঠশালা ছাগলছানারা খেলত। তারপর টালির চালার বেড়ার পাঠশালা। বদলে যাওয়া চারপাশ ইটের দেওয়ালে টিনের চলার ইস্কুল। এলো দিন — ঢালাই ছাদের ইস্কুল একতলা-দোতলা এবং ধূসর ধুতি মলিন শাড়ীতে উজ্জ্বল শিক্ষক-শিক্ষিকারা তারপর উজ্জ্বল পোশাকের সব ধূসর স্যার-ম্যাডাম এবং দিনবদলের স্লোগান — বদলে যাওয়া দিন। এখন অযোগ্যের মেলা, নেই পাঠ, নেই পাঠশালা! চুরি হয়ে গেছে পড়াশোনা পাঠ ও পাঠশালা! পড়ে আছে স্মৃতির পাঠশালা এবং পাঠ ও সেই সাঁকোটা — নেই কিছুই আর! পড়ে আছে বিয়োগের খাতা।
Comments :0