ভাষা নিয়ে সংঘাতের মধ্যে বাজেট বই থেকে ‘রুপি’ সরিয়ে দিল তামিলনাড়ু সরকার। রুপির জায়গা নিয়েছে তামিল অক্ষর ‘রু’। আর এই বদল নিজের এক্সহ্যান্ডেল থেকে পোস্ট করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন। শাসক দল ডিএমকের যুক্তি তামিল ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্ত।
নয়া জাতীয় শিক্ষা নীতির মাধ্যমে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার, এমন অভিযোগ সামনে এনে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন স্টালিন। তিনি স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন কোন ভাবে তিন ভাষা নীতি তার সরকার মেনে নেবে না। আর এই আবহে রুপি চিহ্ন যা আদতে একটি হিন্দি অক্ষর তা বাজেট বই থেকে দেওয়া নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু করেছে।
শাসক দলের এই সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করেছে বিরোধী বিজেপি। তাদের যুক্তি নিজেদের ব্যার্থতা ঢাকতে এই ধরনের কাজ করছে স্টালিন প্রশাসন। সংসদেও এই ভাষা যুদ্ধের আঁচ পাওয়া গিয়েছে।
২০২০ সালে সংসদে কোনও আলোচনা ছাড়াই নয়া শিক্ষা নীতি পাশ করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। জাতীয় শিক্ষানীতির ১৩ নম্বর পাতার ৪.১১ পয়েন্টে বলা হয়েছে, পঞ্চম শ্রেণি বা খুব বেশি হলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত একজন পড়ুয়া নিজের মাতৃভাষা বা স্থানীয় ভাষায় নির্দেশনার মাধ্যমে পড়তে পারবেন। তারপর?
না। মাতৃ ভাষা বা স্থানীয় ভাষায় নির্দেশনার মাধ্যমে পড়ার কোনও সুযোগ থাকবে না। অষ্টম শ্রেণির পর মাতৃ ভাষা শুধুমাত্র একটি ‘ভাষা’ হিসাবে সে পড়তে পারবে, তাও যদি তা সম্ভব হয় তবেই।
আপাতবিচারে মনে হবে জাতীয় শিক্ষা নীতিতে সব ভাষাকে সমান মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আসল খেলা রয়েছে তিন ভাষা সূত্র (‘Three Language Formula’)’ তে লুকিয়ে। কী বলছে এই ফর্মুলা?
বলা হয়েছে একজন পড়ুয়া তৃতীয় ভাষা হিসাবে ভারতের যে কোনও ভাষাকে বেছে নিতে পারে, এমনকি সে বিদেশি ভাষাও বাছতে পারে। মানে ধরা যাক, বাংলা, ইংরেজি যদি যথাক্রমে প্রথম এবং দ্বিতীয় ভাষা হয় তবে তৃতীয় ভাষা হিসাবে সে তামিল নিতে পারে বা বিদেশি কিছু নিতে পারে। কিন্তু বাস্তবে সে নিতে পারবে না।
কেন?
কারণ সব শ্রেণিতে সংস্কৃত বাধ্যতামূলকও করা হয়েছে। প্রাচীন ভারতে যে ভাষায় প্রান্তিক, অন্ত্যেজীবী অংশের কোনও অধিকার দেয়নি বর্ণ বিভাজন। বিজেপি আরএসএস’র কাছে জনিশক্ষার প্রসারের থেকে অনেক জরুরি ‘দেবভাষার’ প্রসার।
ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে এই জাল তৈরি করেছে বিজেপি। শিক্ষা নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ষষ্ঠ এবং অষ্টম শ্রেণিতে ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ নামে একটি প্রোজেক্ট করতে হবে পড়ুয়াদের। এই প্রজেক্টে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার সাথে সংস্কৃত এবং অন্যান্য ধ্রুপদি ভাষার সঙ্গে যোগসূত্রের উল্লেখ করতে হবে।
শিক্ষানীতির ৪.১৮ নম্বর ধারায় উল্লেখ রয়েছে, সব শ্রেণির জন্য সংস্কৃত বাধ্যতামূলক। ‘Three Language Formula’ র মাধ্যমে সংস্কৃতকে বাধ্যতামূলক করা হবে। তাহলে তামিল পড়তে ইচ্ছা হলে কেউ পড়তে পারবে না। বিদেশি কোনও ভাষা শিখতে চাইলে কেউ পড়তে পারবে না। বাকি যেই ভাষাগুলি পড়ার কথা বলা হচ্ছে সেগুলি কুমিড় ছানা দেখানোর মতো।
Tamil Nadu
ভাষা বিতর্কের মাঝেই বাজেট থেকে উড়ে গেলো ‘রুপি’

×
Comments :0